কাবুল বিমানবন্দরে কমপক্ষে ৫ জন নিহত হয়েছেন। রাজধানী, রাজপ্রাসাদ, ক্ষমতা- সব তালেবানরা দখল করে নেয়ার পর আতঙ্কিত কাবুলবাসী প্রাণপণ ছুটতে থাকেন ওই বিমানবন্দরে। সেখানে জোর করে বিমানে উঠার চেষ্টা করেন তারা। তাদের সংখ্যা শত শত। এর আগের এক খবরে বলা হয়, ওই বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে মার্কিন সেনারা। তারা এত মানুষের স্রোত ও বিশৃংখলা থামাতে ফাঁকা গুলি করেছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, একটি গাড়িতে করে কমপক্ষে ৫ টি মৃতদেহ নিয়ে যেতে দেখেছেন। আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, এসব মানুষ বন্দুকের গুলিতে, নাকি পদদলিত হয়ে মারা গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কাবুল বিমানবন্দরে ফাঁকা গুলি মার্কিন সেনাদের
বহু মানুষ একটি ফ্লাইটে ওঠার চেষ্টা করলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় কাবুল বিমানবন্দরে।
এসময় এখনও বিমানবন্দরটি নিয়ন্ত্রণ করা মার্কিন সেনারা ফাঁকা গুলি করেন। বার্তা সংস্থা এএফপিকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, এখানে আমার খুব ভয় লাগছে। তারা আকাশের দিকে অনেক গুলি ছুঁড়ছে। রয়টার্সকে একজন কর্মংকর্তা বলেন, জনতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতেই ফাঁকা গুলি করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অনেকগুলো ভিডিওতে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। বিবিসি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিমানগুলোয় কূটনৈতিক কর্মীদের আগে সরিয়ে নিতে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে, যা বিশৃঙ্খলা আর বিভ্রান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবে না বৃটিশ সেনারা
আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ এখন তালেবানদের হাতে। এ অবস্থায় বৃটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস স্কাই নিউজকে বলেছেন, এসব তালেবানের বিরুদ্ধে আবার লড়াইয়ে যাচ্ছে না বৃটিশ সেনারা। তিনি স্কাই নিউজকে বলেন, আমি স্বীকার করি, আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণে তালেবানরা। এখন আমরা সেখানে কি অবস্থায় আছি তা বুঝতে আপনাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই। এ সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আফগানিস্তানে কি আবার ফিরবে বৃটিশ এবং ন্যাটো সেনারা? এর জবাবে বেন ওয়ালেস বলেন, আমাদের বিবেচনায় এটা নেই। আমরা আবার সেখানে যাচ্ছি না।
সরকার কাঠামো সৃষ্টির জন্য সংগঠিত হচ্ছে তালেবানরা
সরকারের কাঠামো সৃষ্টির জন্য তালেবান নেতারা বিভিন্ন প্রদেশে নতুন করে গ্রুপিং করছেন। বিদেশি সব বাহিনীর বিদায় হওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবেন। এরপরই নতুন সরকারের কাঠামো সৃষ্টি করবেন তালেবানরা। তালেবানের এক নেতা বলেছেন, তাদের যোদ্ধাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আফগানরা যেন নিত্যদিনের কর্মকা- স্বভাবিকভাবে চালাতে পারেন সে ব্যবস্থা করে দিতে। একই সঙ্গে নির্দেশে বলা হয়েছে, এমন কিছু করবেন না, যাতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়। তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এক ম্যাসেজে বলেছেন, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা উন্নতর হবে এটা আমি এই মুহূর্তে বলতে পারি।
শান্ত কাবুল, প্রতিটি চেকপয়েন্টে তালেবান
উদ্বেগের রাত শেষে সকাল হয়েছে কাবুলে। প্রতিটি চেকপয়েন্টে মোতায়েন রয়েছে তালেবান সদস্যরা। কাবুল থেকে আল জাজিরার সংবাদদাতা বলেছেন, বিস্ময়করভাবে কাবুল শান্ত। তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্রুপটির এক হাজার সদস্য বিভিন্ন চেকপয়েন্টে মোতায়েন রয়েছে। কাবুল পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
তালেবান বলছে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে
আফগানিস্তানের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর তালেবান বলছে, আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ হয়েছে। তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ নায়েম কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। মোহাম্মদ নায়েম বলেন, আফগানিস্তানের সব রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য তালেবান প্রস্তুত। আফগান রাজনৈতিক নেতাদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষার নিশ্চয়তাও দেবে তালেবান। তালেবান বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে চায় না। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক চায়। আফগানিস্তানের শাসনপদ্ধতি ও সরকার গঠনের বিষয়টি খুব শিগগির স্পষ্ট হবে বলে জানান তিনি। তালেবানের ওই মুখপাত্র বলেন, শরিয়া আইনের ভেতরে তাঁরা নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। একই কথা মতপ্রকাশের অধিকারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।