দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সামরিক শাসনের প্রত্যাবর্তন

২০০০ এবং ২০১০-এর শুরুতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া উল্লেখযোগ্য গণতান্ত্রিক অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করেছে। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং তিমুর-লেস্টের মত দেশগুলি দৃঢ় গণতন্ত্রের সাক্ষী থেকেছে। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে , গত এক দশকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় সবচেয়ে তীব্র গণতান্ত্রিক পতনের শিকার হয়েছে। কোনো একটি কারণ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ ঘটায়নি।

বেসামরিক শাসনে সামরিক হস্তক্ষেপ (বা কিছু জায়গায় ধারাবাহিকতা) গণতন্ত্রের পশ্চাদপসরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রবণতা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়, যখন মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী ক্ষমতা দখল করেছিল। সেই অভ্যুত্থানটি ছিল ওই অঞ্চলে সামরিক রাজনৈতিক শক্তির পুনরুজ্জীবনের লক্ষণ। এই সামরিক প্রত্যাবর্তন আন্তর্জাতিক স্তরে প্রভাব ফেলেছে। ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা এবং ইউনিভার্সিটি অফ কেনটাকি দ্বারা সংকলিত একটি ডাটাবেস অনুসারে, বিশ্বজুড়ে আগের পাঁচ বছরের তুলনায় ২০২১ সালে সবথেকে বেশি সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হয়েছে।

 

তথাপি সামরিক রাজনৈতিক শক্তির পুনরুত্থান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ এই অঞ্চলের অনেক রাজ্য পূর্বে একত্রিত গণতন্ত্রে পরিণত হওয়ার দিকে অগ্রসর হয়েছিল। গণতন্ত্র, সমাজ এবং অর্থনীতিতে নতুন করে সামরিক হস্তক্ষেপ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তারা গণতন্ত্রীকরণ বন্ধ করে, ভয় দেখিয়ে একটা ভয়ানক সরকার তৈরি করেছে। এমনকি প্রতিবেশী রাজ্যে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সেখানের গণতন্ত্র ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। সামগ্রিকভাবে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সামরিক প্রত্যাবর্তন হলে তা সহিংসতাকে উত্সাহিত করবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

মিলিটারি রিট্রিট

শীতল যুদ্ধের সময়, দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশে সামরিক শাসন ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলি দীর্ঘ সময় ধরে সেনা শাসন সহ্য করেছে। এইরকম অনেক দেশে, সশস্ত্র বাহিনী নিজেদেরকে সমাজের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখে। সাংবাদিক ডেভিড হাট যেমন উল্লেখ করেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সেনাবাহিনী নিজেদেরকে “জাতির অভিভাবক” এবং “জনগণের সৈন্যবাহিনী” হিসেবে দেখেছে।

এমনকি যখন বিশ্ব পরিবর্তিত হয়েছে এবং অঞ্চলটি গণতন্ত্র প্রত্যক্ষ করেছে, তখনও তাদের মন থেকে এই ধারণা দূর করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবুও শীতল যুদ্ধের শেষের দিকে সেনা অভ্যুত্থানের সংখ্যা কমতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, বিংশ শতাব্দীতে সারা বিশ্বে মাত্র ১০ টি অভ্যুত্থান সফল হয়েছিল। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক সামরিক বাহিনী রাজনীতি থেকে সরে গেছে। থাইল্যান্ডে, ১৯৯২ সালে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় যাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছিলেন।

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের হত্যা করার পরে থাই রাজা বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। যা রয়্যাল থাই আর্মির কাছে ছিল অপমানের সমান। প্রকৃতপক্ষে, থাইল্যান্ড ১৯৯২ এবং ২০০৬ এর মধ্যে একটি অবিচ্ছিন্ন বেসামরিক সরকার দেখেছে, যা তার আধুনিক ইতিহাসে দীর্ঘতম। মিয়ানমারে, সামরিক বাহিনী ১৯৬২ সালে ক্ষমতা দখল করেছিল, কিন্তু ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে, সেনাবাহিনীর বিপর্যয়মূলক নীতিগুলি অর্থনীতিকে এতটাই ধ্বংস করেছিল যে ১৯৮৮ সালে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় এবং অং সান সুচিকে জনসমক্ষে নিয়ে আসে।

সেনাবাহিনী সেই বিক্ষোভগুলিকে দমন করেছিল ঠিকই কিন্তু তাদের চেতনা পরবর্তী তিন দশকের গণতন্ত্রপন্থী ক্রিয়াকলাপকে জাগিয়ে তোলে। একইভাবে, ইন্দোনেশিয়ায়, ১৯৯০এর দশকে সামরিক বাহিনী দ্বারা ব্যাপক অধিকার লঙ্ঘন এবং ১৯৯৮ সালে সুহার্তো শাসনের পতন সশস্ত্র বাহিনীকে একটি ভয়ঙ্কর বাস্তবের সামনে দাঁড় করিয়েছিল। পাকিস্তানে ২০১০-এর গোড়ার দিকে, দুটি প্রধান বেসামরিক দল প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীর সমালোচনা করেছিল এবং সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ক্ষমতা হ্রাস করেছিল।

