মিয়ানমারের দূতের মুখে কুলুপ

এক সপ্তাহের ব্যবধানে সীমান্তে দ্বিতীয় দফায় মর্টারশেল ছোড়ার প্রতিবাদে ঢাকাস্থ মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। সোমবার রমনাস্থ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা’য় মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিছুক্ষণ অপেক্ষায় রাখার পর বিকাল সাড়ে ৩টা নাগাদ রাষ্ট্রদূতের মুখোমুখি হন মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির। অতিথি ভবনের একটি কক্ষে বৈঠকে রাষ্ট্রদূতের কাছে রোববার নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রু বাজার এলাকায় মিয়ানমার থেকে নিক্ষেপ করা মর্টারশেলের ঘটনাসহ নানা বিষয়ে জানতে চান মহাপরিচালক। এ সময় তিনি অত্যন্ত কড়া ভাষায় (মৌখিক) সর্বশেষ ঘটনার প্রতিবাদ জানান এবং রাষ্ট্রদূতের হাতে একটি প্রতিবাদপত্র (প্রটেস্ট নোট) ধরিয়ে দেন। বৈঠক সূত্র বলছে, রাষ্ট্রদূত মহাপরিচালকের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। তবে তিনি ঘটনার বিস্তারিত জানেন না বলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ঢাকার বক্তব্য মিয়ানমার সরকারের নজরে আনা ছাড়াও সীমান্তের ঘটনাগুলো গ্রাউন্ড রিয়েলিটি জানার চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। একটি সূত্র জানায়, আধঘণ্টার বেশি সময় স্থায়ী হওয়া ওই বৈঠকে সীমান্তে বারবার মর্টারশেল ছোড়া হচ্ছে কেন এবং রাখাইনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির বদলে কেন এমন প্রোভোকেটিভ কর্মকাণ্ড? এমন নানা প্রশ্নে মুখে কুলুপ ছিল মিয়ানমার দূতের।

এদিকে রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে তলব বিষয়ে সেগুনবাগিচায় অপেক্ষমাণ গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বলেন, আজ আমরা রাষ্ট্রদূতকে ডেকেছি।

একটি কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে রোববারের ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছি। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেটা আমরা স্পষ্ট করেই বলেছি। সর্বশেষ গত ২১শে আগস্ট সকালে রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি তলব করা হয়েছিল। ২০শে আগস্ট সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর আচমকা হেলিকপ্টার টহল, বাংলাদেশের আকাশসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং রাতে সীমান্তের কাছাকাছি বিস্ফোরিত হওয়া মর্টারশেলের অংশবিশেষ বাংলাদেশে পড়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে তাকে জরুরি ডেকে আনা হয়েছে। রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের প্রতি সেদিন ঢাকার গভীর উদ্বেগ ব্যক্ত করা ছাড়াও এসব কর্মকাণ্ডের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির। একই সঙ্গে তার হাতে একটি প্রতিবাদপত্রও তুলে দেয়া হয়েছিল।
সেদিন বলা হয়েছিল নিকট প্রতিবেশী হিসেবে মিয়ানমারের এসব কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই বন্ধুত্বের নিদর্শন হতে পারে না। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সব কর্মকাণ্ডের কঠোর নিন্দা জানায়। সুপ্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে আরও দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে। সীমান্তে দফায় দফায় মর্টারশেল ছোড়ার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে মিয়ানমারকে সতর্ক করার কথা আগেই জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রু বাজার এলাকায় রোববার মিয়ানমারের ছোড়া মর্টারশেলের বিষয়ে জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্র সচিব গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, বাংলাদেশ সীমান্তে মর্টারশেল পড়ার বিষয়টি দুর্ঘটনা নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।