হাটহাজারীতে প্রথম রক মেলনের চাষ করে তাক লাগালো শাহেদ

বিশেষ প্রতিবেদন:
কিশোর বয়স থেকেই এম এইচ শাহেদ নানা কৃষিপণ্য উৎপাদনে আগ্রহী। পড়াশোনা শেষে কৃষি ছাড়েননি। দুই দশক ধরে শাকসবজি চাষ করে পেয়েছেন সাফল্য। এবার বিদেশি ফল রকমেলন ফল চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এম এইচ শাহেদ। শুরুটা শংকার হলেও খেতে ভিনদেশী ফলের উপস্থিতি শাহেদের মুখে হাঁসি ফুটিয়েছে। তাঁর পরামর্শে কৃষিতে সফলতার দেখা পাচ্ছেন আরও অনেকে।

হাটহাজারী উপজেলা মির্জাপুর গ্রামের এম এইচ শাহেদ এর জন্ম। লেখা পড়ার পাট চুকিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজের সাথে জড়িত। শখের বসে নানা ফসল চাষ করতে এম এইচ শাহেদের বেশ ভালো লাগে। হাটহাজারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে রকমেলন তথা মরুর দেশের জনপ্রিয় ফল মরুর তরমুজ খ্যাত সাম্মাম এর চাষাবাদ শুরু করেন। এর মাধ্যেমে হাটহাজারীতে প্রথম বারের মতো রকমেলনের বানিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয়।

এম এইচ শাহেদ নানা ধরনের ফসল ও সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তিনি লালশাক, পুঁইশাক, করলা, চিচিঙ্গা, ঢ্যাঁড়সসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেন। সব খরচ বাদ দিয়ে তিনি কৃষিকাজ করে বছরে বেশ কয়েক লাখ টাকা আয় করছেন।

এ বছর ছয় শতক জমিতে রকমেলন (সাম্মাম) চাষ করেছেন এম এইচ শাহেদ। তাঁর সাফল্যে অনুপ্রাণিত হচ্ছে এলাকার কৃষকেরা তারাও সাম্মামের চাষ করতে আগ্রহী।এ লক্ষে এম এইচ শাহেদের একাধিক কৃষক যোগাযোগ করেছেন ।

হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের এম এইচ শাহেদের খেতে সাম্মাম পাকার পর তা বিক্রির করার জন্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখন পযন্ত ১০০ টি সাম্মাম সংগ্রহ করা হয়েছে।

গতকাল সকালেহাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের যুবক এম এইচ শাহেদের খেতে গিয়ে দেখা যায়, সাম্মাম পাকা শুরু করেছে।এম এইচ শাহেদ ও কয়েকজন কৃষক পাকা রকমেলন কাটছেন।

এম এইচ শাহেদ বলেন, গতকাল সকালে আমি খেতের পাকা রকমেলন কাটা শুরু করেছি। ১০০ টি কাটা হয়েছে। এগুলো প্রতি কেজি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করা যাবে বলে তিনি জানান। এক সপ্তাহের মধ্যে খেতে সব রকমেলন কাটা শেষ হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এম এইচ শাহেদ একজন পরিশ্রমী যুবক। তিনি যে কাজ শুরু করেন, সেটা নিয়ে লেগে থাকেন। তরমুজ চাষে সফলতার পর তিনি রকমেলন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তাঁর খেতে রকমেলনের ভালো ফলন হয়েছে। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এ ফল চাষে কৃষি বিভাগ তাঁকে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দিয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বর্ষব্যাপী ফল উৎপাদন ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মেহেদি মাসুদ গণমাধ্যমকে জানান, কৃষিকাজের দিকে আগ্রহ বাড়ছে উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের। প্রচলিত ধারার বাইরে এসে তারা নানা ধরণের কৃষিপণ্য চাষে আগ্রহী হচ্ছে। আর এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বিদেশি ফল। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, দেশে যে সময়টাতে দেশি ফলের সরবরাহ কম থাকে সেই সময়টাতে যাতে পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় তার জন্য বিদেশি ফল চাষের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে এক সময় বছরজুড়ে কোনো না কোনো ফল পাওয়া যেত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন আর সেসব ফলের দেখা মেলে না। ‘মধুমাস’ খ্যাত জ্যৈষ্ঠ মাসে নির্দিষ্ট কিছু ফল আম, কাঁঠাল আর লিচুর দেখা মিললেও দেশের মানুষকে বছরের বাকিটা সময় নির্ভর করতে হয় বিদেশি ফলের ওপর।

রকমেলন হলো এক ধরনের তরমুজ। মূলত সাউথ আফ্রিকান একটি ফল। তবে সম্প্রতি এটি বাংলাদেশেও চাষ হচ্ছে। দেশের আবহাওয়ায় বেশ ভালোভাবেই এটি চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। দেশের প্রায় সব জেলাতেই এটির উৎপাদন করা সম্ভব। তবে যেসব এলাকাতে বৃষ্টি কিছুটা কম হয় সেখানে এর ফলন বেশি হয়। একবার বপনের পর তিন থেকে চার বার ফলন তোলা সম্ভব। এটি চাষাবাদে খুব বেশি খরচও হয় না। তবে বাজারে এর চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এর বাণিজ্যিক চাষাবাদ ব্যপকভাবে সম্প্রসারণ করা গেলে পুষ্টির চাহিদা তো পূরণ হবেই, আমদানি কমিয়ে বাঁচানো যাবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও।