প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং দ্য নারকোটিকস কন্ট্রোল অ্যাক্ট ২০১৮: লিগ্যাল অ্যান্ড সোশ্যাল পার্সপেক্টিভস’ শীর্ষক স্টুডেন্টস’ সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
০৬ ডিসেম্বর (শনিবার) সকাল ১১টায় এলএলবি ৪৯তম ব্যাচের উদ্যোগে আয়োজিত এই সিম্পোজিয়ামে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর এস. এম. নছরুল কদির। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইন অনুষদের অ্যাডজাঙ্কট ডিন প্রফেসর মোঃ মোরশেদ মাহমুদ খান ও সহকারী ডিন তানজিনা আলম চৌধুরী। সিম্পোজিয়ামে গেস্ট স্পিকার ছিলেন চট্টগ্রামের ডিপার্টমেন্ট অব নারকোটিকস কন্ট্রোল-এর ডেপুটি ডিরেক্টর শামীম হোসেন। আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অনুপ কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি উপাচার্য প্রফেসর এস. এম. নছরুল কদির তাঁর বক্তব্যে মাদকদ্রব্যকে পৃথিবীর খুবই আলোচিত বিষয় উল্লেখ করে নারকোটিকস কন্ট্রোল অ্যাক্ট ২০১৮-এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সবার সচেতনতা ও সজাগ দৃষ্টি কামনা করেন। তিনি বলেন, মাদক শুধু ব্যক্তিকে বিপথে নেয় না, এটি সমাজের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎকেও বিপন্ন করে। ২১ শতকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে তরুণদের শক্তি, সৃজনশীলতা ও নৈতিকতা বজায় রাখতে হলে মাদকবিরোধী আইনের সঠিক প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। নারকোটিকস কন্ট্রোল অ্যাক্ট ২০১৮ শুধু একটি আইন নয়—এটি আমাদের তরুণ প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখার একটি শক্তিশালী নীতিমালা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উচিত আইনের প্রতিটি ধারা গভীরভাবে বোঝা এবং সমাজে মাদকের বিরুদ্ধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি সবসময়ই আইনশিক্ষাকে বাস্তবভিত্তিক ও সমাজসংলগ্ন করতে বদ্ধপরিকর।
প্রফেসর মোঃ মোরশেদ মাহমুদ খান বলেন, মাদকদ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব প্রথমে ব্যক্তি, তারপর ধারাবাহিকভাবে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বের উপর পড়ে। মাদক যারা নেয়, তাদের ৯৫ শতাংশ তরুণ। তারা মাদক ক্রয়ের জন্য অনৈতিকভাবে অর্থ সংগ্রহ করে, এমনকি অনেকসময় হত্যাকাণ্ডে পর্যন্ত লিপ্ত হয়। এভাবে তারা ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে তাদের অবদান থেকে দেশ ও সমাজ বঞ্চিত হয়। তিনি মাদক নিয়ন্ত্রণে মূল্যবোধ ও জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণার উপর গুরুত্ব দেন।
তানজিনা আলম চৌধুরী বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখছি মাদকবিরোধী ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। কিন্তু মাদক নিয়ন্ত্রণ হয়নি। বস্তুত মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য মাদকের মূল হোতাদের রোধ করা দরকার, এছাড়া দরকার গভীর মূল্যবোধ।
গেস্ট স্পিকার শামীম হোসেন তাঁর বক্তব্যে নারকোটিকস কন্ট্রোল অ্যাক্ট ২০১৮-এর ৪০ ও ৪১ ধারার কথা তুলে ধরেন, যেখানে বলা হয়েছে, মাদকের ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষক ও অর্থলগ্নিকারীও আইনের আওতায় আসবে।
তিনি মাদক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তাঁর মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতার বিবরণ দেন। তিনি বলেন, মাদকদ্রব্যের বিস্তার আজ একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। নারকোটিকস কন্ট্রোল অ্যাক্ট ২০১৮ আমাদের দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছে। তবে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ সম্ভব তখনই, যখন জনগণ বিশেষ করে তরুণ সমাজ এ বিষয়ে সচেতন হবে। আমরা প্রতিনিয়ত নতুন ধরনের মাদক ও চক্রের মুখোমুখি হচ্ছি—এ জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ও আইনি সক্ষমতা দুটোই জরুরি।
সভাপতির বক্তব্যে অনুপ কুমার বিশ্বাস বলেন, মাদকবিরোধী আইনকে শুধুমাত্র পাঠ্যবিষয় হিসেবে নয়, বরং জাতীয় উন্নয়ন ও মানবতার সাথে সম্পর্কিত একটি মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে উপলব্ধি করতে হবে। শিক্ষার্থীরা এই ধরনের সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জ্ঞান সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের দূত হয়ে উঠতে পারে।
পুরো অনুষ্ঠানের সমন্বয় করেন আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সালমা মরিয়ম। সিম্পোজিয়ামে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এবং নারকোটিকস কন্ট্রোল অ্যাক্ট ২০১৮-এর বিভিন্ন ধারা, এর সামাজিক প্রভাব ও প্রয়োগসংক্রান্ত নানা দিক নিয়ে মতবিনিময় করেন। শেষে ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং দ্য নারকোটিকস কন্ট্রোল অ্যাক্ট ২০১৮: লিগ্যাল অ্যান্ড সোশ্যাল পার্সপেক্টিভস’ বিষয়ে একটি প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন।
সিম্পোজিয়ামে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।











