বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করতে প্রয়োজন অনলাইন জন্ম নিবন্ধন। এই অনলাইন জন্ম নিবন্ধন রোহিঙ্গাদের টাকার বিনিময় তৈরি করে দিচ্ছে একটি চক্র।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসে চক্রটি। চট্টগ্রাম থেকে নাম, বাবার নাম ও জন্ম তারিখ পাঠিয়ে দেওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে বিভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের জন্ম নিবন্ধন তৈরি করা হয়।
রোহিঙ্গাদের জাল জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করে দিচ্ছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা। এক লাখ ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের জন্ম নিবন্ধন ও এনআইডি পাইয়ে দিচ্ছে চক্রটি। মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) নগরের হালিশহর হাউজিং এস্টেট উচ্চ বিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও ৫ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটরসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) মহানগর গোয়েন্দা (পশ্চিম ও বন্দর) বিভাগ।
উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাংলাদেশি এনআইডি পেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের সংগ্রহ করেন আবছার ও শামসু মাস্টার। আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে নিয়ে আসেন চট্টগ্রামে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তার কাছে চট্টগ্রাম থেকে নাম, পিতা নাম ও জন্ম তারিখ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে ১৫ মিনিটের মধ্যে রোহিঙ্গাদের জাল জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জাল জন্ম নিবন্ধন সনদসমূহ অনলাইনে ভেরিফায়েড। এর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের ঢাকা অফিসের একজন জড়িত আছেন। গ্রেফতার আবছারের মোবাইলে ৫০০ রোহিঙ্গার জন্ম নিবন্ধন সনদের ছবি পাওয়া গেছে। কক্সবাজারে সাধারণত তারা এই কাজ করে না, কারণ সেখানে এনআইডি পেতে অনেক বেশি তথ্য দিতে হয় ও যাচাই-বাছাই করা হয়।
তিনি বলেন, জন্ম নিবন্ধন সনদ ও এনআইডি জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশি বানানোর জন্য শামসুর রহমান ও নুরুল আবছার রোহিঙ্গাদের কাছে খুবই বিশ্বস্ত। শামসু ও আবছারের সঙ্গে চট্টগ্রামে ইসির চলমান প্রকল্পে যুক্ত আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করা কয়েকজন কর্মচারীর যোগাযোগ আছে। তাদের একজন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নির্বাচন অফিসের সাদ্দাম। সাদ্দামের কথা মতো ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা কাজ করতেন। সাদ্দাম অনেক সময় রোহিঙ্গাদের ছবি ও আঙুলের ছাপ নিয়ে রাখতে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের বলতেন। ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের সঙ্গে কথামতো রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে এনআইডি তৈরি করতেন। রোহিঙ্গাদের জন্য প্রত্যেকে অপারেটর ৯ হাজার টাকা করে পেতেন।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (বন্দর) শামীম কবীর বলেন, নির্বাচন কমিশনের সরবরাহ করা এনআইডি কার্ড তৈরির ফরম-২ এবং জন্মনিবন্ধন ফরম ৬টি উদ্ধার করা হয়েছে। ৬টির মধ্যে একটা নিবন্ধন ফরম রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি। এগুলো সাধারণত যিনি তথ্য সংগ্রহ করেন তাদের কাছে থাকে। বাংলাদেশের যারা নাগরিক তাদের কাছেও এগুলো যাওয়ার সুযোগ নেই। এই ফরমগুলো আমরা যাচাই করেছি। এই ফরমগুলো চট্টগ্রাম জেলার নয়। আমরা তথ্য পেয়েছি, সাদ্দাম নামে একজন এই ফরম আবছারকে দিয়েছে।










