ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, কংগ্রেস, সুপ্রিম কোর্টে বলসোনারো সমর্থকদের তাণ্ডব

২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে যে নৈরাজ্য দেখেছিল বিশ্ব, তারই পুনর্মঞ্চায়ন হলো ব্রাজিলে। লুলা দা সিলভা নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের ১০ দিন পার না হতেই রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটলো দেশটিতে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর কট্টর সমর্থকরা তাণ্ডব চালালো প্রেসিডেস্ট প্রাসাদ, কংগ্রেস আর সুপ্রিম কোর্টের মত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। গত অক্টোবরের নির্বাচনে বলসোনারোর হারের পর থেকেই উত্তেজনা বাড়ছিল ব্রাজিলে। তবে রোববার দেশটিতে জন্ম হয়েছে নজিরবিহীন এক সংকটের।

বিবিসি জানিয়েছে, দুই শতাধিক দাঙ্গাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে ব্রাজিলের পুলিশ। দেশটির বিচারমন্ত্রি ফ্লাভিও দিনো বলেন, রাজধানী ব্রাসিলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে যারা তাণ্ডব চালিয়েছে তাদেরকে ধরা হচ্ছে। বর্তমানে নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কংগ্রেস, সুপ্রিম কোর্ট এবং প্রেসিদেন্টের প্রাসাদ। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এখান থেকে বলসোনারো সমর্থকদের হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। এক সংবাদ সম্মেলনে দিনো বলেন, এটি সন্ত্রাসবাদ, এটি ক্যু। আমরা নিশ্চিত, দেশের বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী এই অন্ধকার চায় না।

তিনি ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীরও সমালোচনা করেন। তারা সক্রিয় থাকলে রোববারের এই কেলেঙ্কারি হতো না বলেও দাবি মন্ত্রীর।
এর আগে ব্রাজিলের পতাকার রঙে হলুদ-সবুজ পোশাক পরিহিত হাজার হাজার বলসোনারো সমর্থক রাজধানীতে এই লঙ্কাকাণ্ডে অংশ নেয়। টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা বানের পানির মত সুপ্রিম কোর্ট ও কংগ্রেস ভবনে প্রবেশ করছে, স্লোগান দিচ্ছে, আসবাবপত্র ভাঙছে। অন্তত তিন হাজার মানুষ এই বিশৃঙ্খলায় অংশ নেয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের ধারণা।

এই লঙ্কাকাণ্ডের পর প্রেসিডেন্ট লুলার অবস্থান নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়। তবে সিএনএন ব্রাজিল রিপোর্ট করেছে যে, লুলা ফেডারেল সুপ্রিম কোর্ট এলাকাতেই অর্থাৎ রাজধানী ব্রাসিলিয়াতেই আছেন। তার সঙ্গে আছেন দেশের শীর্ষ মন্ত্রীরা। তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সঙ্গে দেখা করেছেন।

গত ৩০ অক্টোবরের ওই ভোটে বামপন্থি লুলা দা সিলভার কাছে হেরে যান বোলসোনারো। ১৩ ডিসেম্বর ব্রাজিলের নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ লুলার জয় অনুমোদন দেয়ার দিনই বলসোনারো সমর্থকরা রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় পুলিশ সদরদপ্তর দখলে নেয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল। নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিংয়ে জালিয়াতির অভিযোগ করেছিলেন বোলসোনারো। তার সেই অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও সমর্থকদের সহিংস বিক্ষোভের ইন্ধন জুগিয়েছে।

এদিকে সমর্থকদের এমন হামলার নিন্দা জানিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো। তবে এ জন্য তিনি অন্তত ছয় ঘণ্টা সময় নিয়েছেন, ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এক টুইট পোস্টে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গণতন্ত্রের অংশ। তবে আজ সরকারি ভবনগুলোতে যে আগ্রাসন হয়েছে আমি তার নিন্দা জানাই। লুলা ক্ষমতা গ্রহণের দুই দিন আগেই ব্রাজিল ছেড়ে আসেন বলসোনারো। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় রয়েছেন।