রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ভোট দিলো বাংলাদেশ

    ইউক্রেনের অখণ্ডতা রক্ষায় একাট্টা গোটা বিশ্ব। রাশিয়ার বিপক্ষে ১৪৩ ভোটে প্রস্তাব পাস। বিপক্ষে ৫ এবং ভোটাভুটিতে উপস্থিত থাকলেও ভোটদানে বিরত ছিল চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ ৩৫টি দেশ। অনুপস্থিত ছিল রাশিয়ার মিত্র ইরানসহ ১০টি দেশ। বাংলাদেশ অখণ্ড ইউক্রেনের পক্ষে অর্থাৎ রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। এই প্রথম রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলো বাংলাদেশ। যদিও ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে রুশ ফেডারেশনে যুক্ত করার নিন্দা এবং ‘অখন্ড ইউক্রেন’ এর পক্ষে উত্থাপিত রেজুলেশনের ওপর ভোটাভুটির প্রক্রিয়া নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিতর্ক এবং ভোটে ভারতসহ অনেক দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত ছিল। জাতিসংঘের ১০৭টি সদস্য রাষ্ট্র মস্কোর দাবির বিরুদ্ধে রায় দিলেও নির্মোহ ওই প্রস্তাবেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যাওয়ার ঝুঁকি নেয়নি ঢাকা। কিন্তু মূল প্রস্তাবেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে বাংলাদেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে উত্থাপিত ওই পলিটিক্যাল রেজুলেশনে ইয়েস ভোট দিলো। ঢাকার এই অবস্থান বদলকে কেউবা রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যমণ্ডিত, কেউ বা নাটকীয়কতা, কেউ কেউ পশ্চিমা চাপের কাছে নতি স্বীকার বলে সামলোচনা করছেন।

    উল্লেখ্য, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিতে মার্কিন প্রশাসনের তদবির ছাড়াও বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছিলেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কেন ইয়েস ভোট দিচ্ছে তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমে শেয়ার করেছে। ওই ভাষ্যটি এমন- ইউক্রেনের টেরিটোরিয়াল ইন্টিগ্রিটি: ডিফেন্ডিং দ্য প্রিন্সিপলস অব দ্য ইউএন সনদ’ শীর্ষক প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। আমরা তা করেছি কারণ আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং আন্তর্জাতিক সমস্ত বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য এবং নীতিগুলি অবশ্যই সকলের জন্য সার্বজনীনভাবে মেনে চলতে হবে, সর্বত্র, কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই। আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানার মধ্যে যেকোনো দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করা উচিত। এই প্রসঙ্গে, আমরা বিশেষভাবে ইসরায়েল দ্বারা ফিলিস্তিনি এবং অন্যান্য আরব ভূমি দখলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনুরূপ অভিন্ন অবস্থান নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিচ্ছি। ইউক্রেনের সংঘাতের ধারাবাহিকতা এবং এর বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি যুদ্ধ বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞার মতো বৈরিতা কোনো জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। সংলাপ, আলোচনা এবং মধ্যস্থতাই সংকট ও বিরোধ নিরসনের সর্বোত্তম উপায়। বহুপাক্ষিকতাবাদে দৃঢ় বিশ্বাসী হিসেবে, আমরা জাতিসংঘ এবং এসজি অফিসের পাশে দাঁড়াবো এবং আমাদের সাধ্যমতো তাদের সমর্থন করব। আমরা আহ্বান জানাই যে, সর্বস্তরের জনগণের আস্থা ও আস্থা অর্জনের জন্য জাতিসংঘ এবং সেক্রেটারি জেনারেলের অফিসকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে এবং সবার প্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে হবে। তাই বাংলাদেশ, বিরোধের সব পক্ষকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে কূটনৈতিক সংলাপ পুনরায় শুরু করতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করার জন্য আহ্বান জানায়। মানবজাতির মঙ্গলের জন্য যুদ্ধের অবসান এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করার জন্য আমাদের সকলের কাজ করা উচিত। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে, শান্তি ও উন্নয়নের জন্য আমাদের (জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রের) একসাথে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।”