৫ মে বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন সংগঠনের চেয়ারম্যান বলেছেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে ২ টি সরকারী ফিল্ড হাসপাতাল করা জরুরী।
তিনি এক লিখিত বক্তব্যে বলেন, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের এই মহামারীতে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশেষ করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে মানুষ যে চরম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং মানুষের চিকিৎসার চাহিদা মিঠানোর যে চরম অপ্রতুলতা রয়েছে এই বিষয়টুকু চট্টগ্রামবাসীদের পক্ষে আপনাদের মাধ্যমে তুল ধরার জন্য এবং এই পরিস্থিতিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের করণীয় সম্পর্কে বলার উদ্দেশ্যে আজকে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
তিনি বলেন, এখানে বিস্তারিত কোন বক্তব্য রাখার অবকাশ নেই। কারণ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনাদের অনেকেই প্রতিনিয়ত লিখছেন, আপনারা আপনাদের নৈতিক কর্তব্যবোধ থেকে আপনাদের ভূমিকা পালন করছেন, এই জন্য জানাই ধন্যবাদ। এটা কোন বিতর্কিত বিষয় নয়, যে চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটা চরম সংকট চলছে। কেউ কেউ হয়ত দ্বীমত হতে পারেন এই বলে যে সংকট বলে কিছু চলছে না মোটামুটি চিকিৎসা চলছে, উন্নতি হচ্ছে ইত্যাদি, যা গত বছর আমরা শুনেছিলাম।
তিনি বলেন, এই ধরণের শাক দিয়ে মাছ ঢাকার বা ঘুম পাড়ানির মাসিপিসির ছড়ার মতো দৃষ্টিভঙ্গির সাথে আমরা চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম তথা চট্টগ্রামবাসী একেবারেই একমত নই।
আসলেই যেই সমস্যাটা চলছে বর্তমানে এটাকে এক সংকটজনক বা উদ্বেগজনক বলা চলে। পার্শবর্তী ভারতের মতো অবস্থা হলে একটা মানবিক বিপর্যয় আমাদের দেশে ঘটে যেতে পারে এবং এতে ঢাকার পরে চট্টগ্রামই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং এর দায় দায়িত্বও তখন কোনো নেতা নেবেন না | গত বছরের মার্চে করোনাভাইরাসের মহামারী শুরু হয় এরপর অনেক চড়াই উৎরায় পেরিয়ে এবছর থেকে আবারও এর প্রকোপ বৃদ্ধি পায় যদিও গত বছর এটা অনেকাংশে কমে গিয়েছিল বলা চলে।
তবে কোনো সতর্কতা ছিলনা যে পরবর্তীতে আরেকটা কোভিট-১৯ এর প্রবল ঢেউ আসতে পারে, এবং আন্তর্জাতিক ভাবে সতর্কতা বারবার জানানো হচ্ছিল,এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রথম ঢেউয়ের পর পরবর্তী ঢেউ এসে যায় এই মহামারীর এবং সেটার ভয়াবহতা প্রথম দিকে যে প্রকোপ ছিল তার চেয়েও আরো বেশী দেখা গেছে | আরা বেশী মানুষর জীবনহানী ঘটেছে যেটা ইউরোপ, আমেরিকা, যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা যদিও কোভিট নিয়ন্ত্রণের জন্য কিংবা অত্যন্ত কম সংখক মানুষ মারা গিয়েছে এবং দেশকে স্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ে আসার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বা বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রসংশা পেয়েছি সত্য। কিন্তু এ প্রসংশা পাওয়ার পর এখন মনে হচ্ছে যে সম্পূর্ণভাবে আমরা এত বেশী আত্ম সন্তুষ্ট ছিলাম যে বাংলাদেশে আরেকটি ঢেউ এসে লাগতে পারে কোভিটের এটা ভাবতেও কেউ পারেননি | এ কারণে যদিও গত বছর আমরা শুনেছিলাম, বসুন্ধরার সহযোগীতায় ঢাকায় ৪ হাজার বেডের বিশাল হাসপাতাল হবে এই কোভিট চিকিৎসার জন্য শুধুমাত্র। সেটা কোনদিন বাস্তবতার মুখ দেখেনি। আরো অনেক প্রজেক্টের কথা শুনছিলাম সেগুলোও হয়নি।