এএমআর মোকাবিলায় অ্যান্টিবায়োটিকের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে: সিভাসু উপাচার্য

বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) সচেতনতা সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) আয়োজন করা হয়েছে নানা কর্মসূচি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের উদ্যোগে এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
বিশ্ব এএমআর সচেতনতা সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য হলো-‘Act Now: Protect Our Present, Secure Our Future’.

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বিষয়ে সচেতনতামূলক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় কর্মসূচি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে শোভাযাত্রায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের অংশগ্রহণকারীরা প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও স্লোগানের মাধ্যমে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ড্রাগের অপব্যবহার রোধ ও সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

এরপর সিভাসু অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় টেকনিক্যাল সেশন। টেকনিক্যাল সেশনে প্রেজেন্টেশন দেন এএমআর প্রজেক্ট অফিসার ড. পন্ডপান সুওয়ানথাদা (Dr. Pondpan Suwanthada), বাংলাদেশের ডাব্লিউওএএইচ ন্যাশনাল এএমআর এমপিটিএফ কনসালটেন্ট ডা. মো: হাবিবুর রহমান এবং সিভাসু’র ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো: রিদুয়ান পাশা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিভাসু’র পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রাশেদুল আলম।
টেকনিক্যাল সেশন শেষে অনুষ্ঠিত হয় প্যানেল আলোচনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মো: সোহেল আল ফারুকের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন একই বিভাগের প্রফেসর ড. এস. কে. এম. আজিজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. আদনান মান্নান, আইআইইউসি’র ফার্মাসি বিভাগের প্রধান কাজী আশফাক আহমেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের নিউরোলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মো: শওকত এমরান, এফডিআইএল, চট্টগ্রামের সিনিয়র সায়েন্টিক অফিসার ডা. নাবিল ফারাবি এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সিনিয়র সেলস ম্যানেজার ডা. মো: নুরুল ইসলাম শাওন। আলোচনায় বক্তারা এএমআর-কে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে নীতি নির্ধারণ, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, সঠিক প্রেসক্রিপশন ও জনসচেতনতার সমন্বিত প্রয়াস জোরদারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সিভাসু’র ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন প্রফেসর গৌতম কুমার দেবনাথ, ইউএসটিসি’র বেসিক মেডিকেল ও ফার্মাসিউটিক্যাল সাইন্স অনুষদের ডিন ড. অনিন্দ্য কুমার নাথ, সিভাসু’র পরিচালক (বহিরাঙ্গন কার্যক্রম) প্রফেসর ড. এ. কে. এম. সাইফুদ্দিন ও পরিচারক (ওয়ান হেলথ ইনস্টিটিউট) প্রফেসর ড. মো: আহসানুল হক এবং ইয়ন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোমিন উদ দৌলা। সভাপতিত্ব করেন সিভাসু’র ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. আমীর হোসেন সৈকত।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বড় হুমকি উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিভাসু’র উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ড্রাগের অপব্যবহার ও অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে এখনই দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিকের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, ভালো বায়োসিকিউরিটি প্র্যাকটিস, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং নীতিমালা অনুসরণ-এসব বিষয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করতে পারলেই আমরা এএমআর নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে পারবো। তিনি আরো বলেন, গবেষণাভিত্তিক জ্ঞান, দক্ষ জনবল এবং জনসচেতনতা-এই তিনটির সমন্বয় ছাড়া এএমআর মোকাবিলা সম্ভব নয়।’ সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স নিয়ন্ত্রণে সরকার, নীতিনির্ধারক, চিকিৎসক, ভেটেরিনারিয়ান, ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প ও সাধারণ জনগণ-সবার সমন্বিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এছাড়া, এএমআর বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে শিক্ষার্থীদের সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করতে সপ্তাহব্যাপী ভিডিও প্রতিযোগিতা, পোস্টার ও কার্টুন প্রদর্শনী, এক্সটেম্পোর বক্তৃতা এবং কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এসব প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের বাছাই করে পুরস্কৃত করা হয়।