করোনা জরুরী অবস্থা থাকবে না: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আশা করছে, আগামী বছরের মধ্যে করোনা ভাইরাসকে ঘিরে আর কোনো জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা থাকবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোসের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় রয়টার্স।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনকে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য দিতে আহ্বান জানায়। কীভাবে এই মহামারী শুরু হল তা জানতে এই তথ্য চাইছে সংস্থাটি।

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরুর তিন বছর পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস থাকবেই। তবে এটি একটি সাধারণ শ্বাসযন্ত্রের রোগ হিসেবেই থেকে যাবে। অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের রোগ যেভাবে ব্যবস্থাপনা করা হয়, এই রোগও সেভাবেই ব্যবস্থাপনা করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার কমেছে। ক বছর আগে করোনায় মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা এখন এক-পঞ্চমাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু এই হার এখনও অনেক বেশি।

গত সপ্তাহে করোনায় ১০ হাজার মানুষ মারা গেছেন। এই সংখ্যা অনেক বেশি। বিশ্বের দেশগুলো এখনো মানুষের জীবন বাঁচাতে অনেক কিছু করতে পারে বলে জানান তেদরোস।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, ‘আমরা অনেক দূর এসেছি। আমরা আশাবাদী যে আগামী বছরের কোনো এক সময় আমরা বলতে পারব, করোনা ভাইরাস আর বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য জরুরি নয়।’

আগামী বছরের জানুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কমিটির বৈঠক হবে। এই কমিটি প্রধানত তেদরোসকে পরামর্শ দেয়। কমিটির সদস্যরা জরুরী পর্বের সমাপ্তি ঘোষণার মানদণ্ড নিয়ে আলোচনা করবেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ বিষয়ক কারিগরি প্রধান মারিয়া ভ্যান খারকোভ জানান, পরবর্তী বৈঠকে জরুরি কমিটির বিশেষজ্ঞরা করোনা মহামারী ও অণুজীবের প্রভাবের মতো বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবেন।

করোনা ভাইরাসের নতুন তরঙ্গের আশঙ্কা রয়েছে। তবে এই মহামারী শুরুর মতো হবে না। এখন করোনা ভাইরাসে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর হার অনেক কমে গেছে। যারা এখনও টিকা পাননি বা যারা টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করেননি তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি বলে জানান খারকোভ।
তিনি আরও জানান, বিশ্বব্যাপী এক হাজার ৩০০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্বের ৩০ শতাংশ মানুষ এখনো করোনার ভ্যাকসিন পাননি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৬৬ লাখ মানুষ। তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

তেদরোস জানান, বিশ্ব এখন করোনা জরুরী অবস্থার অবসানের দিকে তাকিয়ে আছে। এতে বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বিশ্বের অনেক মানুষের মধ্যে এখনও করোনার উপসর্গ রয়েছে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনা করে করোনা কীভাবে শুরু হয়েছে তা জানা জরুরি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়।

তেদরোস বলেন, ‘আমরা চীনের কাছে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি সম্পর্কে তথ্য চাইছি। এখন পর্যন্ত করোনার উৎপত্তি সম্পর্কে যাবতীয় ধারণা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে উহানের একটি পরীক্ষাগার থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার তত্ত্বও রয়েছে।’

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। 
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়।
তেদরোস আরও বলেন, ‘ভাইরাসটি দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সঙ্গে রয়েছে। এটা আমাদের পরিবারের অংশ হয়ে গেছে। তাই এটা সহজে জেতে চাচ্ছে না। তাই অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের রোগের মতো এটিকেও পরিচালনা করতে শিখতে হবে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকা বিষয়ক প্রধান কেট ওব্রায়েন বলেন, ‘এখানে টিকা সম্পর্কে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এই ভ্যাকসিন এখনও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারেনি। আমরা একটি ভ্যাকসিন খুঁজছি যা সংক্রমণ এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে এবং দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা প্রদান করবে।’