পাইল্স হয়েছে; বুঝবো কীভাবে

পাইল্স মূলত আমাদের পায়ুপথের ভেতরে ফুলে যাওয়া রক্তবাহী শিরা। আমাদের মলদ্বারের ভেতর ও বাহিরে রক্ত পরিবহনকারী শিরা (veins) থাকে, এই শিরাগুলো যদি কারণে ফুলে ওঠে, কিংবা বর্ধিত হয়ে মলদ্বারের বাইরে চলে আসে বা শিরা থেকে রক্তপাত হয় তখন তাকে পাইল্স বলে চিহ্নিত করা হয়। পাইল্স রোগটি ইংরেজিতে Hemorrhoids নামে পরিচিত। শুধু লোকলজ্জার কারণে আমরা এ রোগ হলেও তা দীর্ঘদিন নিজের মাঝেই পুষে রাখি। বেশ জটিল হলে প্রথমে পরিবারে কাছের মানুষের কাছে প্রকাশ করি, তারপর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় শুধু দেরিতে চিকিৎসা করার জন্য এবং রোগটি ৩য় ও ৪র্থ গ্রেডে চলে যাওয়ার কারণে তখন অপারেশন ছাড়া ভিন্ন কোনো পথ থাকে না। তাই পায়ুপথে সমস্যা হলে শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে আমরা অপারেশন ছাড়াই পাইল্স রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি। পাইল্স হলে বুঝবো কীভাবে এটি জানা খুবই জরুরি। এ রোগের লক্ষণ বা উপসর্গগুলো জানা থাকলে আমরা এ রোগ সহজেই প্রতিরোধ করতে পারি।
পাইলসের কারণ
১। দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা।
২।

দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া।
৩। আঁশযুক্ত খাবার, শাক-সবজি কম খাওয়া।
৪। ভাজা-পোড়া ও লাল মাংস বেশি খাওয়া।
৫। মলত্যাগের সময় দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকা ও মলত্যাগের সময় অধিক চাপ প্রয়োগ করা।
৬। গর্ভাবস্থা হলে হতে পারে।
৭। স্থূলতা বা শরীরের ওজন বেশি হওয়া।
পাইলসের লক্ষণ
১। মলের সঙ্গে ব্যথাহীন তাজা রক্ত যাওয়া।
২। মলদ্বারে চুলকানি ও ব্যথা।
৩। মলদ্বারে কোনো মাংস পিণ্ড বের হয়েছে বলে মনে হওয়া।
৪। মলদ্বারের পাশে গুটির মতো (Lump) ফুলে ওঠা।
লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ কোলোরেক্টাল সার্জন কিংবা বিশেষজ্ঞ জেনারেল সার্জন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক মলদ্বার পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত দেবেন আপনার পাইল্স হয়েছে কিনা, কিংবা পায়ুপথের অন্য কোনো রোগ হয়েছে।
প্রতিরোধ
১। কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সেজন্য নিয়মিতভাবে আঁশযুক্ত (Fiber rich) খাবার, শাক-সবজি, সালাদ বেশি খাওয়া।
২। ভাজা-পোড়া ও লাল মাংস খুবই কম খাওয়া।
৩। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা।
৪। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের জন্য নিয়মিতভাবে ইসুবগুলের ভূষি খাওয়া যেতে পারে।
৫। মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ না করা।
৬। মলত্যাগের সময় দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে না থাকা।
চিকিৎসা
পাইলসের চিকিৎসা মানেই অপারেশন নয়। পাইল্স যদি শুরুর দিকেই নির্ণয় করা যায় তাহলে অপারেশন ছাড়াই ওষুধের মাধ্যমেই আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। কিন্তু লক্ষণ লুকিয়ে, রোগ পুষে রেখে দেরিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে অনেক সময়ই অপারেশন ব্যতীত অন্য কোনো রাস্তা থাকে না। তাই মলদ্বারের রোগ নিয়ে মোটেও অবহেলা করবেন না।
বর্তমানে অনেক আধুনিক অপারেশন পদ্ধতি চালু হয়েছে। এসব পদ্ধতিতে অপারেশনে খুবই কম কাটাছেঁড়া করতে হয়, রক্তপাত খুবই কম হয়। তাই অপারেশন ঝুঁকিবিহীন ও নিরাপদ। আধুনিক পদ্ধতিতে বিশেষজ্ঞ সার্জনের মাধ্যমে অপারেশন করালে অপারেশনের একদিন পরেই রোগী বাড়ি যেতে পারেন ও স্বাভাবিক কাজ শুরু করতে পারেন।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কোলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ, কোলোরেক্টাল, ল্যাপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বার: ১৯, গ্রীন রোড, একে কমপ্লেক্স, লিফ্ট-৪, ঢাকা। যোগাযোগ-০১৭১২-৯৬৫০০৯