মুন্সীগঞ্জে কিংসের শিরোপা উৎসব

পেশাদার ফুটবলে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের রেকর্ড ছিল শুধু ঢাকা আবাহনীর। গতকাল মুন্সীগঞ্জ স্টেডিয়ামে সেই গর্বের রেকর্ডে ভাগ বসালো বসুন্ধরা কিংস। সাইফ স্পোর্টিংকে ২-০ গোলে হারিয়ে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই টানা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন হলো ক্লাবটি। কিংসের শিরোপা জয়ের ম্যাচে গোল করেছেন দুই লোকাল ফুটবলার মতিন মিয়া ও বিপলু হোসেন।
গতকালের ম্যাচের আগ পর্যন্ত ১৯ ম্যাচে কিংসের পয়েন্ট ছিল ৪৮। সমান ম্যাচে দ্বিতীয়স্থানে থাকা আবাহনীর পয়েন্ট ৪১। তৃতীয় স্থানে থাকলেও কিংসের চেয়ে ১৪ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল সাইফ। ট্রফি জিততে তাই মাত্র তিন পয়েন্টের দরকার ছিল কিংসের। কাল দলের সেরা তারকা রবসন রোবিনহোকে ছাড়া একাদশ গড়েও সেই তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে বসুন্ধরা কিংস। তবে সাইফ স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে তাদের মাঠে এই ম্যাচটি জেতা মোটেও সহজ ছিল না কিংসের।

কিছুদিন আগে এই মাঠেই আবাহনীকে হারিয়েছে সাইফ। সেটা মাথায় নিয়েই কাল খেলতে শুরু করা কিংস প্রথম গোল পায় ম্যাচের ২৭ মিনিটে। মিগেইল ফিগেরার কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণ এক সুযোগ নষ্ট করেন নুহা মারং। সাইফের ডিফেন্ডার সবুজ হোসেনের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন মিগেল, তার বাড়ানো পাস থেকে নুহার শট আটকে দেন সাইফের গোলরক্ষক পাপ্পু হোসেন। তবে পরের মিনিটেই গোলের দেখা পায় কিংস। মিগেলের নিচু পাস থেকে বল পেয়ে দেখেশুনে মতিনের ডান পায়ের শটে জাল খুঁজে নেন। ম্যাচের ৮০ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে কিংসের তৃতীয় শিরোপা নিশ্চিত করেন মতিনের বদলি হিসেবে মাঠে নামা বিপলু হোসেন।
২০১৮ ফুটবল মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগে আবির্ভাব ঘটে কিংসের। আগমনেই শিরোপা জেতে ক্লাবটি। পরের মৌসুমেও শিরোপা ওঠে তাদের ঘরে। মাঝের এক আসর করোনার জন্য পরিত্যক্ত হয়। করোনার বিরতির পর চলতি মৌসুমে আবাহনীর কাছে হেরে স্বাধীনতা কাপের শিরোপা হারায় কিংস। কমলাপুরের টার্ফ নিয়ে আপত্তি তুলে ফেডারেশন কাপ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয় বসুন্ধরা কিংস। তবে ফেডারেশন কাপে না খেললেও লীগে স্বমহিমায় অবতীর্ণ হয় ক্লাবটি। লীগে নবাগত স্বাধীনতার কাছে হার দিয়ে শুরু করা ক্লাবটি ২০তম রাউন্ডে এসে ১৬ জয়ে লীগ শিরোপা নিশ্চিত হয় কিংসের। এটি লীগ ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপ মিলিয়ে চার বছরে কিংসের ষষ্ঠ শিরোপা।
মুন্সীগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান সাইফের হোম ভেন্যু হলেও শিরোপা নিশ্চিতের ম্যাচে স্টেডিয়ামটি দখলে ছিল কিংস সমর্থকদের। স্টেডিয়ামের দুই পাশের গ্যালারি দখলে নিয়েছিল লাল জার্সিধারীরা। দর্শকদের হতাশ করেনি কিংসের ফুটবলাররা। এদিন ম্যাচের শুরু থেকে আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে বসুন্ধরা কিংস। তবে ম্যাচে প্রথম সুযোগটি এসেছিলো সাইফের। ১৬তম মিনিটে এমেরি বাইসেঙ্গের ফ্রিকিক মানব দেওয়ালে লাগার পর মেরাজের সাইড ভলি ঠেকিয়ে দেন জিকো, এমফন উদোর ফিরতি শটও ফিরিয়ে দেন কিংসের এই গোলরক্ষক। ম্যাচের ২৩তম মিনিটে সাইফের রক্ষণ কাঁপিয়ে দেন মিগেল ফিগেইরা। সাইফের বক্সের ভেতর থেকে তৌহিদুল সবুজের ব্যাকপাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সের উপর থেকে মিগেলের নেয়া বাম পায়ের শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। ৩৪ মিনিটে সুযোগ এসেছিল কিংসের সামনে। ডান প্রান্ত থেকে তৌহিদুল সবুজের লম্বা ক্রস বক্সের ভেতর নুহা মারং বুক দিয়ে নামিয়ে দিলে তালগোল পাকিয়ে শটই নিতে পারেননি মতিন মিয়া। ৩৭ মিনিটে ১০ জনের দলে পরিণত হয় কিংস। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন লেফট ব্যাক ইয়াসিন আরাফাত। এর আগে নবম মিনিটে প্রথম কার্ড দেখেন। দুইবারই রহিম উদ্দিনকে ফাউল করেন ইয়াসিন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কিংসের রক্ষণে চাপ বাড়ায় সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। কিন্তু তারিক কাজী, রিমন হোসেন ও বিশ্বনাথ ঘোষ তা সামাল দেন ঠাণ্ডা মাথায়। এ সময় তাদের যোগ্য সহায়তা করেন আনিসুর রহমান জিকু। ৭০-৮০ মিনিটের এই দশ মিনিটে সাইফের কমপক্ষে দুটি প্রচেষ্টা নস্যাৎ করেন এই গোলরক্ষক। উল্টো খেলার ধারার বিপরীতে গোল হজম করে সাইফ। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে নুহা মারাংয়ের সহায়তায় দলের দ্বিতীয় গোলটি করেন বিপলু হোসেন। এটি লীগে কিংসের টানা তৃতীয় শিরোপা। এখন পর্যন্ত পেশাদার লীগে সর্বাধিক শিরোপার মালিক ঢাকা আবাহনী। চলতি লীগে ১৯ ম্যাচের ৪১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলটির শিরোপার সংখ্যা ছয়। শেখ জামাল তিনটি ও শেখ রাসেল জিতে একটি করে শিরোপা।