মারেফাত ও কারামাতুল আউলিয়া: জসিম উদ্দিন মনছুরি

জসিম উদ্দিন মনছুরি
নবীদের আগমন চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলেও। ইসলাম প্রচার থেমে নেই। যুগে যুগে মহান রাব্বুল আলামিন পাঠিয়েছেন ইসলামের খেদমতে যুগশ্রেষ্ঠ মহা মনীষী। তাদের বদৌলতে জাতি পেয়েছেন ইসলামের মহান সুশিক্ষা। ইসলাম এখনো উজ্জিবীত আছে আউলিয়া কেরামের দ্বারা। তারা পৃথিবীর অভিজাত্য পরিহার করে মহান আল্লাহর দাসত্বকে গ্রহণ করেছেন। ফলে তারা আল্লাহ ভিন্ন আর কাউকে ভয় পাননা। তাদের পায়ের কাছে নত হয় মরণাস্ত্রধারী ইসলামের শত্রুরা। যুগের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা দু চোখ বন্ধ করে পুরা পৃথিবী দেখতে পান। তাদের অভিশাপে কেঁপে উঠে জালিমের শক্তিশালী তখত। তারা পৃথিবী থেকে অন্তরাল হলেও পরপারে জীবন্ত আত্মায় বেঁচে থাকে। তারা মহান রাব্বুল আলামিনের পরম বন্ধু। তাঁরা মহান শ্রষ্টা থেকে যা চান তাই পান। তাদের অলৌকিক কর্মে অসাধ্য সাধিত হয়। তাদের কাছে নত হয় হিংস্র পশু পর্যন্ত। তারা শরিয়তের পূর্ণ অনুসারি হয়ে মারেফাতের দীক্ষা দেন। ইসলামে প্রবেশের প্রথম ধাপ শরিয়ত হলেও তরিকত মারেফাত তসাউফ। সাধারণ মানুষ শরিয়তের মৌলিক বিষয়ের উর্ধ্বে যেতে পারেনা। আউলিয়া কেরাম শরিয়তকে অবলম্বন করে তরিকত হাকিকত মারেফাত ও তসাউফের জ্ঞানে অলৌকিত ক্ষমতার অধিকারী হন। তারা শুনতে পায় বাতাসের কথা পশু পাখির মনের অভিব্যক্তি। ইসা আ: এর অনুসারি সাত যুবক যাদেরকে আসহাবে কাহাফ বলা হয়। তারা ৩০৯ বছর একঘুমে কাটিয়ে দেন। কোন খাদ্যগ্রহণ ছাড়া যা অধুনিক বিজ্ঞানের বিস্ময়। সেটা শুধু মাত্র সম্ভব হয়েছিলো অলৌকিক জ্ঞানের বা তাসাউফের ইলমের কারণে। এর চেয়ে বড় কারামত আর কীবা হতে পারে। এটা যাদুমন্ত্র কিংবা যে কোন আবিস্কারকে হার মানাতে বাধ্য। তাদের ছিলো তাওরাতের ইলম এবং আল্লাহ তাদের দ্বারা অলৌকিকিত্ব প্রকাশ করিছেন। যা তারা নিজেরাও জানতোনা। অশিক্ষিত ও মূর্খ কিবা শরিয়তের জ্ঞানধারী ভিন্ন কেউ আউলিয়া হতে পারেনা কারণ রাসুলে করিম স: এর বাণী আবেদের সারা রাত ইবাদত অপেক্ষা আলেমের ঘুম উত্তম। তিনি আরো বলেছেন একজন আলেমের মর্যাদা এত উঁচু যে তোমাদের সাধারণ মানুষ অপেক্ষা আমার মর্যাদা যত উচু তদ্রুপ একজন আলেমের মর্যাদাও তাই। আলেমগণ আকাশের জ্যোতিস্বরুপ। তাদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয় পুরো সমাজ রাষ্ট্র।

কুতুবুল আউলিয়া খাজা গরিবে নেওয়াজ এক বদনা পানির ভিতর পুরা আনা সাগরের পানি নয়ে এসেছিলো। তাসাউফের কত বড় স্তরে পৌছালে এরকম দুর্লভ কাজ সম্পাদন করা সম্ভব তা আমাদের মত চর্ম চোখের দৃষ্টিতে বোধগম্য নয়।

হযরত শাহা জালাল ইয়ামনি রাজা গৌড়গোবিন্দের যাদু মন্ত্র সৈন্য বহরকে মাত্র তিনশত ষাট জন নিয়ে পারাভূত করেছেন। জায়নামাজে সুরমা নদী অতিক্রম করে মহা অলৌকিকত্বে সিলেট বিজয়ী করে ইসলাম প্রচার করে বাংলার মাটিকে ধন্য করেছেন।

চট্রগ্রামে হযরত শাহ আমানত রহ: আলাইহের কেরামতের কথা কারো অবিধিত নয়। তাছাড়া বায়েজিদ বোস্তামী রহ: আলাইহে সহ বার আউলিয়ার পূণ্য ভূমি আলেম আউলিয়া দ্বারা ইসলামের উর্বর ভূমি। তারা শরিয়তের পায়বন্ধ করে অর্জন করেছেন তরিকত মারেফাত ও তাসাউফের উঁচু স্তরের জ্ঞান। গাউছে মাইজভান্ডার আহমদ উল্লাহ ক: একটি ধারা সৃষ্টি করে গেছেন। যা মাইজভাণ্ডারী ধারা নামে পরিচিত। তাছাড়া মহিউদ্দিন আজমী মালেক শাহ রহ: এর অগনিত কারামত প্রকাশিত হয়েছে। গারাঙিয়ার বড় হুজুর ছোট হুজুর দ্বয়ের কারামত বেশুমার। আউলিয়ারা পৃথিবীর মুখাপেখী না হয়ে আল্লাহ উপর অবিচল আস্থায় তাসাউফের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে কেউ বাকা বিল্লাহ ফানাফিল্লাহ হয়ে পৃথিবী তাদের পায়ের তলায় ঘুরিয়েছেন।

তরিকতের বিভিন্ন শ্রেণি বিভাজন রয়েছে।
তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো
১. কাদেরিয়া ২.মোজাদ্দেদিয়া ৩.নকশে বন্দিয়া।

মারেফাতের জ্ঞান যে কেউ লাভ করতে পারেনা। আধ্যাত্মিক জ্ঞানে জ্ঞানান্বিত হয়ে তসাউফের জ্ঞানধারী সুফি সাধকরা তাফাউফ প্রাপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে পৃথিবীকে ইসলামের সুশিক্ষায় আলোকিত করেন।
আউলিয়াদের মাধ্যমে যে কারামত প্রকাশিত হয় তা চিরন্তন সত্য সুন্দর ও আল্লাহ প্রদত্ত্ব।