সুলতানের খাওয়ার আপেল, মাল্টা

আচরণে বেশ শান্তশিষ্ট। চোখ দুটো কালো, সুন্দর। রং সাদা। তার আদুরে নাম ‘সুলতান’। মোটা রশি দিয়ে সুলতানকে বেঁধে রাখা হয়েছে। কারণ, একবার ছাড়া পেলে আটকানো মুশকিল। সুলতান হলো হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড়ের নাম। ষাঁড়টির মালিক রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের হরিচরণলস্কর বালাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন। গত তিন বছর ধরে ষাঁড়টিকে লালন-পালন করছেন তিনি। এবারের কোরবানির ঈদে ষাঁড়টিকে বিক্রি করতে চান। বিক্রেতার দাবি, ষাঁড়টির ওজন ৩৭ মণ। এ জন্য ১২ লাখ টাকা দাম চাচ্ছেন তিনি।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে সুলতানকে দেখতে প্রথম আলোর এ প্রতিবেদকরা রিচরণলস্কর বালাপাড়া গ্রামে নুরুল আমিনের বাড়িতে যান। মানাস নদীর ধারে তাঁর বাড়ি। সেখানে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরে টিনের ছাউনি দেওয়া একটি ঘরে সুলতানকে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার আচরণ ধীরস্থির। নিরিবিলি পরিবেশে সেই চালাঘরে আলো–বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থা আছে। সুলতানের চোখ দুটো আকর্ষণীয়। মাথার সামনের ভাগ সাদা, দুই পাশে কালো রং। ঘাড়ের কাছে থেকে লেজ পর্যন্ত সাদা। বাম দিকে পেট ও পিঠের দুটি স্থানে ছোট্ট কালো দুটি দাগ থাকায় সুলতান সহজে সবার নজর কাড়ে।

ষাঁড়টির সম্পর্কে নুরুল আমিন বলেন, প্রায় সাত বছর আগে অতি কষ্টে জমানো টাকায় ছোট একটি দেশি জাতের গরু কিনে নাম রাখেন ‘রাজা বাবু’। প্রায় সাড়ে চার বছর পালনের পর রাজা বাবুর পেটে জন্ম হয় এই ষাঁড়টির। আদর করে এর নাম রাখেন সুলতান। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুলতানের খাবারের চাহিদা বাড়িতে থাকে। এ জন্য রাজা বাবুকে বিক্রি করে দেন নুরুল আমিন। সেই টাকা দিয়ে খাবার কিনে খাইয়েছেন সুলতানকে।

নুরুল আমিন জানান, তাঁর বসতভিটা ছাড়া কোনো আবাদি জমি নেই। অন্যের বাড়িতে তিনিসহ তাঁর দুই ছেলে দিনমজুরি করেন। নিজেদের পরিবারের চেয়েও এই ষাঁড়ের খাবারের পেছনে তাঁকে বেশি খরচ করতে হয়। সুলতানের উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুট, দৈর্ঘ্য সাড়ে ৮ ফুট। বর্তমানে ওজন প্রায় ৩৭ মণ। প্রতিদিন কাঁচা ঘাস, খড়, গমের ভুসি, ধানের কুঁড়া, ভুট্টা ও খুদের ভাত খাওয়াতে বর্তমানে খরচ হচ্ছে প্রায় ৮০০ টাকা। এর পাশাপাশি মাঝেমধ্যে সুলতানকে মাল্টা, আপেল এবং কলাও খাওয়ানো হয়।

সুলতানকে এবার কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বিক্রি করতে চান। এ জন্য দাম চাচ্ছেন ১২ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরা ১০ লাখ টাকা দাম করেছেন। সুলতানকে দেখতে অনেকেই তাঁর বাড়িতে আসছেন প্রতিদিনই।

বদরগঞ্জ উপজেলা উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ষাঁড়টির ওজন ৩৭ মণ বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিঞ্চিতা রহমান বলেন, ‘দিনমজুর নুরুল আমিনের ঘরে সুলতান নামে একটি বিশাল ষাঁড় থাকার খবর জেনেছি। অনেক কষ্ট করে তিনি ষাঁড়টিকে লালন-পালন করেছেন। এত বড় ষাঁড় উপজেলায় আর আছে বলে জানা নেই।’