একসময়ে যারা সামরিক রাষ্ট্রগুলিকে সমর্থন করেছিল তারা ধীরে ধীরে এই নীতি থেকে সরে আসতে থাকে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যায়, এবং ২০২০ এর প্রথম দিকে রাশিয়া তার নিজের আশেপাশের বাইরে সামরিক শাসনকে সমর্থন করতে অস্বীকার করে। বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা গণতন্ত্রের প্রচারে নতুন করে মনোযোগ দিতে শুরু করেছেন।

সামরিক অভ্যুত্থানের প্রত্যাবর্তন

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সামরিক বাহিনী বেসামরিক শাসকদের কাছ থেকে ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছে, হয় সুস্পষ্ট উপায়ে নয়তো পর্দার আড়ালে থেকে। আর তাই ২০২১-এ বিপুল সংখ্যক অভ্যুত্থান সামনে এসেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, যিনি পর্তুগালে সামরিক শাসনের অধীনে বেড়ে উঠেছেন, ক্রমবর্ধমান সামরিক দখলের সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যদিও সামরিক বাহিনী একাধিক অঞ্চলে ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর প্রবণতা সবথেকে বেশি।

গত বছর মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী প্রকাশ্যে ক্ষমতা দখল করে। থাই সশস্ত্র বাহিনী ২০০৬ সালে অভ্যুত্থান ঘটায়। কিন্তু ২০১৪ সালে, রয়্যাল থাই আর্মি আরেকটি কঠোর অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল, সেই সঙ্গে পাঁচ বছর কোনো নির্বাচনের অনুমতি দেয়নি তারা। এর মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে, সেনাবাহিনী বিরোধী দলকে দমন করেছিল এবং একটি নতুন সংবিধান অনুমোদন করে যা বেসামরিক রাজনীতিবিদদের দুর্বল করে দিয়েছিল। থাই পণ্ডিত পুয়াংথং পাওয়াকাপান যেমন উল্লেখ করেছেন, যত দিন গেছে থাই সশস্ত্র বাহিনী বেসামরিক রাষ্ট্রীয় কার্যাবলীর উপর তাদের ক্ষমতা প্রসারিত করেছে।

সশস্ত্র বাহিনী কম্বোডিয়াতেও বিশিষ্টতা অর্জন করেছে, যদিও ভিন্ন উপায়ে তারা দেশটির নেতা হুন সেনের সাথে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক জোরদার করেছে, যিনি ১৯৮৫ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী বা সহ-প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন। হুন সেনের পুত্র এবং উত্তরসূরি, হুন মানেটকে সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদে বসানো হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায়, সশস্ত্র বাহিনী, যারা সুহার্তো যুগে দেশীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল, তারা আবার রাজনৈতিক চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়েছে।

পাকিস্তানে, সামরিক শাসনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৯৯ সালে নওয়াজ শরীফকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে খাতায় কলমে কোনো অভ্যুত্থান ঘটেনি, তবে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ২০১০ এর শেষ থেকে বেসামরিক রাজনীতির উপর ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছে।

সম্পদ, ক্ষমতা, এবং বন্দুক

কেন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সামরিক বাহিনী বেসামরিক রাজনীতির উপর তাদের ক্ষমতা পুনরুজ্জীবিত করেছে? ঠান্ডা যুদ্ধের পরে রাজনীতি থেকে সামরিক বাহিনীর সম্পূর্ণ বা আংশিক পশ্চাদপসরণ সত্ত্বেও, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান বা থাইল্যান্ডের মতো জায়গাগুলিতে বেশিরভাগ বেসামরিক নেতারা সশস্ত্র বাহিনীর উপর কমান্ড প্রতিষ্ঠার স্থায়ীভাবে সুযোগ পাননি।

বেশিরভাগ রাজ্যগুলি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সেনাবাহিনীকে প্রধান ভূমিকায় ফিরে আসা থেকে বা রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলির উপর সামরিক নিয়ন্ত্রণ অপসারণের জন্য আনুষ্ঠানিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই সব দেশের বেসামরিক নেতারাও অতীতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলিকে মোকাবেলা করতে পারেননি। যেমন ১৯৯২ সালে ব্যাংককে বিক্ষোভকারীদের হত্যার জন্য প্রায় কাউকেই দায়ী করা হয়নি। পাকিস্তানে, ১৯৯৯ সালের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জেনারেল পারভেজ মোশারফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের বিচার করার জন্য বেসামরিক সরকারগুলির প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, উচ্চ আদালত বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়।

যদিও শেষ পর্যন্ত মোশারফকে রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, তবে তার কোনো শাস্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অতীতের কর্মকাণ্ডের জন্য সেনাবাহিনীকে শাস্তি দেওয়ার কোনো বাস্তব প্রচেষ্টা দেখা যায়নি ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ডের মতো জায়গাগুলিতে।

