জ্বালানি তেল এর মূল্য কমানো, বাস-লঞ্চের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার ও দ্রবমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে আজ ৮ নভেম্বর ২০২১ বিকাল ৪ টায়,নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বামজোটের জেলা সমন্বয়ক ও বাসদ জেলা নেতা মহিন উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি বিভাগীয় সমন্বয়ক কমরেড মৃণাল চৌধুরী,গণসংহতি আন্দোলন জেলা সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমি,বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সদস্যসচিব শফি উদ্দিন কবির আবিদ।সমাবেশ পরিচালনা করেন বাসদ নেতা রায়হানউদ্দিন।
বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ও তেল পাচারের অজুহাত দেখিয়ে লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা দেশবাসী প্রত্যাখ্যান করেছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৪৬.৬৩ টাকায় তেল কিনে সরকার ৮০ টাকায় কিনতে বাধ্য করছে। সরকার তিন ধরনের শুল্ক, রিফাইন খরচ, জাহাজ খরচ ও পরিবহন বাবদ এখান থেকে প্রায় ৩৪% অর্থাৎ লিটারপ্রতি ১৯ টাকার বেশি তুলে নিচ্ছে। এভাবে শুল্ক-ভ্যাটসহ সরকার গত ৭ বছরে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। মুনাফা থেকে মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকী প্রদান করলেই অথবা কর কমালেই তেলের দাম বাড়ানোর কোন প্রয়োজন হতোনা বরং কমানো যেতো।
বক্তাগণ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জ্বালানি তেল এর মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে কৃষি, পরিহন, শিল্প ও বিদ্যুতে ব্যাপকভাবে পড়বে। কারণ পরিবহনের ৭২.৭৯ ভাগ, কৃষির ৯৯.৭৩, শিল্পের ৮০.৯৮ ভাগ, বিদ্যুৎ ১৫.২২ ভাগ ডিজেল নির্ভরশীল। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৬ ভাগ ফার্নেস অয়েল ব্যবহৃত হয়। মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে এই প্রতিটি সেক্টরের উপর নির্ভশীল প্রায় ১৬ কোটি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইতোমধ্যে বাস ও লঞ্চ এর ভাড়া ২৭% ও ৩৬% বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু পরিবহন মালিকেরা বর্ধিত যে ভাড়ার ঘোষণা বিআরটিএ দিয়েছে বাস্তবে তার চেয়ে বেশি ভাড়া যাত্রীদের থেকে আদায় করছে। সরকার ও পরিবহন মালিকদের সাজানো নাকটকের মাধ্যমেই এই ভাড়া বৃদ্ধি করা হল। মালিকদের হাতে বাড়তি মুনাফা তুলে দেয়া হল।
তেলের মূল্য বৃদ্ধি করে সরকার এবং ভাড়া বৃদ্ধি করে মালিক মুনাফা লুটবে। আর আপামর জনগণের শুধু পকেট কাটা যাবে। দেশের শাসন ব্যবস্থার এই জনবিরোধী অযৌক্তিক নীতির বিরুদ্ধে এবং বর্তমান সরকারের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশের বাম-প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক শক্তিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, চাল, ডাল, তেল, পিয়াজসহ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে এমনিতেই জনজীবনে দুর্বিসহ অবস্থা বিরাজ করছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিয়েছে।এর মধ্যে ওয়াসার পানির মূল্য ৫% বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তার উপর জ্বালানি ও ওয়াসার পানির মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি জনগণের কাছে ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ এর সামিল।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ডিজেল, কেরোসিন, ফার্নেস অয়েল, এলপিজির বর্ধিত মূল্য এবং পরিবহনের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান। অন্যথায় জনগণকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করার হুশিয়ারি দেন।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।











