তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই ছিং-তে চীনকে ‘বিদেশি শত্রু শক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠা দ্বীপ-প্রণালি সম্পর্কের মধ্যে এটি তার অন্যতম কঠোর মন্তব্য।
বৃহস্পতিবার(১৩ মার্চ) এক জাতীয় নিরাপত্তা বৈঠকের পর তিনি বলেন, চীনের কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে তাইওয়ানের আর কোনও বিকল্প নেই, আরও সক্রিয় ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঘোষণা করে লাই জানান, তাইওয়ান তার সামরিক আদালত ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করবে এবং চীন, হংকং ও ম্যাকাও থেকে আসা ব্যক্তিদের জন্য বসবাসের শর্ত কঠোর করবে।
চীনের ক্রমবর্ধমান গুপ্তচরবৃত্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, চীন তাইওয়ানের স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সদস্য, অপরাধী চক্র ও গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
প্রেসিডেন্ট লাই দাবি করেন, ২০২৩ সালে চীনের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ৬৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যা ২০২১ সালের তুলনায় তিন গুণ বেশি। অভিযুক্তদের বেশিরভাগই বর্তমান ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সামরিক আদালত ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনের ঘোষণা দেন তিনি।
লাইয়ের এই বক্তব্যের পর চীনের কঠোর প্রতিক্রিয়া আসে। চীনের তাইওয়ান বিষয়ক দফতরের মুখপাত্র চেন বিনহুয়া বলেন, তাইওয়ান স্বাধীনতাকামী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যদি লাল রেখা অতিক্রম করে, তাহলে চীনের কাছে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া বিকল্প থাকবে না।
চেন আরও বলেন, যারা আগুন নিয়ে খেলে, তারা অবশ্যই পুড়বে।
চীন তাইওয়ানকে নিজের অংশ বলে দাবি করে, অন্যদিকে তাইওয়ান নিজেকে মূল ভূখণ্ড চীন থেকে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে দেখে। লাইয়ের বক্তব্যকে ‘দ্বীপ-প্রণালি অঞ্চলে সংকট সৃষ্টির পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছে চীনের সরকার।
লাই চীনের রাজনৈতিক চাপ মোকাবিলায় বিনোদন শিল্পের জন্যও নতুন নির্দেশিকা দেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, তাইওয়ানি শিল্পীদের চীনে কাজ করার সময় কীভাবে আচরণ করতে হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে, যাতে তারা ‘জাতীয় মর্যাদার বিপরীতে’ কোনও কিছুতে বাধ্য না হন।
তাইওয়ানি তারকাদের চীনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের চাপের বিষয়টি সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে। তাইওয়ানের কিছু অভিনেতা ও গায়ক সামাজিক মাধ্যমে ‘তাইওয়ানকে চীনে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত’—এমন বার্তা পোস্ট করায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে তাইওয়ানের সরকার চীনকে দোষারোপ করেছে।
তাইওয়ান ২০১৩ সালে সামরিক আদালত ব্যবস্থা বাতিল করেছিল, কারণ এক সেনার মৃত্যুর মামলার অস্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল। এবার লাই ঘোষণা দিলেন, সামরিক বিচারকদের আবার সামনের সারিতে পাঠানো হবে, যেন তারা সেনাবাহিনীর সক্রিয় সদস্যদের অপরাধমূলক মামলাগুলো পরিচালনা করতে পারেন।
লাই ছিং-তে বরাবরই চীনের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত। তার ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি) তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষে বলে মনে করা হয়। নির্বাচনের আগে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম তাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী উসকানিদাতা’ বলেছিল এবং তার বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের অভিযোগ এনে বিচার চাওয়া হয়েছিল।
তাইওয়ান প্রণালিতে সম্প্রতি উত্তেজনা বেড়েছে। চীনের যুদ্ধবিমান এবং নৌবাহিনী নিয়মিতভাবে তাইওয়ানের চারপাশে মহড়া চালাচ্ছে। লাইয়ের এই বক্তব্য এবং নতুন নিরাপত্তা নীতি সেই উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে।