বিরোধপূর্ণ এলাকা থেকে সৈন্য পেছানোর সিদ্ধান্ত ভারত ও চীনের

লাদাখে গালওয়ান সীমান্তে চীন আর ভারতের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার দুই দেশই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ব লাদাখ থেকে পিছু হঠবে তারা। সেনা কমান্ডার পর্যায়ে দীর্ঘ বৈঠকের পরে চীন আর ভারত ঠিক করেছে যে পূর্ব লাদাখে যতগুলো এলাকা নিয়ে পরস্পরর মধ্যে বিরোধ রয়েছে, সেই সব এলাকা থেকে দুই বাহিনীই পিছিয়ে যাবে। এদিকে রাশিয়া বলেছে, দুই দেশের বিরোধ মেটাতে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। খবর বিবিসি ও এনডিটিভির

ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু নির্ভরযোগ্য সেনা সূত্রগুলো জানিয়েছে যে পূর্ব লাদাখে দুই বাহিনী ঠিক কীভাবে পিছিয়ে যাবে, বা কবে থেকে বাহিনী সরিয়ে নেওয়ার কাজ হবে, সেসব খুঁটিনাটি দুই বাহিনী এরপরে ঠিক করবে। চীনের সরকারি সংবাদপত্র পিপলস ডেইলিও সেদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে টুইট করেছে যে দুই সেনা কমান্ডারের মধ্যে এই দ্বিতীয় বৈঠকটি প্রমাণ করে যে আলাপ আলোচনার মধ্যে দিয়েই মতবিরোধ মিটিয়ে নিতে আর উত্তেজনা কমাতে চাইছে দুই দেশই।

মে মাসের গোড়া থেকে শুরু হওয়া সীমান্ত সংঘাতের মধ্যেও এই বৈঠকটি খুব সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সেনাসূত্রগুলি। আলোচনাও গঠনমূলক হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। এই বৈঠকে ভারতের তরফে ফোরটিন কোরের লেফটেনান্ট জেনারেল হারিন্দার সিং ছিলেন আর চীনের দিক থেকে ছিলেন তিব্বত সামরিক জেলার কমান্ডার মেজর জেনারেল লিউ লিন। বৈঠকে ভারত আবারও বলেছে যে গালওয়ান উপত্যকায় চীন পূর্ব পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছিল।

সেনা সূত্র থেকে বলা হয়েছে এটা নিয়ে যেমন বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে, তেমনই ভারতের প্রস্তাব মতো দুই দেশের সেনা সংখ্যা কমানো নিয়েও আলোচনা হয়েছে ঐ বৈঠকে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বহু দশক ধরেই পরস্পরবিরোধী দাবি আছে। লাদাখ হোক বা উত্তর পূর্বের অরুণাচল প্রদেশ হোক, নিয়ন্ত্রণ রেখা যে খুবই অস্পষ্ট, সেটা সামরিক এবং কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বারেবারই বলেছেন। দুই দেশই মেনে নেবে, এমন কোনো মানচিত্র নেই। সেজন্যই ভারত বা চীন যেটা দাবি করে তাদের এলাকা বলে, অন্য দেশ সেটা মানতে চায় না। বিরোধ এটা নিয়েই। কিন্তু এই মতবিরোধ সেনাবাহিনীর কমান্ডার পর্যায়ে হয়তো সমাধান হবে না।

গালওয়ান উপত্যকায় সেনা সংঘর্ষের জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারত-চীন সম্পর্কে অভূতপূর্ব উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিন্তু রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, নয়াদিল্লি-বেইজিং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উত্তেজনা প্রশমনে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। গতকাল রাশিয়া-ভারত-চীন (আরআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, বাইরের সাহায্য দরকার নেই দুই দেশের। নিজেরাই সমস্যা মিটিয়ে নিতে সক্ষম।