পেটের হার্নিয়া কেন হয়

পেটের হার্নিয়া একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ রোগ। এই রোগটি নিয়ে অবহেলা নয়। যদি দেখা যায় হঠাৎ করে কারও নাভী, উদর ও উরুর সংযোগস্থল, পুরুষের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ, মহিলাদের ক্ষেত্রে উরুর ভেতরের দিকে ফুলে গেছে তখন প্রাথমিকভাবে এটি হার্নিয়া হয়েছে বলে মনে করা হয় ।

হার্নিয়া হলো মানব শরীরের পেটের (Abdomen) ভেতরের অনেক অংশ পার্শ্ববর্তী অংশ থেকে দুর্বল, এসব দুর্বল অংশগুলো খুবই নাজুক অবস্থায় থাকে। যদি কোনো কারণে পেটের অভ্যন্তরে চাপের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাহলে আমাদের অন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ওই চাপে স্থানচ্যুৎ হয়ে সেই দুর্বল জায়গা দিয়ে প্রবেশ (penetrete) করে ফেলে তখন নাভী, উদর ও উরুর সংযোগস্থল, অণ্ডকোষ ইত্যাদি এলাকা ফুলে ওঠে। এটিই হলো হার্নিয়া।

কেন পেটের অভ্যন্তরের চাপ বৃদ্ধি পায় যদি কাশি বা পুরনো কাশি বেড়ে যায়, হঠাৎ হাঁচি চলে আসা, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রোস্টেটগ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া, প্রেগনেন্সি বা গর্ভাবস্থা ইত্যাদি। যেসব প্রকারের হার্নিয়া দেখা যায়

ইঙ্গুইনাল হার্নিয়া (Inguinal Hernia) এই ধরনের হার্নিয়ায় অন্ত্রের অংশবিশেষ উদর ও উরুর সংযোগস্থলে ইঙ্গুইনাল রিজিওন দিয়ে প্রবেশ করে। তখন উদর ও উরুর সংযোগস্থল ফোলা মনে হয়।

ইঙ্গুইনো স্ক্রোটাল হার্নিয়া (Inguino-scrotal Hernia) এ ধরনের হার্নিয়া ইঙ্গুইনাল হার্নিয়াতে কোনো ব্যবস্থা না নিলে হয়ে থাকে। তখন অন্ত্রের অংশবিশেষ নামতে নামতে একেবারে অণ্ডকোষে এসে প্রবেশ করে, ফলে অণ্ডথলি ফুলে যায়।

ফিমোরাল হার্নিয়া (Femoral Hernia) ফিমোরাল হার্নিয়া সাধারণত মহিলাদের হয়। এক্ষেত্রে উরুর ভেতরের দিকে স্ফীতি দেখা দেয়।

আম্বিলিকাল হার্নিয়া (Umbilical Hernia) এক্ষেত্রে নাভির চারপাশ বা একপাশ ফুলে ওঠে।

ইনসিসনাল হার্নিয়া (Incisional Hernia) উদরের পূর্বে অপারেশন করা হয়েছে এমন অঞ্চলে ইনসিসনাল হার্নিয়া হয়। কেননা, অপারেশনের ফলে সেই অঞ্চল খানিকটা দুর্বল হয়ে পড়ে।

হার্নিয়ার লক্ষণ কুঁচকি বা অণ্ডথলি ফুলে যাওয়া, নাভির আশপাশ ফুলে যাওয়া, উরুর গোড়ার ভেতর দিক ফুলে যাওয়া, পেটে পূর্বে অপারেশন করা হয়েছে এমন স্থান ফুলে যাওয়া।

জটিলতা ও উপসর্গ প্রচণ্ড ব্যাথা, বমি ভাব, বমি, মল ত্যাগে অসুবিধা, হার্নিয়ার চিকিৎসায় বিলম্ব হলে আটকে যাওয়া, খাদ্য নালীর রক্ত সরবরাহ ব্যাহত করে গ্যাংগ্রিন ঘটাতে পারে, পেরিটোনাইটিস, সেফটিসেমিয়া, শক, এমনকী, মৃত্যুও হতে পারে।

চিকিৎসা এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা হলো সার্জারি।

তাই দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। অপচিকিৎসায় জটিলতা বেড়ে যায়।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কোলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ, কোলোরেক্টাল, ল্যাপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বার: ১৯, গ্রীন রোড, একে কমপ্লেক্স, লিফ্‌ট-৪, ঢাকা। যোগাযোগ-০১৭১২-৯৬৫০০৯