ঈদ উপলক্ষে বেশি বেশি মাংস খাওয়া বাংলাদেশের মানুষের আদি ঐতিহ্য। কিন্তু যারা সারা বছর কোষ্ঠ্যকাঠিন্য রোগে ভোগেন ও যারা কলোরেক্টাল রোগে আক্রান্ত তাদের অতিরিক্ত মাংস ও চর্বি খেলে দ্রুত মারাত্মক সমস্যায় পড়তে পারেন। তাই এসব রোগীদের কিছু নিয়ম করে কোরবানির ঈদে মাংস খাওয়া উচিত।
দেখা যায় গরুর মাংসে অনেক পুষ্টি থাকার পরেও অতিরিক্ত খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে।বিশেষ করে হজমে সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক, পেট ব্যথা এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হতে পারে। আবার যারা বিভিন্ন মলাশয়ের রোগে আক্রান্ত তাদের জন্য এটি ভয়ানক বিপদের কারণও বটে। যারা পাইলসে আক্রান্ত রোগী তাদের কী পরিমাণ মাংস খেতে হবে তা জেনে নিতে হবে।
ঈদে নিম্নে প্রদত্ত উপায়গুলো মেনে আপনি মাংস খেতে পারেন। তাহলে আপনি হঠাৎতই পরিপাকের রোগে আক্রান্ত থেকে বাঁচতে পারেন।
শারীরিক পরিস্থিতি, আপনার বয়স এবং স্বাস্থ্য বুঝে মাংস পরিমিত হারে খেতে হবে। এ সময় প্রতিবেলা মাংস না খাওয়াই ভালো। মনে রাখবেন কোরবানির মাংস বাড়িতে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেটা ভালোভাবে ধুয়ে, চর্বি আলাদা করে ও রক্ত পরিষ্কার করে রান্না করতে হবে।
মাংস ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এড়াতে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন, সম্ভব না হলে সঠিকভাবে মাংস জ্বাল দিয়ে রাখতে হবে এবং ৬ ঘণ্টা পরপর সেটা পুনরায় জ্বাল দিতে হবে। রান্নার আগেই মাংসের চর্বি কেটে আলাদা করে ফেলুন। এ ছাড়া মাংসের ভেতরে যে চর্বি আছে সেটা গলাতে গরম পানিতে মাংস সেদ্ধ করে নিতে পারেন।
রান্নার সময় মাংসের টুকরোগুলো ছোট করে কাটলে সেইসঙ্গে মাংসটি টক দই, লেবুর রস, সিরকা, পেঁপে বাটা দিয়ে মেখে রাখলে একদিকে যেমন কম সময়ে মাংস সেদ্ধ হয়, তেমনি চর্বির ক্ষতিকর প্রভাব অনেকটাই কাটানো যায়।
মাংস অল্প তেলে রান্না করতে হবে। তেলটি অলিভ অয়েল হলে সবচেয়ে ভালো। মাংস উচ্চতাপে ভালোভাবে সেদ্ধ করে খেতে হবে। সবচেয়ে ভালো আগুনে ঝলসে খেতে পারলে। এতে জীবাণুর সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে না। আধা সেদ্ধ মাংস বা স্টেক পরিহার করাই ভালো।
একদিনে কয়েক পদের রেড মিট রান্না না করে মাংসের পাশাপাশি প্রতি বেলায় যথেষ্ট সবজি অথবা সালাদ রাখুন। কেননা সবজিতে থাকা ফাইবার মাংসের চর্বি হজমে সাহায্য করে। এ ছাড়া সবজি থাকার কারণে মাংস খাওয়ার পরিমাণও কিছুটা কমানো যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে প্রচুর পরিমাণে পানি, সরবত, ফলের রস, ইসবগুলের ভুসি ইতাদি বেশি খাবেন। গরুর মাংসের মগজ, কলিজা সেইসঙ্গে ঝোল বা স্টকে সবচেয়ে বেশি চর্বি থাকে, তাই খাওয়ার সময় সেগুলো পরিমিত খাওয়াই ভালো।
মাংস খাওয়ার সময় সম্ভব হলে বেশি সালাদ খাবেন। মাংস খাওয়ার পর কোলা জাতীয় পানীয় না খাওয়াই ভালো। যদি ঈদে হঠাৎই মাংস খাওয়ার পর বা কিছুদিনের ভেতর কোষ্ঠকাঠিন্য মারাত্মক রূপ নেয় ও জটিলতা দেখা দেয় তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ঈদে সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ) কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বার: ১৯ গ্রিন রোড, এ. কে. কমপ্লেক্স, লিফট-৪, ঢাকা। ফোন: ০১৭১২৯৬৫০০৯