কাপ্তাই উপজেলা নির্বাচন: আ’লীগ, যুবলীগ ও কৃষকলীগ মুখোমুখি

মোঃ নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই(রাঙামাটি)।
আগামী ২১ মে’ অনুষ্ঠিতব্য কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। গত ২ মে’ রাঙামাটি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা গণসংযোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। গত রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, নির্বাচনী এলাকা গুলোর বাজার, রাস্তাঘাট ও অলিতে গলিতে প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। চায়ের দোকান কিংবা পাড়ার অলি-গলিতে এখন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু শুধু নির্বাচন। কে হবে কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের পরবর্তী চেয়ারম্যান ও পুরুষ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান।
আলাপকালে কয়েকজন ভোটার জানায়, চেয়ারম্যান পদে সরকার দলীয় আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী, মোঃ নাছির উদ্দিন ও সু্ব্রত বিকাশ তনচংগ্যা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এদের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে। ভাইস চেয়ারম্যান পদে আব্দুল হাই খোকন ও সুইপ্রু মারমার মধ্যে এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফারহানা আহমেদ পপি এবং বিউটি হোসেনের মধ্যে দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের রাইখালী বাজারের বাসিন্দা সজল দে, ভালুকিয়ার অমিত তনচংগ্যা, লেমুছড়ি পাড়ার সুচিং মারমা, কেপিএম এলাকার মোঃ ইনসান, রাবেয়া খাতুন সহ কয়েকজন ভোটার বলেন, একজন সৎ, যোগ্য এবং সবসময় জনগনের পাশে থাকবেন, এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন এমন প্রার্থীকে আমরা বেছে নিব।
এদিকে, কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে “আনারস” প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সাবেক ছাত্র নেতা কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী
(বেবী) জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত। একবার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। আমি কখনও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হইনি। জনগণের পাশে ছিলাম এবং আগামীতেও থাকব ইনশাল্লাহ। আমি যদি জয়ী হতে পারি, তাহলে সরকারের চলমান উন্নয়নের ধারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি পর্যটন শিল্প, আইসিডি খাতের উন্নয়ন সহ একটি স্মার্ট, আধুনিক, মডেল উপজেলা হিসাবে কাপ্তাই উপজেলাকে গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে যাব।
“দোয়াত কলম” প্রতিক নিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সবসময় জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। করোনা মহামারী সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে, নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে সবসময় মানুষের পাশে থেকেছি। আশা করি জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করবেন। আমি যদি জয়ী হই, তাহলে কাপ্তাই উপজেলাকে একটি পর্যটন বান্ধব উপজেলা হিসাবে গড়ে তুলবো। পাশাপাশি প্রত্যেকটা পাড়ায় পাড়ায় সরকারের উন্নয়নকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিব।
“ঘোড়া” প্রতীক নিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে অংশ নেওয়া উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বিকাশ তনচংগ্যা বলেন, একবার আমি কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছি। ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা থাকার পরও আমি সে সময় উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ছুটে গিয়েছি, জনগণের উপকার করার চেষ্টা করেছি এবং সরকারের উন্নয়নের অংশীদার হয়েছি। বিগত বছর গুলোতে ক্ষমতায় না থাকলেও সবসময় আমি জনগণের পাশে থেকেছি। আশা করছি সর্বস্তরের জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করবেন। আমি যদি জয়যুক্ত হই, তাহলে কাপ্তাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নয়নের যে ধারা চলছে সেই ধারা অব্যাহত থাকবে।
ভাইস-চেয়ারম্যান পদে “টিউবওয়েল”
প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাই খোকন বলেন, আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। প্রচার প্রচারনায় যেখানে যাচ্ছি সেখানেই পাহাড়ি বাঙালি সর্বস্তরের জনগণ আমাকে সমর্থন দিচ্ছে। আমি যদি ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী হই, তাহলে একটি পরিচ্ছন্ন, মাদকমুক্ত, স্মার্ট কাপ্তাই উপজেলা গঠনে উপজেলা পরিষদকে সহায়তা করে যাবো।
“টিয়া পাখি” প্রতীক নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী কাপ্তাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সুইপ্রু মারমা বলেন, আমি একবার কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদে মেম্বারের দায়িত্ব পালন করেছি। সে সময় উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। তাই উন্নয়নের এই কর্মকান্ডকে উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে ছড়িয়ে দিতে আমি ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছি। প্রচার প্রচারনায় যেখানে যাচ্ছি যেখানে সকল শ্রেনীর মানুষের ভালো বাসা এবং প্রতিশ্রুতি পাচ্ছি। জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করবেন বলে আমার বিশ্বাস।
“ফুটবল” প্রতিক নিয়ে অংশ গ্রহনকারী কাপ্তাই মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কাপ্তাই উপজেলা শাখার মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ফারহানা আহমেদ পপি বলেন, আমি নির্বাচিত হলে তরুণ- তরুণীদের নিয়ে কাজ করবো, তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান সহ বেকারত্ব দূরীকরণে কাজ করবো। আমি যেখানে নির্বাচনি প্রচারনায় যাচ্ছি সেখানেই ভোটারদের প্রচুর সাড়া পাচ্ছি।
“কলস” প্রতীক নিয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রাঙামাটি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বিউটি হোসেনও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, প্রচার প্রচারনায় যেখানে যাচ্ছি সেখানেই জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত বলে জানান তিনি।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার বলেন, ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাপ্তাই উপজেলায়
২৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। সর্বমোট ৪৯ হাজার ৫শ’ ২৮ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।