পাকবাহিনীর নিষ্ঠুর সব পরিকল্পনা ধূলোয় মিশে যায়

২ ডিসেম্বর ১৯৭১। মুক্তির মিছিলে উত্তাল ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের পুরো বাংলাদেশ। গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী সামনে এগিয়ে চলে। অপ্রতিরোধ্য বাঙালির বিজয়ের পথে পাকিস্তানি বাহিনীর নিষ্ঠুর সব পরিকল্পনা ধূলোয় মিশে যায়।

দেশের বিভিন্ন জনপদে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে থাকে। আর অবরুদ্ধ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয় একের পর এক মুক্তাঞ্চল। পাকিস্তানি বাহিনী পঞ্চগড়ে রিংয়ের আকারে প্রথম ও দ্বিতীয় ডিফেন্স লাইন তৈরি করে। মুজিব বাহিনীর যোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সহায়তায় গভীর রাতে পঞ্চগড় আক্রমণ করলে তারা পঞ্চগড় ছেড়ে চলে যায়।
একইদিন চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনী উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার বেশিরভাগ এলাকা তাদের দখলে আনতে সক্ষম হয়। পঞ্চগড়, ভুরুঙ্গামারী, কমলাপুর, বনতারা, শমশেরনগর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড সংঘর্ষে হনাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্যহয়।

রাতে আকস্মিক বোমা বিস্ফোরণে ঢাকার রামপুরা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র, চট্টগ্রামের পাঁচটি বিদ্যুৎ সাব স্টেশন ও দুটি পেট্রোল পাম্প বিধ্বস্ত হয়। আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এলেও হানাদার বাহিনী তাদের বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠে মুক্তিবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনী পুনরায় তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে তিন দিক থেকে শত্রঘাটিতে আক্রমণ করলে হানাদার বাহিনী আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যায়।
বাংলাজুড়ে যখন মুক্তিবাহিনীর আক্রমনে পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেসের কর্মিসভায় বলেন, সময় বদলেছে, তিন-চার হাজার মাইল দূর থেকে বর্ণের প্রাধান্য দিয়ে (পাকিস্তান) তাদের ইচ্ছামতো হুকুমনামা জানাবেন, তা মেনে নেয়া যায় না। আজ আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য দেশের সর্বোচ্চ প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করব। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।