
শায়খ ড.আব্দুর রহমান ইবন আব্দুল আজিজ আস-সুদাইস হলেন মক্কায় অবস্থিত সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মসজিদ আল্ হারামের ইমাম এবং ২০০৫ সালে নির্বাচিত বছরের সেরা ইসলামিক ব্যক্তিত্ব। তাঁর হৃদয়গ্রাহী কুরআন তেলাওয়াতের কারণে সারাবিশ্বে রয়েছে নাম-ডাক।
সুদাইস্’ছোট বেলায় কি একটা দুষ্টুমি করেছিলেন ফলে, তার মা তাঁর ওপর রেগে যান। রেগে গিয়ে বলেন- তুই বের হয়ে যা, গিয়ে হারামাইনের ‘ইমাম’ হ। আল্লাহ্ সুবহানাহু ও তায়ালা তাঁর আম্মার এই দোয়া কবুল করেছেন। তিনি কা’বা শরীফের ইমাম হওয়ার আগে অনেক ছোট-বড় মসজিদের ইমামতিও করেছেন। এই ছোট শিশু বড় হয়ে হলেন আল্লাহ্’র সেই সম্মানিত কাবা ঘরের প্রধান ইমাম। তাঁকে মাত্র ২৪ বছর বয়সে গ্র্যান্ড মসজিদের ইমাম হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তিনি এ বয়সেই ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে সৌদিতে খুতবা দেন। সুবহানআল্লাহ্। আমিন। আলহামদুলিল্লাহ্।
মা ছোট শিশু সুদাইস্’কে বসিয়ে রেখে কাবা ঘর তাওয়াফ করছিলেন, এক পর্যায়ে তার মা দেখলেন যেখানে সুদাইস্’কে বসে রেখেছিলেন সেখানে সুদাইস্ নেই, আশ্চর্যের বিষয় কাবা ঘরের যেখানে হাত দিয়ে দোয়া করলে কবুল হয়, সেjখানে হাত দিয়ে ছোট শিশু সুদাইস্’র চোখ দিয়ে পানি ঝরছে আর মুখ দিয়ে বিড়-বিড় করে কি যেন বলছে। তার মা তাকে সেখান থেকে নিয়ে এসে বসিয়ে রাখলেন এবং আল্লাহ্’র কাছে বললেন, হে আল্লাহ্, আমার ছোট ছেলে সুদাইস্ না বুঝে আপনার ঘর ধরে কি বলেছে জানি না। যদি কোন অপরাধ করে তাকে ক্ষমা করে দিন।পুরো নাম আব্দুর রহমান ইবন আব্দুল আজিজ আস্ সুদাইস ।
খুবই বিনয়ী। সব সময় সাধারণ মানুষদের কাছে থাকতে ও সাথে থাকতে ভালোবাসেন। তিনি এখন কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববীর প্রধান ইমাম। কিন্তু এখনও তিনি ক্লিনারদের সাথে বসে ইফতার করতে ও খাবার খেতে পছন্দ করেন। তিনি সব সময় হাস্যোজ্জ্বল থাকেন। সবার সাথে হাসি মুখে মন খুলে কথা বলেন। খুব বিনয়ের সাথে নরম ও মিষ্টিস্বরে কথা বলেন। তিনি হাল্কা কৌতুক করতে পছন্দ করেন। তবে, নামাযে দাঁড়ালেই কেঁদে ফেলেন।

১৯৬০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বর্তমান বয়স ৫৯ বছর।
মাত্র ১২ বছর বয়সেই সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্ত করে ফেলেন।
১৯৯৫ সালে মক্কার উম্মুল ক্বুরা বিশ্ববিদ্যালয়-এর শরিয়া ফ্যাকাল্টি থেকে পিএইচডি ( PhD ) ডিগ্রী অর্জন করেন।
রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয় এবং উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ( অধ্যাপক ) হিসেবে নিয়জিত ছিলেন।
উম্মুল ক্বুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর ছাড়াও তিনি শরীয়া বিচারপতিও ছিলেন। তাঁর এই গুরু দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি সব সময় শিক্ষকতার পেশাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে কাছে টেনে নিয়েছেন। সৌদি সরকারের অনুমোদিত জামেয়াতুল মা’রেফা আল-আলামিয়্যাহ্ এর (নলেজ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ) চ্যান্সেলর। যার শিক্ষকতায় আছেন সৌদি গ্রান্ড মুফতি, ধর্মমন্ত্রী সহ অনেক উচ্চ পদস্থ উলামায়ে কেরাম।
প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা হলো ৯টা এবং আরো ৬ টি গ্রন্থ ও গবেষণা পত্র প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।২৪ বছর বয়সে তাঁকে গ্র্যান্ড মসজিদের ইমাম হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তিনি এ বয়সেই ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে সৌদিতে খুতবা দেন।
২০১২ সালে তাঁকে সৌদির দুই গ্র্যান্ড মসজিদে ‘হেড অফ প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে নির্বাচন করা হয় এবং তাঁকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়।
সুদাইস তাঁর মধুর কণ্ঠ এবং অসাধারণ কুরআন পাঠের জন্য বেশ বিখ্যাত।
তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে থেকে ‘বিস্ফোরণ, আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং সন্ত্রাসবাদ’ সম্পর্কে বেশকিছু ভুল ভাঙ্গান। তিনি বলেন, এসব কিছু ইসলামের চোখে ঘৃণ্য অপরাধ।
ইমামতি করার পাশাপাশি পুরো মুসলিম উম্মাহর সমস্যার দিকে বিশেষ নজর রাখেন। এজন্য তাঁকে ২০০৫ সালে ‘সেরা ইসলামিক ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।
২০০৪ সালে লন্ডনে ১০ হাজার মানুষের সামনে তিনি একটি আন্তঃধর্মীয় খুতবা দেন। এসময়ে যুক্তরাজ্যের জাতিগত সমতা বিষয়ক মন্ত্রী এবং প্রধান রাব্বিও উপস্থিত ছিলেন।
একাধারে তিরিশ বছর ইমামমতি করছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল কেউ একটা লোকমা দিতে পারেনি।মক্কা এবং মদিনা দুইটি জাতীয় মসজিদের প্রধান ইমাম। একজন ডক্টর এবং কুরআনুল কারীমের গবেষক। একদিনে সব থেকে বেশি অর্থ ঊপার্জনকারী ( ইনকামকারী ) ব্যক্তি।
বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলোতে ৪৫ মিনিট/১ ঘন্টার সেমিনার করেন। সেমিনারে কুরআনের কোন একটি আয়াত নিয়ে গবেষণা মূলক তথ্য বহুল কথা বলেন।
ইমামদের সেবা কখনও অর্থ দিয়ে পরিশোধ করা না গেলেও তাঁদের কিছু হলেও অর্থ দিতে হয় মসজিদ কর্তৃপক্ষকে। অনেকের ধারণা, যেহেতু ইমাম আব্দুর রহমান আস্ সুদাইস বিশ্বের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মসজিদের ইমাম, সেহেতু তাঁর বেতনও অনেক হওয়া উচিত। তবে তা সঠিক নয়। সৌদি সরকার তাঁকে প্রতি মাসে একটি খালি চেক প্রদান করে, যেখানে তিনি তাঁর মন মত সংখ্যা বসাতে পারেন। এ হিসেবে বলা যায় তিনি নিজেই তাঁর বেতন নির্ধারণ করে থাকেন।











