সাকিবদের ছাড়া সুযোগ দেখছেন সোহান

টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমদুল্লাহ রিয়াদকে বিশ্রাম দিয়ে আসন্ন জিম্বাবুয়ে সিরিজে নেতৃত্ব দেয়া হয়েছে উইকেটরক্ষক-ব্যাটার নুরুল হাসান হোসানকে। অনেকে মনে করছেন বিশ্রামের নামে রিয়াদকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ছুটিতে থাকায় দলে নেই সাকিব আল হাসানও। অবসরের ঘোষণা দিয়ে সরে গেছেন তামিম ইকবাল। মুশফিকুর রহীমকেও বিশ্রামে রাখা হয়েছে। সিনিয়র এই চার ক্রিকেটারকে ছাড়া জিম্বাবুয়ে সফরে যাওয়ার আগে নিজের লক্ষ্যের কথা জানালেন নতুন অধিনায়ক সোহান। তিনি মনে করেন সিনিয়র ক্রিকেটাররা না থাকায় প্রমাণের সুযোগ আছে তরুণদের। তার কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-

বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক- এটা ভাবতে কেমন লাগছে?
আলহামদুলিল্লাহ, এটা অবশ্যই গর্বের ব্যাপার। সামনে যে চ্যালেঞ্জ আছে তা নিয়ে চিন্তা করছি। খুব বেশি রোমাঞ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই।

দল হিসেবে এবং নিজের সেরাটা দেয়াই মূল লক্ষ্য।

নিয়মিত ম্যাচ খেলতে না পারলেও দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আছেন। আপনার সেই অভিজ্ঞতা কীভাবে কাজে লাগাতে চান?
ঘরোয়া ক্রিকেটে আমি যখন অধিনায়কত্ব করেছি, সবসময় একটা চিন্তা ছিল- দল হিসেবে যেন খেলতে পারি। জিম্বাবুয়েতেও যেন দল হিসেবে খেলতে পারি। দলের পরিবেশও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সবাই তো পারফর্ম করবে না। দলের সদস্যরা যেন একজনের সাফল্য অন্যরা উপভোগ করি। এই সংস্কৃতি এবং দল হিসেবে খেলা গুরুত্বপূর্ণ।

টি-টোয়েন্টি উন্নতির পরিকল্পনা?
টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে ওয়ানডের তুলনায় আমরা পিছিয়ে আছি। উন্নতি করা জরুরি, আমরা সেই চেষ্টাও করছি। ফলাফলের চেয়ে প্রক্রিয়া ঠিক রাখা বেশি জরুরি। এই সিরিজে দল হিসেবে খেলাই বেশি প্রয়োজন।

আপনি নিজেও ফর্মে নেই, এটি আপনার জন্য চিন্তার কারণ হবে কি?
আমি যদি আমার জীবন নিয়ে কথা বলি, ক্রিকেট ক্যারিয়ার এবং সবকিছু নিয়ে… প্রত্যাশা ও রোমাঞ্চ অনেক কম। আমি নিজে কঠোর পরিশ্রম করবো, সৎ থেকে প্রক্রিয়া অনুসরণ করবো। ফলাফল, অতীত, ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি চিন্তা করি না। চাপ থেকে এখন আমি দূরে থাকার চেষ্টা করি। অনেক দিন ধরেই এটা করতে পারছি। গত ১-২ বছর ধরে আমি অতীত, ভবিষ্যত নিয়ে ভাবি না। এখন যা করছি সৎভাবে তা করে যেতে চাই।

টপ অর্ডার ও আফিফকে নিয়ে আপনার ভাবনা…
টিম ম্যানেজমেন্টের সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং অর্ডার সেট করে কিছু করতে পারবেন না। একেক সময় একেক পরিস্থিতি থাকে। পরিস্থিতির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।

