আগুনে ঘরহারা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া হবেনা

উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
উখিয়া প্রতিনিধি।
আগুনে ঘরহারা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া হবেনা।কেউ যদি স্ব-ইচ্ছায় যেতে চাই তাহলে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে।অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও সহায়তা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি।
তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সাথে যদি রোহিঙ্গারা জড়িত থাকে তাহলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
বুধবার (২৪ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে তিনি হেলিকপ্টারে করে বালুখালীতে পৌঁছান। এরপর পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্ত ৮/৯ নং ক্যাম্পও বলিবাজারে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ হস্তান্তর করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘যারা আগুনে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, তাদের ভাসানচর নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় ভাসানচর যেতে চাই তাহলে তাদের সেখানে প্রেরণ করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছি। এসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।
তিনি আরও বলেন,এই আগুনে অনেক স্থানীয় পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদেরকেও সহযোগিতার আওতায় আনা হবে। যাতে তারাও দ্রুত ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, কক্সবাজার-৩ আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদসহ অন্য কর্মকর্তারা।
২২ মার্চ বিকাল ৩টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডেরর সূত্রপাত হয়। এতে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা।
কি কারণে এমন দুর্ঘটা ঘটলো- তা তদন্তে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বর্তমানে এদের অধিকাংশই তাঁবু খাটিয়ে এবং অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মহসিন জানিয়েছিলেন, ৩৮০০ রোহিঙ্গা পরিবারকে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও রেডক্রিসেন্টসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা মঙ্গলবার দুপুর থেকে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।
ত্রাণ মন্ত্রণালয় জরুরি সহায়তা হিসেবে ১০ লাখ টাকা ও ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানান ত্রাণ মন্ত্রণালয় সচিব মোহাম্মদ মহসিন।
এদিকে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আগুন লাগার পর হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ও তার অংশীদার সংস্থাগুলো ৬০ হাজার বাস্তুচ্যুত ও ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাকে হট মিল বা খিচুড়ি বিতরণ করছে। পাশাপাশি, ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা পরিবার ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কাছে ডব্লিউএফপি-এর পক্ষ থেকে ১৫ হাজার কার্টন উচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ বিস্কুট (হাই এনার্জি বিস্কুট) বিতরণ করা হয়েছে।
পুরো ক্যাম্পজুড়ে ডব্লিউএফপি’র খাদ্য সহায়তা কেন্দ্র, খাদ্যের মজুত ও বাংলাদেশী খুচরা বিক্রেতা ও কক্সবাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে নিবিড় অংশীদারিত্ব থাকার কারণে আগামী দিনগুলোতে ডব্লিউএফপি’র দ্রুত খাদ্য সহায়তা সকল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের চাহিদা মেটাবে।
কক্সবাজারে ডব্লিউএফপি’র সিনিয়র ইমার্জেন্সি কোঅর্ডিনেটর শিলা গ্রুডেম বলেন,রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই ধ্বংস দেখে ডব্লিউএফপি ভীষণ মর্মাহত।তিনি আরও বলেন,এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বিশাল অংশজুড়ে এই দেশের খুচরা ব্যবসায়ী, স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্ট এবং আমাদের বিশেষতঃ মানবিক সহায়তা দানকারী অংশীদার সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় ডব্লিউএফপি’র পক্ষ থেকে দ্রুততর সময়ে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তাদের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা পরিবারগুলো রাতে গরম গরম খাবার খেতে পারবে।
বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও মানবিক সহায়তা দানকারী অংশীদারদের মধ্যে যারা প্রথমেই মানবিক সাড়াদান করেছে, সেই দলেরই এক অংশ ডব্লিউএফপি। আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর থেকেই তাৎক্ষণিক সাড়াদান হিসেবে ডব্লিউএফপি’র ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিল্ড অপারেশন ও জেনারেল ফুড এসিস্টেন্স দল কর্মরত আছে।
এ ছাড়াও আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা ও সাইট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাগুলোকে সহায়তা করার জন্য ডব্লিউএফপি’র পক্ষ থেকে ওয়াটার ট্যাংকসহ হালকা ও ভারী যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে ও সেইসাথে সাইট মেনটেইনেন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্ট দলের স্বেচ্ছাসেবকদের নিযুক্ত করা হয়েছে।
প্রাথমিক মূল্যায়নে দেখা গেছে, কমপক্ষে ১০ হাজার বাসস্থান ধ্বংস হয়ে গেছে। ডব্লিউএফপি’র দুটো নিউট্রিশন সেন্টার, একটি জেনারেল ফুড ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট ও দুটো ফ্রেশ ফুড কর্নার পুরোপুরি পুড়ে গেছে। নিয়োজিত দলগুলো ডব্লিউএফপি’র অন্য দুটো নিউট্রিশন কেন্দ্র ও একটি ই-ভাউচার আউটলেটের ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করা পর্যন্ত সেগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।