হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, রাজনীতির মহাকবি, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর বর্ণিল জীবন চরিত নিবিড়ভাবে পাঠ, পঠন, চর্চা ও গবেষণার জন্য চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার (গবেষণা কেন্দ্র)’ প্রবর্তন করা হয়েছে। বেতন-ভাতাসহ নীতিমালায় থাকা কোন ধরণের সুযোগ-সুবিধা না নিয়েই ৭ মার্চ ২০১৯ বেলা ১২ টায় চবি গ্রন্থাগারে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার (গবেষণা কেন্দ্র)’ পদে দায়িত্ব নিয়ে এর উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সমাজ বিজ্ঞানী, বরেণ্য শিক্ষাবিদ, লেখক-গবেষক, কলামিস্ট, বুদ্ধিজীবী প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বঙ্গবন্ধু চেয়ার নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ, চবি বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, হলসমূহের প্রভোস্টবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, অফিস প্রধানবৃন্দ, অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, বিশ^দ্যিালয় পরিবারের সম্মানিত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু চেয়ার নীতিমালা কমিটি কর্তৃক প্রণীত নীতিমালা অনুসারে ৫২০তম সিন্ডিকেট সভার অনুমোদনক্রমে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ বাস্তবায়ন কমিটি বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও চবি সমাজত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীকে চার বছরের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এ খ্যাতিমান শিক্ষাবিদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, মহান স্বাধীনতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, মহান ভাষা আন্দোলন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যবৃন্দকে নিয়ে প্রায় শতাধিক গবেষণা-প্রকাশনা রয়েছে। এ সকল গবেষণা-প্রকাশনার মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু ও আজকের বাংলাদেশ’, (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মারকগ্রন্থ ২), ‘রাজনীতির মহাকবি মহাকালের মহানায়ক চিরঞ্জীব বাঙালির বঙ্গবন্ধু, (গ্রন্থ, শোকাশ্রু ২০১৬), ‘কালজয়ী ৭ মার্চ ও স্বাধীন বাংলাদেশ, (গ্রন্থ, শোকাশ্রু ২০১৭), ‘বাঙালির বঙ্গবন্ধু-বিশ^বন্ধু শেখ মুজিব, (গ্রন্থ, শোকাশ্রু ২০১৮), । এ ছাড়াও বাংলাদেশের জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রকাশনার মধ্যে ‘রাজনীতির কবি’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, (দৈনিক জনকন্ঠ), ‘৭ মার্চ ও একটি বিশ^শ্রেষ্ঠ ভাষণ’ (দৈনিক জনকন্ঠে ২ পর্বে ছাপানো হয়), ‘বঙ্গবন্ধু, একুশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’, (দৈনিক সমকাল), ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি’, (দৈনিক জনকন্ঠ), ‘সংস্কৃতিক বিশ^ায়ন এবং মাতৃভাষার মর্যাদা প্রসঙ্গে’, (দৈনিক ইত্তেফাক), ‘শেখ হাসিনা উদার-অভ্যুদয়ের নেত্রী, জননন্দিত শেখ হাসিনা ঃ প্রজ্ঞার অসাধারণ স্মারক, (গ্রন্থ ১৯৯৭)’, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও অর্থনৈতিক মুক্তি বিশ^ায়নের আলোকে’, (দৈনিক আজাদী ২০১০), ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়ন স্বাধীনতার রূপকল্প’, (দৈনিক আজাদী ২০০৯), ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতিক গতি-প্রকৃতি’ (দৈনিক ইত্তেফাক ২০০৯)।
মাননীয় উপাচার্য তাঁর ভাষণের শুরুতে মহাকালের মহানায়ক স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ প্রতিষ্ঠা একটি অবিস্মরণীয় উদ্যোগ। এ জন্য তিনি মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট শুকরিয়া আদায় করেন। তিনি বলেন, বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যবর্গ, বাংলাদেশের মহান মুক্তিয্দ্ধু, মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ভাষা আন্দোলনসহ সকল আন্দোলন-সংগ্রামের স্মৃতিকে চির অম্লান করে রাখার প্রয়াসে বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে একজন নেতা/কর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন লালন করে আসছি। বিশেষকরে ‘মুজিববাদ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষে একজন নিবেদিত আদর্শিক কর্মী হিসেবে শিশু শেখ মুজিব থেকে শুরু করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পর্যন্ত তাঁর জীবনকর্ম ও কীর্তি নিয়ে এবং একটি কঠিন সময়ে যখন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো গবেষণা ও লেখালেখি করতে মানুষ সাহস করতো না বরং ভয় পেতো; সে কঠিন সময়ে আমি মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে এবং আগ্রহে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা, শহীদ শেখ কামাল এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ রচনা করেছি। বিশ^বিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চেয়ার নির্বাহী কমিটি আমাকে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে দায়িত্ব নেওয়ার সুপারিশ করেছে। নীতিমালায় উল্লিখিত বেতন-ভাতাসহ যে সকল সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হয়েছে আমি তা ব্যতিরেকে এ গুরু দায়িত্ব গ্রহণের জন্য সম্মত হয়েছি। কারণ যে ব্যক্তি স্বপরিবারে আত্মবিসর্জনের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাঁর জীবন-কীর্তি নিয়ে গবেষণা করতে কোনো ধরণের আর্থিক বা সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা আমার কাছে একধরণের অপরাধ মনে হচ্ছে। মাননীয় উপাচার্য আরও বলেন, আমি মনে করি ‘বঙ্গবন্ধুর কীর্তি ও সংগ্রামী জীবন নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত জাতির সামনে কার্যকরভাবে তুলে ধরাই আমার জীবনের অন্যতম নৈতিক দায়িত্ব’। মাননীয় উপাচার্য ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ায় উক্ত কমিটি এবং বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।