এবারও হচ্ছে না বান্দরবানে রাজপূণ্যাহ

বান্দরবানে পার্বত্য জেলার ঐতিহ্যবাহী রাজকর আদায়ের উৎসব রাজ পূণ্যাহ মেলা প্রতিবছর ডিসেম্বরে আয়োজন করা হলেও গতবছরের মতো এ বছরও রাজপূণ্যাহ’র আয়োজন হবে না বলে জানিয়েছে রাজপরিবার সূত্র।

বান্দরবানের বোমাং রাজ পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান শহরের স্থানীয় রাজার মাঠে প্রতিবছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তিন দিনব্যাপী রাজ মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

কিন্তু এবার করোনা ও দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে গত বছরের মতো এবারও রাজপূণ্যাহ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোমাং রাজা।

প্রতিবছর এই মেলাকে ঘিরে জেলার ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য মণ্ডিত মনোজ্ঞ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এসময় পাহাড়ি-বাঙালিদের মিলনমেলায় পরিণত হয় বান্দরবান আর পর্যটকসহ দেশি-বিদেশি লক্ষাধিক মানুষ ভিড় জমায় পর্যটন শহর বান্দরবানে। বোমাং রাজার আর্শিবাদ পাওয়ার জন্য তিন পার্বত্য জেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে অনেকেই রাজ দরবারে এসে ভিড় করেন।

বান্দরবানের বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরীর সহকারী অং জাই খ্যায়াং জানান, করোনা পরিস্থিতি ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে রাজপূণ্যাহ মেলার আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোমাং রাজা মহোদয় তাই এবারও বান্দরবানে রাজমেলা হবে না।

বোমাং রাজ পরিবার সূত্র আরও জানায়, বৃটিশ শাসন আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি তিন জেলাকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করে খাজনা আদায় করা হতো। ১৮৬৬ সাল পর্যন্ত চাকমা রাজা পার্বত্য এলাকা শাসন করতো। ১৮৬৭ সালে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ অঞ্চলের মারমা অধ্যুষিত এলাকাকে বোমাং সার্কেল, ১৮৭০ সালে রামগড় ও মাইনি উপত্যকার এলাকাকে নিয়ে মং সার্কেল গঠিত হয়। বর্তমানে রাঙ্গামাটিকে চাকমা সার্কেল, বান্দরবানকে বোমাং সার্কেল এবং খাগড়াছড়িকে মং সার্কেল হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রায় ১৭৬৪ বর্গমাইল এলাকার বান্দরবানের ৯৫টি, রাঙামাটির রাজস্থলি ও কাপ্তাই উপজেলার ১৪টি মৌজা নিয়ে বান্দরবান বোমাং সার্কেল। দুইশ বছরের ঐতিহ্য অনুসারে বছরে একবার মৌজার খাজনা আদায় উপলক্ষে এই মেলার আয়োজন করা হয় বোমাং সার্কেলের পক্ষ থেকে।