‘নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও নারীবিদ্বেষী কর্মকান্ড বন্ধে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে’

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ১১৫ তম বার্ষিকীতে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম চট্টগ্রাম জেলা শাখার সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

শনিবার(৮ মার্চ) নগরীর টাইগার পাস মোড়ে সকাল ১১ টায় সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম চট্টগ্রাম জেলা আহবায়ক জোবায়ের বীনার সভাপতিত্বে ও সদস্য উম্মে হাবিবার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার ইনচার্জ আল কাদেরী জয়, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আহমদ জসীম, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম চট্টগ্রাম জেলা সদস্য সুপ্রীতি বড়ুয়া, কাজল,রোকেয়া আক্তার, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট চট্টগ্রাম জেলা শাখার আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন কবির, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি মিরাজ উদ্দিন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ” ২৪এর গণঅভ্যুত্থানে নারীদের বীরোচিত ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্দোলন যখন অনেকটাই স্তিমিত সেই সময় নারীরা সমস্ত অচলায়তন ভেঙে রাজপথে বের হয়ে আসে। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই নারীকে আর সেভাবে মূল্যায়ন করা হলো না। নারীর বিকাশের ক্ষেত্রে যে সকল বাধা সমাজে আছে সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নেয়া হলো না। বরং নানারকম নিপীড়ন নির্যাতনের মাধ্যমে ক্রমেই অমর্যাদাকর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অভ্যুত্থানের পর পরই কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে একজন নারীকে পুলিশের উপস্থিতিতে তার পোশাক ও স্বাধীন চলাফেরাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ‘এক দল যুবক’ হেনস্থা করে। নানামুখী অপতৎপরতায় একের পর এক নারীদের মর্যাদাবোধে আঘাত হানা হচ্ছে। কখনো ধর্মীয় মৌলবাদীদের দ্বারা কখনওবা ‘তৌহিদী জনতার’ উচ্ছৃঙ্খলতা দ্বারা। এসব ঘটনার সাথে জড়িত কাউকেই এযাবৎ কোন শান্তির আওতায় আনা হয়নি। তাহলে কি নিম্নবতার মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকার এ সকল অপতৎপরতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে? নারীকে নির্যাতন, নিপীড়ন, হেনস্থা, ধর্ষণ এমনকি হত্যা করেও পার পেয়ে যাওয়া যায়। এটাতো আমরা ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের আমলে দেখেছি। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও ঐ সবের পুনরাবৃত্তি খুবই দুঃখজনক। জয়পুরহাট, দিনাজপুর, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নারীদের ফুটবল খেলায় বাধা, নারী রিপোর্টারকে ধর্ম উপদেষ্টার মিটিং এ প্রবেশে বাধা দেওয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগম রোকেয়া ও কুমিল্লায় নবাব ফয়জুন্নেসার ছবিতে কালি লেপন, নারীদের যত্র-তত্র হেনস্থা করা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনে আলটিমেটাম দেওয়া, বই মেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিনকে গোপন পণ্য আখ্যায়িত করে সেই স্টল বন্ধ করাসহ নানা রকম নারী বিদ্বেষী কর্মকান্ড চলছে।”

বক্তারা আরো বলেন,” অন্তর্বর্তী সরকার এসব নারী বিদ্বেষী কর্মকান্ড বন্ধে এবং দায়ীদের গ্রেফতার ও বিচারের বিষয়ে ভীষণভাবে উদাসীন।
একদিকে নারী বিদ্বেষী কর্মকান্ড চলছে অন্যদিকে নারীর উপর নেমে এসেছে ভয়াবহ নির্যাতন নিপীড়ন। সম্প্রতি রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনার তীব্রতাকে পুলিশ প্রশাসন নানাভাবে লঘু করার অপচেষ্টা চালালো। ২১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রংপুরের মিঠা পুকুরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ফুল সংগ্রহ করতে যাওয়া চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হয়। এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় এক গৃহবধূকে ট্রলারে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে পদ্মার চরে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জের সিরাজদি খাঁনে স্বামীর কাছে ফেরার পথে অটো রিকশা থেকে নামিয়ে গার্মেন্টস কর্মীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। এই ঘটনাগুলো কেবল মাত্র ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ এই দুইদিনের পত্রিকার খবর। এ থেকে বোঝা যায়, সারাদেশে প্রতিদিন কীভাবে নারীরা ধর্ষণ-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। আমরা অবিলম্বে প্রত্যেকটি নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান একথা বলা হলেও বাংলাদেশে নারীরা এখনো আইনী বৈষম্যের শিকার। পিতা মাতার সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও সুরক্ষা নিয়ে এখনো লড়তে হচ্ছে। ‘সমকাজে সমমজুরি’ আইনে থাকলেও এখনো সকল ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হয় নাই। সমাজে এই সকল বৈষম্য ও নির্যাতন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের চেতনায় নারী-,পুরুষ সকলের মিলিত লড়াই সময়ের প্রয়োজন। “