চিন্ময় দাসের জামিন চেম্বারে স্থগিত

রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় সাবেক ইসকন নেতা ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছে চেম্বার আদালত। ফলে তিনি আর কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানি নিয়ে বুধবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হকের চেম্বার আদালত এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক, আরশাদুর রউফ, আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ফরিদ উদ্দিন খান।

এর আগে এদিন দুপুরে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় হাইকোর্ট চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন। তার জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের পর বিকেলে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হেলাল আমীন আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিন আবেদন স্থগিত চেয়ে আপিল করেন। ওই আবেদন শুনানি নিয়ে জামিন স্থগিতের এ আদেশ দেন চেম্বার আদালত।

হাইকোর্টের রায় স্থগিতের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল জব্বার ভূইয়া ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ফরিদ উদ্দিন খান।

এদিন দুপুরে হাইকোর্ট চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দিলে তার মুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানান আইনজীবী প্রবীর হালদার। কিন্তু চেম্বার আদালতে রায় স্থগিত হওয়ায় হাইকোর্টের আদেশ কার্যকর হচ্ছে না।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে শুনানি নিয়ে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে চিন্ময় দাসের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, অ্যাডভোকেট প্রবীর হালদার ও অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ আবদুল জব্বার ভুঞা, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আবদুল বাসেত ও ফরিদ উদ্দিন খান।

মামলায় জামিন চেয়ে চিন্ময় দাসের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ৪ ফেব্রুয়ারি রুল দিয়েছিলেন। আবেদনকারীকে (চিন্ময়) কেন জামিন দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। পরে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন প্রশ্নে রুল শুনানির জন্য ৩০ এপ্রিল দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ এপ্রিল হাইকোর্টের বেঞ্চ শুনানি মুলতবি করেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ রায় দেন।

এর আগে ওই মামলায় জামিন চেয়ে চিন্ময় দাসের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ৪ ফেব্রুয়ারি রুল দেন। আবেদনকারীকে (চিন্ময়) কেন জামিন দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। বিষয়টি একই বেঞ্চের গত ১৯ মার্চের কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন আদালত রুল শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় বিষয়টি শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) ওঠে।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর হওয়া নিয়ে গত বছরের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গত বছরের ২৬ নভেম্বর কারাগারে নেওয়া হয়।

পরদিন জামিন শুনানির দিন ধার্য থাকলেও আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিলে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে আদালত গত ৩ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য রাখেন। সেদিন চিন্ময়ের কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় আদালত শুনানির জন্য ২ জানুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য রাখেন। সেদিন জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ওই মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়।