স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিরতে গড়িমসি ১২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের

বার বার তাগাদা দেয়ার পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া ২২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে চলতি বছরের এপ্রিলে আবারো চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। চিঠিতে বলা হয়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গেলে নতুন শিক্ষাবর্ষে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করা হবে। ইউজিসির এমন কঠোর অবস্থানের পরও বেঁধে দেয়া সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিরছে না এসব বিশ্ববিদ্যালয়। অবশ্য কয়েকটি কমিশনের কাছে আরও সময় চেয়েছে। আবার কোনো কোনোটি এখনো নীরব রয়েছে। ইউজিসি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সিদ্ধান্ত যারা অমান্য করছে তাদের আর সুযোগ দেয়া হবে না। বেঁধে দেয়া সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গেলে ২০২৩ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যান্য ভবন বা ক্যাম্পাসগুলো অবৈধ বিবেচিত হবে। এ সময় সব প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে। এ নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ৩৫ (৭) ধারা অনুুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ইউজিসি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে ৭ বছরের সাময়িক অনুমোদন দিয়ে থাকে। এ সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

নির্ধারিত সময়ে নিজস্ব ক্যাম্পাসে না গেলে আরও ৫ বছর আবেদনের প্রেক্ষিতে সময় দিয়ে থাকে সংস্থাটি। কিন্তু এ সময়েও যারা নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাবে না তাদের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার রয়েছে কমিশনের। এপ্রিলে চিঠি পাওয়া ২২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হলো- স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব), গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, শান্ত মরিয়ম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, আশা ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং।
এদের মধ্যে কেবল ১০টি নিজস্ব ক্যাম্পাসে ফিরে গেছে। বাকি ১২টির কয়েকটি ইউজিসির কাছে সময় চেয়েছে। অন্যগুলো এখনো নিজেদের অবস্থান জানায়নি। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া এবং ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ। এদিকে সময় চাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে জানা গেছে, গ্রীন ইউনিভার্সিটি সময় চেয়েছে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছে। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ ও আশা ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ। এ ছাড়াও জমি সংক্রান্ত ঝামেলার কথা উল্লেখ করে ইউজিসি’র কাছে সময় চেয়েছে দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। ডলার সংকট ও এলসি জটিলতার কারণে কিছু সরঞ্জাম কেনা যাচ্ছে না বলে নিজস্ব ক্যাম্পাসে ফিরতে সময় লাগছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির। সময় চেয়েছে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি। এ ছাড়াও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তাদের গুলশানের ক্যাম্পাস ছাড়বে কিনা কিছুই জানায়নি।

আর দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি মতিঝিলে যে জায়গায় তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা ইউনিভার্সিটিটির নামে নয়। তাই এখানেও আইনি জটিলতা রয়ে গেছে। ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ইউজিসি’র কালো তালিকাভুক্ত বলে তারাও এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। ইউজিসি যে আইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সে আইনে বলা আছে, ‘কোনো কারণে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিলে কিংবা স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে চ্যান্সেলর কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে প্রয়োজনীয় আদেশ ও নির্দেশ দিতে পারবেন। এ বিষয়ে চ্যান্সেলরের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।’ নিজস্ব ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রীন ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. গোলাম সামাদানী ফকির মানবজমিনকে বলেন, আমরা এ বিষয়টা নিয়ে ইউজিসি’র সঙ্গে আলোচনা করছি। তাদের কাছে আমরা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছি। শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। তবে এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। তিনি এ বিষয়ে সংস্থাটির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক মো. ওমর ফারুক বলেন, এ বিষয়ে মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে ইউজিসির এক কর্মকর্তা জানান, যদি স্থায়ী ক্যাম্পাসে না ফেরে তাহলে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।