আমাদের নিজেকে সচেতন হতে হবে সবুজে ভরে দিতে হবে এই চট্টগ্রামকে

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন,-প্রকৃতিকে ভালোবাসতে না পারলে প্রকৃতি আমাদের সাথে বৈরী আচরণ করবে। সারা পৃথিবীতে প্রকৃতি বিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে, এর করণ আমরাই প্রকৃতি ধ্বংস করছি। অনাদিকাল থেকে বৃক্ষের সাথে মানুষ ও প্রকৃতির নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যামন। বৃক্ষ যেমন প্রকৃতিকে আলিঙ্গন করে রেখেছে তেমনি মানুষকে করেছে ঋনী। বাংলার ষড়ঋতুর সাথে বৃক্ষের রয়েছে আত্মিক সম্পর্ক যা আমাদের আগমনি বার্তা স্মরণ করিয়ে দেয়। আজ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে তিলোত্তমা চট্টগ্রামের সহযোগিতায় আয়োজিত নগরীর প্যারেড ময়দানে সাত দিনব্যাপী নান্দনিক চট্টগ্রাম মেয়র এওয়ার্ড ও সবুজমেলা-২০২২’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন-চসিক পরিবেশ ষ্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, কাউন্সিলর মো. শহিদুল আলম, নুর মোস্তফা টিনু, হাসান মুরাদ বিপ্লব, শাহেদ ইকবাল বাবু, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, স্থাপতি আশিক ইমরান, তিলোত্তমা চট্টগ্রামের কর্ণধার সাহেলা আবেদীন, নার্সারী মালিক সমিতির পক্ষে হাজী জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
মেয়র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,-একসময় চট্টগ্রাম ছিল সবুজের সমারোহ। সাগার-পাহাড়-নদী বেষ্টিত এই নগরীর সৌন্দর্য্য দেখার জন্য অনেক পর্যটক আসতো এখানে। আমরা সেই পাহাড়গুলো কেটে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করেছি। তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদী বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ, এই কর্ণফুলী নদীতে ৮ হতে ১০ ফুট পলিথিনের স্তুপ জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর অচল হওয়ার সম্মুখিন। এখনেই আমাদের সচেতন হতে হবে। যাতে পরিবেশ রক্ষা করা যায়। ভূ-মন্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে যা পুরো বিশ্ব সমাজকে ভাবিয়ে তুলেছে। বৃক্ষ নিধন থেকে বিরত থেকে অধিক বৃক্ষ রোপনের উপর গুরত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে জনসচেতনতা গড়ে তোলার উপর জোর দেন এবং আমাদের নিজেকে সচেতন হতে হবে ও সবুজে ভরে দিতে হবে এই নগরীকে।
মেয়র আরো বলেন-মানব জীবনে বৃক্ষের অবদান অপরিসীম। বৃক্ষের সাথে মানুষের রয়েছে নৈকট্য আত্মিক সম্পর্ক। বৃক্ষ মানুষকে ফল-মুল, খাদ্য, ঔষধ, জ্বালানী কাঠ, আসবাবপত্র, অক্সিজেন ও ছায়া দেয়। বৃক্ষ ভূ-মন্ডলকে উষ্ণতা থেকে রক্ষা করে বন্যা, খরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভূমিক্ষয় ইত্যাদি প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তিনি বলেন- বৃক্ষের যে অসামান্য অবদান ও গুণাবলী রয়েছে তা আমরা চিন্তা করিনা, গুরুত্ব দেইনা এবং পাহাড়ের বৃক্ষ সম্পদ এখন আমরা হারিয়ে ফেলেছি। গাছ না থাকার ফলে পাহাড়ও বিলিন হয়ে যাচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম বলেছেন-সবুজ মেলা একটি ধারবাহিক প্রক্রিয়া। এই নগরীর পরিবেশ রক্ষায় ও সবুজায়নের লক্ষ্যে বিগত সময়ে প্রাক্তান মেয়র এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময় থেকে নগরীতে বৃক্ষমেলা হয়ে আসছে। সেটাই এখন সবুজ মেলা। তিনি বলেন, আমাদের ঐতিহ্যময় গাছগুলো এখন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ প্রজন্মের কাছে এখন নতুন নামে নতুন গাছ। এক সময়ে ঐতিহ্যময় গাছে ফল ধরত, আর সেই ফল খেতে গাছে পাখি আসত। পাখির কিচির মিচির শব্দে বাংলার সেই শাশ্বত ঐতিয্যের পরিবেশ মানুষকে মুগ্ধ করত। তিনি চট্টগ্রাম নগরীকে পরিবেশ বান্ধব ও সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়াও ছাদ বাগানের টবে যাতে পানি জমে না থাকে সেব্যাপারে সকলকে সচেতন হওয়ারও আহ্বান জানান কারণ এতে এডিস মশার বংশ বিস্তার করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও অতিথি বৃন্দ বেলুন উড়িয়ে সবুজ মেলার উদ্বোধন করেন। মেলায় ৬০টি নার্সারী, জৈবসারসহ বিভিন্ন স্টল রয়েছে। এ সবুজ মেলায় সপ্তহব্যাপী অনুষ্ঠানে থাকছে ৯-১৩ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬ টায় সবুজায়নে আলোচনা, ১১-১৩ অক্টোবর সকাল ১০ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত ছাদ বাগান প্রশিক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, ১৩ অক্টোবর বিকাল ৩টা চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ১০-১৪ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ১৪ অক্টোবর বিকাল ৫টায় পুরষ্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।