থামছেই না খাগড়াছড়ির পাহাড় কাটার মহোৎসব

খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকায় চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। কখনো প্রকাশ্যে, কখনো রাতের আঁধারে কেটে নেয়া হচ্ছে পাহাড়ের মাটি। প্রশাসনের অভিযানের পরও থামছে না এই ধ্বংসযজ্ঞ।

পরিবেশবিদদের দাবি, এভাবে পাহাড় কাটা চলতে থাকলে পুরো অঞ্চলে পরিবেশগত বিপর্যয় নেমে আসবে, হারিয়ে যাবে জীববৈচিত্র্য।

স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি শক্তিশালী চক্র সরকারি নজরদারির ফাঁক গলে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে। কেউ কেউ পাহাড় কেটে বসতিও গড়ে তুলছেন। প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও শাস্তির ব্যবস্থা নিলেও স্থায়ী কোনো সমাধান মিলছে না।

জেলার দীঘিনালা, মাটিরাঙা, রামগড়, গুইমারা এবং সদর উপজেলাগুলোতে সবচেয়ে বেশি পাহাড় কাটা হচ্ছে। পাহাড়ের মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে, আবার কেউ কেউ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে জমি ভরাট বা বাড়ি নির্মাণের জন্য মাটি সংগ্রহ করছেন।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, অনিয়ন্ত্রিতভাবে পাহাড় কাটার ফলে বর্ষা মৌসুমে ভূমিধসের আশঙ্কা বাড়ছে। স্থানীয় পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল বলেন, ‘যদি এখনই পাহাড় কাটা বন্ধ করা না হয়, তাহলে ভয়াবহ পরিবেশগত ঝুঁকির মুখে পড়বে পার্বত্য চট্টগ্রাম। বর্ষা এলেই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে, প্রাণহানি হয়। উন্নয়নের নামে পাহাড় না কেটে বিকল্প প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।’

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ‘পাহাড় কাটার ঘটনায় একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে, স্কেভেটর জব্দ করা হয়েছে। জেলায় ২০টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়েছে। তবে কেউ পাহাড় কেটে ফেলার সুযোগ পাবে না, আমরা জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলছি।’

এদিকে, পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক হাসান আহমদ জানান, ‘অবৈধভাবে পাহাড় কাটার অপরাধে ইতোমধ্যে একজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পরিবেশবিদরা মনে করেন, প্রশাসনের কড়াকড়ি সত্ত্বেও পাহাড় কাটা থামছে না, কারণ এর পেছনে রয়েছে শক্তিশালী চক্র। তাদের দ্রুত আইনের আওতায় না আনলে পুরো অঞ্চল ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।