‘নারী-পুরুষের সমতা গড়তে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান করতে হবে’

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা নারী সেল-এর উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা নারীর প্রতি সকল প্রকার শোষণ-বৈষম্য দূর করতে, নারী-পুরুষের সমতা গড়তে এবং নারীমুক্তির লক্ষ্যে সমাজতন্ত্রের সংগ্রামকে বেগবান করার আহ্বান জানিয়েছেন।

৮ মার্চ শনিবার, বিকেল ৪.৩০টায় নগরের হাজারী লেইনস্থ প্রগতি ভবন মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে নারীর ওপর সহিংসতা, শোষণ-নির্যাতন বন্ধ এবং নিপীড়কদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
সিপিবি’র নারী সেল চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক রেখা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধ্যাপক শীলা দাশগুপ্তের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা মৃণাল চৌধুরী, সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোঃ জাহাঙ্গীর, সহকারী সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, নারী নেত্রী সিতারা শামীম, উম্মে রায়হান সিজার, অধ্যাপিকা মৃণালিনী চক্রবর্তী, অধ্যাপিকা রেখা দাশ, আখিঁ রেখা পাল, উদীচি চট্টগ্রাম জেলার সহকারী সাধারণ সম্পাদক জয় সেন, যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সহ-সভাপতি নাবিলা তানজিনা, ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক শুভ দেবনাথ, অনিন্দ্য শুভ্র প্রমূখ। সভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এডভোকেট খোদেজা বেগম।

বক্তারা বলেন, দেশের নারীরা বর্তমানে এক ভয়াবহ দুঃসময় পার করছে। নারী বিদ্বেষ, নারীর প্রতি সহিংসতা চরম আকার ধারণ করেছে। ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের পর এক উগ্র গোষ্ঠী গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে ভিন্নভাবে প্রবাহিত করতে নানা ধরনের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো নারীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো, নারীর উপর সহিংসতা ও আক্রমণ, যা গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মানবিক, শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে চেয়েছিলাম, তাকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। সমাজে নারীর অধিকার নিশ্চিত করা এবং সকল কাজে সমান সুযোগ ও সমান মজুরি ছাড়া দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করা যাবে না।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী নারীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে এবং একের পর এক আক্রমণের ঘটনা ঘটাচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে নারীদের হেনস্তা করার পরও সরকার হেনস্তাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এসব অপশক্তিকে দমন করতে না পারার দায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই নিতে হবে।

বক্তারা বলেন, বিদ্যমান শোষণ-নিপীড়ন, পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নারীসমাজকে সংগ্রাম করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র না থাকলে, শোষণ-নিপীড়ন বাড়তেই থাকে এবং এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী সমাজ। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পরেও বাংলাদেশে নারী নির্যাতন, খুন-ধর্ষণ ও শিশু হত্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই দেশের, কোনো না কোনো প্রান্তে নারী ও শিশুরা খুন-ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। বিদ্যমান আইনী কাঠামোতে নারীর সমঅধিকার চরমভাবে অবহেলিত। রাষ্ট্রে বিচারহীনতা ও জবাবদিহীতার অভাব, সর্বোপরি গণতন্ত্রহীনতার কারণে নারী-নির্যাতন-শোষণ ক্রমাগত বেড়েই চলে। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবস মানে নারী অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। নারী দিবসের শতবর্ষ পরে এসেও নারীর সামগ্রিক মুক্তি অর্জিত হয়নি। পুঁজিবাদ নারীকে পণ্যে পরিণত করে তার মুনাফা অর্জনের জন্য নারী অধস্তনতা, নারী নির্যাতন এবং বৈষম্যের সকল উপাদানকে টিকিয়ে রেখেছে। তাই কাজেই নারীমুক্তির মূল শত্রু পুঁজিবাদকে রুখে দেয়ার মধ্য দিয়ে নারীমুক্তির লড়াইকে বেগবান করতে হবে। নারীমুক্তির লড়াই একটি রাজনৈতিক লড়াই। নারীমুক্তির লড়াই এবং সমাজ পরিবর্তনের লড়াই একইসঙ্গে অগ্রসর করতে হবে।

সমাজে নারীর অধিকার নিশ্চিত করা এবং সকল কাজে সমান সুযোগ ও সমান মজুরি ছাড়া দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করা যাবে না। পাহাড়ে এবং সমতলে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে। নারীমুক্তির লড়াই একটি রাজনৈতিক লড়াই। নারীমুক্তির লড়াই এবং সমাজ পরিবর্তনের লড়াই একইসঙ্গে অগ্রসর করতে হবে।