
পদ্মায় স্পিডবোট ডুবিতে পিতা-মাতা ও দুই বোনকে হারিয়ে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেল শিশু মিম। আজ সকালে দুর্ঘটনার পর নদীতে একটি ব্যাগ ধরে ভাসছিল মিম। এসময় নৌপুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে। সোমবার দুপুরে শিবচরের পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশু মিম শিবচর ইউএনও অফিসের এক কর্মচারি ও বাংলাবাজার স্পিডবোট ঘাটের নৈশ প্রহরী দেলোয়ার ফকিরের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের একটি কক্ষে দুপুরের ভাত খাচ্ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিশু মিমের বাবা মনির হোসেন, মা হেনা বেগম, ছোট দুই বোন সুমি (৫) ও রুমি (৩) স্পিডবোট দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
মিমকে উদ্ধারকারী নৌ পুলিশের কনস্টেবল মেহেদী বলেন, ‘শিশুটিকে নদীতে ব্যাগ ধরে ভাসতে দেখি। হাত ও চোখের কাছে আঘাতের চিহ্ন ছিল সামান্য। দ্রুত তাকে পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শিশুটির পরিবারের সকল সদস্যরাই মারা গেছে।’
শিশু মিম শুধু জানে তার মা, বাবা, বোনেরা কেউ বেঁচে নেই। মাঝে মাঝেই মা মা বলে কেঁদে উঠছে সে। কান্নারত অবস্থায় মিম বলে, আমরা দাদু বাড়ি যাচ্ছিলাম। দাদা মারা গেছে। তাকে দেখতে। আমার আর কেউ নাই।
উল্লেখ্য, সোমবার সকালে শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা স্পিডবোটটি কাঁঠালবাড়ী ঘাটের কাছে এসে নোঙর করে রাখা একটি বাল্কহেডের সাথে ধাক্কা লেগে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ পর্যন্ত ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ৫ জন চিকিৎসাধীন আছেন।
শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ঘাটে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২৫ জনের মরদেহ নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছে একজন। সোমবার (৩রা মে) সকাল ৭টার দিকে দুর্ঘটনা ঘটলেও নিহতদের স্বজনরা এখনো এসে পৌঁছায়নি কাঁঠালবাড়ী ঘাটের পদ্মার পাড়ে। স্বজনদের অপেক্ষায় পদ্মার পাড়ে রয়েছে লাশের সারি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদীর পাড়ে নোঙর করে রাখা বালু বোঝাই একটি বাল্কহেডের সাথে স্পিডবোটটির ধাক্কা লাগে। এতে স্পিডবোটটি উল্টে যায়। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। বেলা ১১টার দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহতদের স্বজনরাও ঘাট এলাকায় এসে পৌঁছাননি।
স্থানীয় শান্ত মিয়া নামের এক ব্যক্তি বলেন, ভোর ছয়টার দিকে এলাকার মহিলারা নদীতে পানি নিতে এসে স্পিডবোটটি উল্টে থাকতে দেখে। পরে বাড়ি গিয়ে সবাইকে বললে স্থানীয় লোকজন এসে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস অংশ নেয় উদ্ধার কাজে।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকে উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে। ২৬ জনের মরদেহ পেয়েছি। ৫ জন আহত হয়েছে। তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, উদ্ধার কাজ এখনো চলছে। নিহতদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। স্বজনেরা এখনো এসে পৌঁছায়নি।
৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
পদ্মায় স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগীয় উপ-পরিচালক আজহারুল ইসলামকে প্রধান করে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন এ তদন্ত কমিটি। জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘লাশ নেয়া ও দাফন খরচ বাবদ নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।










