বাড়ি অর্থ-বাণিজ্য আবারও বেড়েছে মাছ, মুরগি ও রসুনের দাম

আবারও বেড়েছে মাছ, মুরগি ও রসুনের দাম

রমজানের আগে যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছিল, রমজানের অর্ধেকের বেশি পেরিয়ে গেলেও সেগুলো উচ্চমূল্যেই বিক্রি হচ্ছে। এর সঙ্গে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও বেড়েছে মাছ, মুরগি ও রসুনের দাম।

ক্রেতারা বলছেন, ভেজালবিরোধী অভিযানের মতো নিত্যপণ্যের বাজারেও যদি তদারকি করা হতো তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াতে পারত না। বরং কমাত।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার ও নয়াবাজারে শুক্রবার বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৮০-৮৫ টাকা। দেড় মাস আগে ছিল ৭০-৭৪ টাকা। মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১১০ টাকা কেজি। দেড় মাস আগে ছিল ৮০-৯০ টাকা কেজি।

কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা মো. সাদ্দাম বলেন, পাইকারি বাজারে এক-দেড় মাস আগে রমজাননির্ভর পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। যে কারণে খুচরাতেও দাম বেড়েছে। এখনও ওই বাড়তি দামেই ছোলা ও মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মুরগির দাম নতুন করে বেড়েছে। এদিন বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৫৫-১৬০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৫৫ টাকায়। অথচ দেড় মাস আগে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১২০-১২৫ টাকা কেজি। আর লাল লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৪০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৮০-১৯০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. আলাউদ্দিন বলেন, মুরগির চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ নেই। এ সুযোগে পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।

এদিকে সব ধরনের মাছের দাম নতুন করে কেজিতে বেড়েছে ২০-৩০ টাকা। প্রতি কেজি তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৮০-২০০ টাকা কেজি, রুই আকারভেদে ৩৭০-৬০০ টাকা কেজি, পাবদা ৬২০-৭০০ টাকা, টেংরা ৭১০-৭৬০ টাকা, শিং ৪০০-৫৬০ টাকা কেজি, বোয়াল ৫৪০-৮০০ টাকা এবং চিতল ৫০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া নলা ৬৫০ টাকা কেজি, ৭০০-৭৫০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১১০০ টাকা। তাছাড়া চিতল ৮০০-১০০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, রমজানের আগে বেড়ে যাওয়া কয়েকটা পণ্যের দাম এখনও কমেনি। তাছাড়া নতুন করে মুরগি ও মাছের দাম বেড়েছে।

তিনি বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত মনিটরিং নেই। ভেজালবিরোধী অভিযানের মতো করে নিত্যপণ্যের বাজারেও যদি তদারকি করা হতো তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াতে পারত না। বরং কমাত।

শুক্রবার প্রতি কেজি রসুন মান ভেদে বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১১০-১২০ টাকা।

তবে সরবরাহ বাড়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। শুক্রবার শসা বিক্রি হয় ২০-৩০ টাকা কেজি, বেগুন ৪০-৫০ টাকা কেজি, পাকা টমেটো ২৫-৩০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা কেজি, বরবটি ৪০-৫০ টাকা, করলা ৪০-৫০ টাকা, ধুন্দল ৪০-৫০ টাকা, কাকরোল ৪০-৫০ টাকা, গাজর ৪০-৫০ টাকা কেজি।

এদিকে প্রথম রোজা থেকে বেড়ে যাওয়া সব ধরনের মুড়ি এখনও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। বড় আকারের মুড়ি এ দিন বিক্রি হচ্ছিল ১২০ টাকায়, যা প্রথম রমজানের এক দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা। স্বর্ণা ছোট মুড়ি বিক্রি হচ্ছিল ৬৫ টাকায়, আগে ছিল ৬০ টাকা। বরিশালের হাতে ভাজা মোটা মুড়ি ১৩০ টাকা, রমজানের এক দিন আগে ছিল ১০০ টাকা।

এ ছাড়া চিকন সাদা মুড়ির দাম ৫৫ টাকা কেজি, রমজানের আগের দিন ছিল ৫০ টাকা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোজা শুরুর ১ মাস আগে থেকেই কিছু পণ্যের দাম বাড়ছিল। যেগুলোর বাকি ছিল সেগুলোর দাম বাড়ে প্রথম রোজায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করলেও তাদের মধ্যে সমন্ব^য়ের অভাব রয়েছে।

শান্তিনগর কাঁচাবাজারে কথা হয় মো. মকবুল নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, সেই একই চিত্র। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছেন। যে যেভাবে পারছে মুনাফা লুটে নিচ্ছে। দেখার কেউ নেই।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দাম কারা বাড়িয়েছে সরকারের উচিত তা চিহ্নিত করা। একই সঙ্গে কোন স্তর থেকে কতটা বাড়ানো হয় তার যৌক্তিক পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। দুর্বল বাজার মনিটরিংয়ের কারণে ভোক্তারা সুফল পাচ্ছেন না।

তিনি আরও বলেন, সরকারের একাধিক সংস্থার ভেজালবিরোধী অভিযান সত্যি প্রশংসনীয়। কিন্তু এর সঙ্গে নিত্যপণ্যের দামে নজর দেয়া উচিত।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, রোজার আগেই কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অধিদফতরের পক্ষ থেকে সারা দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে রমজানের ২ মাস আগ থেকেই কাজ করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বাজার তদারকি সেল।