কোনো কোনো দল পুরানো ফ্যাসিস্টদের মতো আধিপত্য বিস্তার করতে চায়: নুর

গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, আমরা দেখছি, কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা ওই পুরানো ফ্যাসিস্টদের মতোই হুমকি-ধামকি ও আধিপত্য বিস্তারের অপরাজনীতি দেশব্যাপী কায়েম করতে চায়।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘তাদের শুধু মনে করিয়ে দিতে চাই, ১৬ বছরের ওই দৈত্য-দানবীয় আওয়ামী লীগের শাসন মুহূর্তের মধ্যেই চুরমার হয়ে গেছে। জনগণের প্রতিরোধে তারা সীমান্ত দিয়ে, হেলিকপ্টারে, নদী-নালা-খাল-বিল দিয়ে পালিয়ে গেছে। তাই আজ কেউ যদি জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাদের পরিণতিও তাই হবে।’

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গণ অধিকার পরিষদ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নির্বাচন প্রসঙ্গে নুর বলেন, ‘বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছে। সব ঠিক থাকলে ১১ ডিসেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের লড়াকু নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ থাকায় যদি কোনো প্রেক্ষাপট তৈরি হয়, তবে দেশের বিবেচনায় নির্বাচন পেছানোর বিষয়টি হয়তো কমিশন বা সরকার বিবেচনা করবে। অন্যথায় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে।’

দলীয় অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হোক আর এপ্রিলে হোক আগামী সংসদ নির্বাচনে গণ অধিকার পরিষদ এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। আর যদি দেশের প্রয়োজনে কোনো জোট করতে হয়, সেক্ষেত্রে যেসব জায়গায় আমাদের জনসমর্থন আছে, সেই আসন নিশ্চিত করেই জোট হবে। ওই দু-চারটা আসনের জন্য গণ অধিকার পরিষদ জোট করবে না।’

নুরুল হক নুর আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের কবল থেকে এদেশকে মুক্ত করেছে কৃষক-শ্রমিক-জনতা। তাই আগামীতে কারা ক্ষমতায় আসবে, তা নির্ধারণ করবে সাধারণ মানুষ। আওয়ামী লীগের গত ১৬ বছরের দুঃশাসনে এদেশের ভিন্নমত এবং বিরোধী দলের নেতাদের ওপর, বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলেম-ওলামাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাই আপনারা প্রথাগত রাজনীতির বাইরে গিয়ে নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানাবেন। একমাত্র নতুন নেতৃত্বই পারে বাংলাদেশকে নতুনভাবে বিনির্মাণ করতে।’

অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার। সকল রাজনৈতিক দলকে সংযত এবং সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আগামীর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে চাই। দেশকে এগিয়ে নিতে সংঘাত, সহিংসতা, হানাহানি মুক্ত নতুন ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

সমাবেশে নুর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে দলের প্রার্থী হিসেবে নজরুল ইসলাম নজুকে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসন থেকে ট্রাক প্রতীকে নজরুল ইসলাম নজু ভাই নির্বাচন করবেন ইনশাআল্লাহ। আমি আশা করি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখান থেকে ট্রাকের প্রার্থী সংসদে যাবেন।’

নবীনগর গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণ অধিকার পরিষদ মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক সানাউল্লাহ হক, গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক দুলাল আল মাইজ ভান্ডারী, নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি আশরাফুল হাসান তপু ও সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজিউল রহমান তানভীর।

এর আগে বিকেল থেকে উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন থেকে দলের নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুনসহ মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে জড়ো হন। পরে সমাবেশস্থলটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়।