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিশেষ করে যেখানে ঢাকার পর চট্টগ্রামে আক্রান্তের ও মৃতের সংখ্যা বেশী। সেই হিসাবে চট্টগ্রাম যদিও অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র, চট্টগ্রাম বাঁচলেই দেশ বাঁচবে আমরা বলি, কিন্তু বাস্তব কাজ কর্মের মাধ্যমে সেটার কোন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসছে যে চট্টগ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থায় সরকারী /বেসরকারী দুই ক্ষেত্রেই একটি জোড়াতালির অবস্থা। এখানে সরকারী বেসরকারী কোনটাতেই কোন আইসিইউ বেড খালী পাওয়া যাচ্ছে না। এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় আইসিইউ বেডের সংখ্যা অনেক কম। আমাদের হাসপাতাল বেসরকারী সরকারী হাসপাতাল গুলোতে এত কম আইসিইউ বেড যেটা আমরা গত বছর শুনে আশর্যজনিত হয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তব সেটা সত্য। এর পরে কয়টি বাড়ানো হয়েছে, কিছু বেড়েছে নিশ্চয়ই। কিন্তু সে গুলো কোন ধরণের উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ নয়। কারণ সেটার জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু করা হয়নি। যেহেতু্ একটা আত্মসন্তুষ্টি ছিল। আর তাই কোভিট এর দ্বীতিয়বার আক্রমন এর চিন্তা মাথায় আসেনি।
এ মুহূর্তে চট্টগ্রামে সরকারী-বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড পাওয়া যাচ্ছে না। রোগীরা গিয়ে সেখান থেকে ফেরত আসছে।বেসরকারী হাসপাতালে যাওয়ার ক্ষমতা অধিকাংশ মানুষের নেই | তার উপর আমরা দেখি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার নামে যে অরাজকতা চলছে সেটাকে ভাষায় বর্নণা করা যায় না ! আমরা স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পালন করেছি. কিন্তু লজ্জা হয় এই পরিস্থিতি দেখে | কিছুদিন আগে একজন সরকারী কর্মকর্তাই বলেছেন সংবাদ মাধ্যমে যে, বেসরকারী হাসপাতালগুলোর উপর তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই, তদারকি নেই, যার কারণে অক্সিজন, আইসিইউ ইত্যাদির জন্য তাদের চার্জ দ্বিগুনেরও বেশী বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেখানে মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, আরো কম মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে সেখানে এই ক্ষেত্রে চার্জ দ্বীগুনেরও বেশী বাড়ানো হয়েছে। সাধারণর মানুষকে ২-১০ দিন ক্লিনিকে রাখার পর যদি তারা বেঁচে থাকুক বা নাই থাকুক, বিশাল অংকের একটা বিল ধরিয়ে দেওয়া হয় যা রোগীর পরিবার কোন যোক্তিকতা খুঁজে পান না! বুঝতে পারেন না, এত বিল কোত্থেকে আসতে পারে এবং এত সেবা কোথায় কিভাবে দেওয়া হলো ? বলা হচ্ছে করোনা চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ঔষুধ, ইনজেকসন ইত্যাদির জন্য হাজার হাজার টাকা লাগে। এ ক্ষেত্রে কী কতৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রন রয়েছে, কারা কত সার্জ করছে, ইত্যাদি। সরকারীভাবে এসব সার্ভিস ও ঔষুদের কি মূল্য নির্ধারন করা আছে? কোনো নির্ধারিত মূল্য কি জনগণকে জানানো হয়েছে ? এই করোনা ভাইরাসে মানুষের সংকটকে পুঁজি করে কিছু সংখ্যাক বেসরকারী হাসপাতাল তথা ক্লিনিক গুলো তাঁরা অমানবিক ব্যবসা করছে চিকিৎসার নাম দিয়ে। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না |আমরা জরুরি ভিত্তিতে এই বিষয়ে সরকার, সাস্থ অধিদপ্তর ইত্যাদির হস্তক্ষেপ চাই |
চট্টগ্রামে সরকারী হিসাব মত প্রায় ২০০ জন মানুষ প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন। মারা যাচ্ছেন ঢাকার পরেই চট্টগ্রামে। কিন্তু যত মানুষজন মারা যাচ্ছে তাদের কি সঠিক তথ্য দেয়া হচ্ছে? সংবাদ মাধ্যম কিংবা ফেসবুক সোশাল মিডিয়া খুললেই প্রতিদিনই এই কোভিটের কারণে আমার নিজের পরিচিত ৬ থেকে ৮ জনের দুঃখজনক মৃত্যুর সংবাদ পাচ্ছি ।সে দিক থেকে যদি চিন্তা করি তাহলে যে হিসাব টুকু দেওয়া হচ্ছে এর সাথে আমরা কোন সামঞ্জস্য খুঁজে পাচ্ছি না।