বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন না, বাঙালিরা তাকে হত্যা করবে

শেখ পরিবারে প্রবীণ সদস্য শেখ কবির হোসেন বলেছেন, বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবে, বঙ্গবন্ধু কোনো দিন এটা চিন্তা করেননি। তিনি এটা কখনো বিশ্বাসই করতেন না।

সোমবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

শেখ কবির হোসেন বলেন, এই শোক দিবস আমার জন্য খুব কষ্টের। সেই কালো রাত্রিকে ভুলতে পারি না। সারাজীবনই এই শোক দিবস পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের সময় আমি সাংবাদিকদের বলেছিলাম, এই বিচার হলেও স্বস্তি পাবো না। কেন না ট্রিগার রাইফেলের বিচার হইছে। এর পেছনে যে ছিল, তাদের বিচার হয়নি। মুশতাক, জিয়া, চাষির বিচার হয়নি। যারা পরিকল্পনায় যারা ছিল, তাদের বিচার হতে হবে। আমি মনে করি মৃত ব্যক্তির বিচার না করা গেলে, আইন পরিবর্তন করা দরকার। আর বিচার না করা গেলে অন্তত বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিত। আমি এই তদন্ত রিপোর্টটা দেখে যেতে চাই।

শেখ কবির হোসেন বলেন, রক্তের চেয়ে বন্ধুত্বের দাম বেশি। বঙ্গবন্ধু সেটা প্রমাণ করেছিলেন। তার ভালোবাসার ডাকেই সাড়া দিয়েছিলেন জনগণ। আর এই ভালোবাসা দিয়েই তিনি স্বাধীনতা এনেছেন।

তিনি বলেন, বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবে, বঙ্গবন্ধু কোনো দিন এটা চিন্তা করেননি। তিনি এটা বিশ্বাস করতেন না। সে কারণে তার বাড়ির সামনে দিয়ে সবাই চলতেন। উনি গেট থেকে বেরিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলতেন। তিনি অনেক সময় গাড়ি থামিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। আমরা তাকে এ বিষয়ে সাবধান করতাম। তবে তিনি বলতেন, আমাকে বাঙালিরা মেরে ফেলবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। বাঙালিরা আমাকে কোনোদিন মারবে না। তবে বিদেশিরা আমাকে মারতে পারে। তিনি বলেন, ১৫ আগস্টে আমি বক্তৃতা দিতে পারি না। ইমোশোনাল হয়ে যাই।

সভাপতির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আজ বাঙালির পরম শোকের দিন। এই দিনে জাতির জনকের পরিবারের সকলকেই হত্যা করা হয়।

তিনি বলেন, যতদিন থাকবো, ঘাতকদের বিদেশ থেকে এনে রায় কার্যকরের চেষ্টা চালিয়ে যাবো।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরে দেশের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন। শাসনতন্ত্র তৈরিতে বঙ্গবন্ধুর মাত্র লেগেছিল মাত্র ৯ মাস। দুই মাসের মধ্যে বন্ধুপ্রতীম ভারতীয় সেনারা চলে যান। এসব বঙ্গবন্ধুর ডায়নামিক লিডারশিপের জন্যই হয়েছে।
সাড়ে তিন বছর ১২৬ টি দেশের স্বীকৃতি আদায় করেছেন। জাতিসংঘের সদস্য পদ অর্জন করেছেন। এসব চাট্টিখানি কথা নয়।

ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশের জাতিসংঘের সদস্য পদে প্রথমে চীন ভেটো দিয়েছিল। তবে সেই সময়ে আমাদের কয়লা ভারত দিত। চীন ওই বছর আমাদের কয়লা দিতে রাজি হয়। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, চীন থেকে কিনলে ব্যবসা হবে। সম্পর্ক হবে। আর সম্পর্ক ভালো হলে সব হবে। এর পরের বছরেই চীন জাতিসংঘের সদস্য পদে আমাদের আর বিরোধিতা করেনি।

ড. মোমেন বলেন, দেশে বিদেশে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।

লেখক ও অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু যে কাজ করেছিলেন, তা অবিশ্বাস্য। সেটা অগ্রাহ্য করার মতো নয়।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরে নারীদের শিক্ষার কথা বলতেন। স্বাধীনতার পর দেশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
এখন বাংলাদেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে শেখ হাসিনা এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। আজ এই শোক হোক আমাদের শক্তি। আর শক্তি থেকে হোক জাগরণ।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, জাতীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খান ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।