যদিও কিছুটা হলেও বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন এবং শ্রীলঙ্কা রাষ্ট্রের রক্ষক হিসেবে নিজেদের বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে। গণতন্ত্রের চাপ সামলানোর জন্য চীনও অভ্যুত্থানের পরে পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৪ সালের অভ্যুত্থানের পর থাই সামরিক বাহিনী দ্রুত চীনের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে চেয়েছিল। ২০২১ সাল থেকে চীন মিয়ানমারে সামরিক সরকারকে সমর্থন অব্যাহত রেখেছে, যদিও তারা মিয়ানমারে একজন বিশেষ দূত নিয়োগ করেছে।

আধুনিক যুগের অভ্যুত্থানের মুখোমুখি হওয়ার সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংস্থাগুলি সাহায্য করেনি। যদিও এসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) মিয়ানমারের জান্তা নেতাকে ২০২১ সালে তার বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন থেকে বাদ দিয়েছে, অনেক ASEAN নেতারা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ক্ষমতা ত্যাগ করুক বা না করুক মিয়ানমারকে সম্পূর্ণরূপে স্বাগত জানাতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে।

অভ্যুত্থানের মূল্য

সামরিক শাসনের প্রত্যাবর্তন গণতন্ত্রের জন্য ধ্বংসাত্মক। অভ্যুত্থান শুধুমাত্র দেশের স্থিতিশীলতাই নষ্ট করে না বরং অনির্দিষ্টকালের জন্য গণতন্ত্রের যে কোনো পরিবর্তনকে ধীর করে দেয়। ফ্রিডম হাউসের একটি সমীক্ষা অনুসারে, “সৈন্যরা তাদের ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার পরে দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি সাধারণত খারাপ থাকে। একটি অভ্যুত্থানের ফলে দেশের যে ক্ষতি হয় তা সামাল দিতে অনেক সময় লেগে যায়।

কারণ তা গোটা রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে করে দিয়ে যায়। ”অভ্যুত্থানগুলি প্রায়শই নৃশংস সহিংসতা এবং ক্র্যাকডাউনের জন্ম দেয়। এমনকি গেরিলা যুদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করে বড় বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে যেমনটা বর্তমানে দেখা গেছে মিয়ানমারে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে যেসব দেশে অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটে তাদের ভবিষ্যতে অভ্যুত্থানের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।এই “অভ্যুত্থান সংস্কৃতি” সমানে চলছে। যেখানে সিনিয়র সামরিক অফিসাররা তরুণ অফিসারদের শেখায় যে অভ্যুত্থান একটি কার্যকর রাজনৈতিক বিকল্প।

এই সংস্কৃতি স্পষ্টতই পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ডের মতো জায়গায় বিকশিত হয়েছে। আর তাই হয়তো এই দেশগুলি ২২ টি অভ্যুত্থানের সাক্ষী থেকেছে। সামরিক শাসকরা সাধারণত শাসনে অদক্ষ, এবং বড় ধরনের মানবিক সমস্যা তৈরি করে যা উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে এবং প্রতিবেশী দেশগুলিতে তার প্রভাব পড়ে। শাসন ক্ষমতাকে নিজেদের হাতে কেন্দ্রীভূত করে রাখে সামরিক শাসকরা। শুধু তাই নয় প্রায়ই তারা এমন নীতি অনুসরণ করে যা দুর্নীতিকে উত্সাহিত করে। যেমন মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দুর্নীতির ওপর আশ্রয় করে বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে।

অভ্যুত্থান এবং অন্যান্য ধরণের সামরিক হস্তক্ষেপগুলি প্রায়শই এমন নীতিগুলি প্রয়োগ করে যা মানবিক সমস্যা সৃষ্টি করে যা প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিতে প্রসারিত হয়। তারা আন্তঃরাজ্য সহিংসতা ঘটাতে পারে যা প্রায়শই সীমান্তের ওপারে ছড়িয়ে পড়ে কারণ সামরিক এবং অভ্যুত্থানবিরোধী যোদ্ধা উভয়ই প্রতিবেশী রাজ্যে প্রবেশ করে। যেমন মিয়ানমারের সামরিক বিরোধী যোদ্ধারা প্রায়শই ভারত ও থাইল্যান্ডের ভেতরে চলে যাচ্ছে এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী থাইল্যান্ডের মধ্যেই বিমান হামলা শুরু করেছে। সামরিক অভ্যুত্থান থেকে রোগও ছড়াতে পারে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারীতে জান্তার অপশাসন মিয়ানমারের বাইরে COVID-19 এর স্ট্রেইন ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে।

এছাড়াও, সামরিক দখল এবং গৃহযুদ্ধের ফলে ২ লক্ষের বেশি লোককে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। অনেকেই বাংলাদেশ, ভারত এবং থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছে, বিদ্যমান শরণার্থী শিবিরে আরও চাপ সৃষ্টি করেছে। সব শেষে বলতে হয়, যদি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বেসামরিক রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান সামরিক সম্পৃক্ততার শিকার হতে থাকে, তাহলে গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন উভয়ই দীর্ঘমেয়াদে বাধার মুখে পড়তে পারে।

সূত্র: thediplomat.com
কলমে: জোশুয়া কুরলান্টজিক
অনুবাদে: সেবন্তী ভট্টাচার্য্য