পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যায় নিহত প্রায় ১০০০, আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন

প্রতিদিনই পাকিস্তানের নতুন নতুন জেলা ও শহর বন্যাক্রান্ত হচ্ছে। সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা শুক্রবারও দেশটিতে নতুন করে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বন্যায়। এর ফলে দেশটিতে বন্যায় নিহতের সংখ্যা দাড়ালো ৯৩৭ জনে।যে কোনো সময় এই সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ।

টিআরটি ওয়ার্ল্ডের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বন্যায় হাজার হাজার মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের উদ্ধারকর্মীরা তাদের জন্য তেমন কিছু করতে পারছেন না। গত জুন মাস থেকে টানা বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। নিহতের মধ্যে তিন শতাধিক শিশু রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সবথেকে বেশি মানুষ মারা গেছে সিন্ধু প্রদেশে। সেখানে মারা গেছে ১৬ জন। এরপরই রয়েছে বেলুচিস্তান (১৩ জন)।

এছাড়া, গিলগিট-বাল্টিস্তানেও ভয়াবহ বন্যায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছে।
টুইটারে এক পোস্টে প্রধানমন্ত্রী শরীফ বলেন, চলমান বর্ষণের কারণে দেশজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। যারা এই বিপদে আমাদের পাশে এসেছেন তাদের ধন্যবাদ। একসঙ্গে আমরা আবার আগের অবস্থানে ফিরে যাব। এরপর তিনি বন্যার সর্বশেষ আপডেট দিতে বিদেশী কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন। ২০১০ সালে পাকিস্তানে বন্যায় ১৭০০ মানুষ নিহত হয়েছিল। এবার সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। শেহবাজ শরীফ জলবায়ু পরিবর্তনকেই এই ভয়াবহতার জন্য দায়ী করেছেন।

দুর্যোগকবলিত এলাকার ৩ লাখ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বৃহস্পতিবার একে জলবায়ু সংকট উল্লেখ করে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জাতীয় জরুরি’ অবস্থা ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। বেলুচিস্তান ও সিন্ধু প্রদেশের অবস্থা খুবই নাজুক। পানিতে তলিয়ে গেছে হেক্টরের পর হেক্টর জমি। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ জুন থেকে শুরু হওয়া বন্যায় শুধু সিন্ধু প্রদেশেই তিন শতাধিক মানুষ মারা গেছেন। বেলুচিস্তানে মারা গেছেন ২৩৪ জন। খাইবার পাখতুনখোয়ায় ১৮৫ এবং পাঞ্জাবে ১৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজাদ জম্মু-কাশ্মিরে বন্যার কবলে ৩৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় গিলগিট-বালতিস্তান থেকেও মৃত্যুর খবর আসছে।

বৃহস্পতিবার বিবৃতিতে পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব দেশের বন্যা পরিস্থিতিকে জাতীয় জরুরি অবস্থা হিসেবে উল্লেখ করেন। সরকার উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানান তিনি। অস্বাভিক বৃষ্টিপাতে পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় ভাসছে। এনডিএমের তথ্যমতে, পাকিস্তানে চলতি আগস্টে ১৬৬.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪১ শতাংশ। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সিন্ধু ও বেলুচিস্তানে মৌসুমি বন্যা ৭৮৪ এবং ৪৯৬ শতাংশ বেড়েছে। সিন্ধুর ২৩টি জেলাকে দুর্যোগ আক্রান্ত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। অব্যাহত বন্যায় ৩ কোটি মানুষ আশ্রয়হীন, তাদের মধ্যে হাজারো মানুষ খাবারের কষ্টে ভুগছে। আশ্রয়হীনদের সহায়তায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।

পাকিস্তানি টেলিভিশনে প্রচারিত এক ফুটেজে দেখা গেছে বন্যার স্রোতে সোয়াত নদীর তীরে অবস্থিত নিউ হানিমুন হোটেল ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে এ সময় সেখানে কোনো পর্যটক ছিল না। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে ২ লাখ ২০ হাজার বাড়ি ধ্বংস করেছে বন্যা। ৫ লাখের বেশি বাড়ি ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ১৫০টিরও বেশি সেতু ভেসে গেছে। অনেকগুলো রাস্তা মুছে গেছে।

এমন অবস্থায় পাকিস্তানকে ৩ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছে জাতিসংঘ। এছাড়া বিশ্বব্যাংক ৩৫০ মিলিয়ন ডলার, বিশ্ব ফুড প্রোগ্রাম ১১০ মিলিয়ন ডলার, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ২০ মিলিয়ন ডলার, ইউকে এইড ৪০ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য ঘোষণা করেছে।