বান্দরবানে অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষিকাকে মাশরুফাকে হেনস্তা, অপমান ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে প্রটেস্ট অ্যাগেইনস্ট হিজাবোফোবিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্বেগজনক একটি বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো খুবই নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য একটি ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো, যা আমাদের বোন, মাশরুফা সাঈদীর সঙ্গে ঘটেছে। যিনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বেসিক ট্রেনিং ফর প্রাইমারি টিচার্সের (বিটিপিটি) প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন।
বক্তারা বলেন, আমরা বলতে চাই এ ধরনের প্রশ্ন শুধু মাশরুফার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও ধর্মীয় অধিকারকেই ক্ষুণ্ণ করেনি বরং এটি নারী হিসেবে তার যে এজেন্সি, সেটির কালেক্টিভ অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করি আমরা।
মাশরুফা সাঈদী কেবল তার ধর্মীয় বিধান পালন করেছেন, যেটি তার মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের আইনেও এ ইস্যুতে তাকে বিন্দুমাত্র প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই।
আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি কেবল মাশরুফা সাঈদী বা তার মত অন্যান্য নারী শিক্ষিকার প্রতি অবিচার নয়, বরং এটি পুরো সমাজের জন্য একটি হুমকি, যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মানুষের অধিকারকে কাঠামোগত বিদ্বেষের শিকারে পরিণত করা হচ্ছে।
আমরা ‘Protest Against Hijabophobia in DU’ প্লাটফর্মের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি মাশরুফার সাথে ঘটা এ দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। আমরা চাই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং নারীর অধিকার রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হতে পারে, সে জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনানুগ ব্যবস্থারও দাবি জানাচ্ছি। প্রতিটি নারী যাতে তার পছন্দের পোশাক পরিধান করতে পারেন, ধর্মীয় বিশ্বাসে বাধা না পান, এবং সমাজে তার সমান মর্যাদা ও অধিকার রক্ষিত থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে প্রাইমারী টিচার্স ইনষ্টিটিউটের প্রাথমিক শিক্ষকদের চুড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা দিতে যান চিংকু পাড়া সরকারী প্রথামিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মাশরুফা সাঈদী তুন্না। কক্ষে প্রবেশের পর জেলা প্রথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জল হোসেন খান ওই শিক্ষিকা পর্দা নিয়ে জেরা করতে থাকেন।
একপর্যায়ের তার পরিহিত পর্দা নিয়ে ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ, অপ্রাসঙ্গিক ও লাঞ্ছনা শুরু করেন। তাছাড়া পর্দা দেয়ার কারণে অন্য স্কুলে এক শিক্ষিকাকে বহিস্কার করা হয়েছে বলে হুমকিও দেন তিনি।
আরো জানা গেছে, চিংকু পাড়া সরকারী প্রথামিক বিদ্যালয়টি অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। সেখানে প্রতিদিন ক্লাস করাতে পাহাড় ও ঝিরি ডিঙ্গিয়ে ক্লাস করাতে ছুটে যান এই শিক্ষিকা। তিনি একজন অন্তঃসত্তা নারী। সেই বিদ্যালয় থেকে বদলী নিতে তার স্বামীকে নিয়ে ছুটাছুটি করেছিলেন জেলা পরিষদ্ ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে।
এর আগে এই শিক্ষিকা প্রায় এক বছর মতন প্রাইমারী টিচার্স ইনষ্টিটিউটের (পিটি আই) প্রশিক্ষণাধীন ছিলেন। বদলী ও বিভিন্ন বিষয় শেষে মৌখিক পরীক্ষা দিতে যান। এসময় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কাছে এমন লাঞ্ছনার শিকার হন এই শিক্ষিকা।