পাটকলসমূহ বন্ধ ঘোষণা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা

রাষ্ট্রীয় পাটকলসমূহ বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আজ ৪ জুলাই শনিবার, চেরাগী পাহাড় চত্ত্বরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরী সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন,  সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোঃ শাহ আলম, সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ  সম্পাদক অধ্যাপক অশোক সাহা,  সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মছি উদ দোলা, নুরুচ্ছাফা ভূইয়া, অমৃত বড়ুয়া,  সদস্য দীলিপ নাথ, রেখা চৌধুরী,  রাহাত উল্লাহ জাহিদ, অমিতাভ সেন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের প্রধান শিল্প পাটকলসমূহ রাষ্ট্রায়ত্তকরণ করা ছিল ৫৪’র  যুক্তফ্রন্ট্রের ২১-দফা ও ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র সমাজের ১১-দফার অন্যতম অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন। গত ৪০ বছর ধরে ক্ষমতাসীন সরকারসমূহ এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজীসহ সকল পাটকল বন্ধ বা বেসরকারিকরণ করে জাতি ও মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
১৯৯২ সালে বিএনপি-জামাত সরকারের শিল্পমন্ত্রী রাজাকার নিজামীর হাত দিয়ে দেশের বৃহত্তম আদমজী পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়। আর আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার বর্তমান আওয়ামী সরকার মুক্তিযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মন্ত্রীর হাত দিয়ে অবশিষ্ট ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ কাজের জন্য জাতি কখনও তাদের ক্ষমা করবে না।
বক্তারা আরো বলেন, সরকার লোকসানের কথা বলে পাটকলসমূহ বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাটকলসমূহ রাষ্ট্রীয়করণের পর থেকে এ পর্যন্ত পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ মাত্র ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। আর এ সরকারই গত ৬ বছরে দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থক ও আত্মীয় স্বজনের কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে ৬২ হাজার কোটি প্রদান করেছে।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের পাট শিল্পকে ছোট করে ফেলা এবং সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দেয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ফসল। তা না হলে মাত্র ১২০০ কোটি টাকা দিয়ে আধুনিকায়ন না করে ৫,০০০ কোটি টাকা দিয়ে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক করে ২৫টি কারখানা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে কেন? এটি ক্ষমতাসীন লুটেরাগোষ্ঠীকে তোষামদ করার সরকারের দুরভিসন্ধি মাত্র।  করোনা মহাবিপর্যয়কালে মানুষকে জীবিকাচ্যুত করার এ ধরনের মৌলিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের নৈতিকতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন দেশের লাখ লাখ কৃষক পাট চাষের সাথে সম্পৃক্ত। এ সকল কৃষককে বেসরকারি পাটকল মালিকদের হাতে ছেড়ে দেয়া হবে। পাটের দাম নিয়ন্ত্রণ করার একছত্র ক্ষমতা পেয়ে যাবে বেসরকারি পাটকল মালিকরা। আর উৎপাদিত পাটের একটা বড় অংশ পাশের দেশে পাচার হয়ে যাবে তাদের পাটকলসমূহের কাঁচামাল হওয়ার জন্য। নেতৃবৃন্দ একশ শতাংশ দেশীয় পাট শিল্পকে ব্যক্তি মালিকানায় তুলে দেয়ার তীব্র নিন্দা জানান এবং রাষ্ট্রীয় পাটকলসমূহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করে তা প্রত্যাহরের দাবি জানান। তারা পাটকল বন্ধ করে পাট চাষ ও পাট শিল্পকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা না করে মাত্র ১২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আধুনিকায়ন করার মাধ্যমে দেশীয় পাট শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
নেতৃবৃন্দ সরকারের বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে পাটকল শ্রমিক, পাটচাষী ও দেশবাসীকে আহ্বান জানান।