সিনিয়রদের ছাড়া আপনার পথ চলা কতটা কঠিন হবে?
বাংলাদেশের ক্রিকেটে সিনিয়রদের অবদান অল্প কথায় শেষ করতে পারবো না। তবে সব কিছু একটা প্রক্রিয়ার ভেতর আছে। এটা আমাদের জন্যও সুযোগ। তারা বাংলাদেশ দলকে একটা জায়গায় নিয়ে এসেছেন। আমরা যারা জুনিয়র আছি বা এখন খেলছি তাদের দায়িত্ব হলো পরের ধাপে নিয়ে যাওয়া। এটা আমাদের সবার জন্যই সুযোগ। আমরা যেন দল হয়ে খেলতে পারি। এই চেষ্টাই করবো। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে। এটা যাতে আরো ভালো করতে পারি। আরো ভালো কীভাবে করতে পারি, ঘাটতি পূরণ করতে পারি। সবার সঙ্গেই কথা হয়েছে। রিয়াদ ভাই, সাকিব ভাই, তামিম ভাই, মুশফিক ভাই; মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে। পরামর্শ আসলে স্বাভাবিকভাবে যেভাবে কথা হয়, এইটাই। খুব বেশি ওরকম কিছু না। সবকিছুই সিম্পল জিনিসটা তাদের কাছ থেকে, অনেক বছর একসঙ্গে খেলেছি। যেটা বললাম তাদের যে অভিজ্ঞতা আছে। সবার অধীনেই খেলা হয়েছে, সবকিছু মিলিয়ে আসলে জিনিসটা নিজের ১০০ ভাগ দেয়ার চেষ্টা করবো।

কতটা উত্তেজনা কাজ করছে আপনার মধ্যে?
এমনি যেটা বললাম, সবার সঙ্গে কথা হয়েছে। নরমাল যে কথাগুলো হয়, এগুলোই। বিশেষ কিছু না। নরমাল যেভাবে কথা হয়, ওরকমই। আর আমার কাছে মনে হয় যেটা, জিনিসটা নিয়ে বেশি চিন্তা করার কিছু নেই। এটা অবশ্যই গর্বের বিষয়। কিন্তু উত্তেজনার কিছু নাই। অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ, সেটা উপভোগ করতে চাই।

টি-টোয়েন্টিতে আপনার রান না পাওয়া প্রভাব ফেলবে কিনা?
রানের সংখ্যা থেকে প্রভাবটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ১৫-২০ রান দেখতে অনেক ছোট লাগতে পারে। কিন্তু এটা খেলার ওপর কতটা প্রভাব ফেলছে এটাই আমার চিন্তা। খেলোয়াড় হিসেবে আমার লক্ষ্য থাকে দল আমার কাছে কী চাচ্ছে সেটা পূরণ করা। এক ম্যাচে ১৫-২০ রান করে পরের ম্যাচে রান না করলে কথা উঠবে রান করেনি। আমি যে জায়গায় ব্যাট করি এখান থেকে ৫০-১০০ করার সুযোগ কম থাকে। দলের চাহিদা অনুযায়ী প্রভাব রাখার চেষ্টা করবো।

পাওয়ার হিটিং নিয়ে কী পরিকল্পনা?
আমার কাছে ভয়হীন ক্রিকেট গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই চেষ্টা করবো এটা যেন করতে পারি। আগে থেকে ফলাফল নিয়ে ভাবলে প্রক্রিয়া ঠিক থাকে না। প্রক্রিয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভয়হীন থাকলে ইতিবাচক জিনিস আসবে।

এই সিরিজের পর আপনি অধিনায়ক থাকবেন না, সাকিব আসতে পারে এটা কীভাবে দেখছেন?
যেহেতু এই সিরিজের দায়িত্বে আছি, আমার ভাবনার জায়গা এই তিনটা ম্যাচই। টি-টোয়েন্টিতে জয়ের নিশ্চয়তা নেই। তবে অবশ্যই লক্ষ্য থাকবে প্রক্রিয়া ফলো করে নিজেদের শতভাগ দেয়া। আপাতত তো জানি এই তিনটা ম্যাচের জন্য আছি। এই তিনটা ম্যাচ নিয়েই পরিকল্পনা করছি। অবশ্যই চ্যালেঞ্জ থাকবে এবং চ্যালেঞ্জ উপভোগ করবো।