৩ লক্ষাধিক মানুষ প্রায় ১৬ দিন পানিবন্দি

বন্যা আমাদের গিলে খাচ্ছে। বানের পানি না কমে তা দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিচ্ছে। তাই প্রতিনিয়তই বাড়ছে চরম দুর্ভোগ। দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকির তীরে কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার বন্যাকবলিতরা তাদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন। হাওরপাড়ের কৃষি, মৎস্য ও শ্রমজীবী ৩ লক্ষাধিক মানুষ প্রায় ১৬ দিন পানিবন্দি থাকায় কর্মহীন। নেই আয় রোজগার। চারদিকে শুধু থই থই পানির সুরে তাদের রাতদিন একাকার। ঘরে খাবার নেই। থাকার জায়গা নেই। ক্ষেত কৃষি, রাস্তাঘাট, স্যানিটেশন ব্যবস্থা আর ঘরবাড়ি সবই এখন বানের পানির দখলে।

ছোট বড় অনেক দোকানপাঠও বন্ধ। হঠাৎ এমন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সব হারিয়ে তারা নিঃস্ব। এমন পরিস্থিতিতে পরিবার পরিজন নিয়ে খাওয়া, বাঁচার চিন্তায় চরম অসহায়। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। মানুষের মতো খাদ্য আর বাসস্থান সংকটে পড়েছে গৃহপালিত সব পশুও। জেলায় ১২৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ২১ হাজার মানুষ আর ২৭৩১টি গবাদিপশু। বন্যাদুর্গতরা জানালেন এখন আফাল (বড় ঢেউ) আর বলনের (ঘূর্ণয়মান ঢেউ) তোড়ে রাক্ষুসে বন্যা কেড়ে নিতে চায় তাদের ঘরবাড়ি। নানা কায়দা-কৌশলে আফাল ও বলনের তোড় থেকে ঘরবাড়ি রক্ষার চলছে প্রচেষ্টা। কিন্তু বিশাল শক্তির কাছে তারা পরাস্ত হচ্ছেন। এবারকার বন্যার পানিতে প্রচুর পরিমাণ জোক এসেছে। আর পানিতে রয়েছে চর্মরোগের জীবাণুও। কিছু কিছু এলাকায় শরীরের কোনো অংশে বানের পানি লাগলেই চাকারমত লাল দাগ হয়ে চুলকাতে থাকে। রয়েছে সাপের ভয়। জেলায় ইতিমধ্যে বিষাক্ত সাপের দংশনে মারা গেছেন ২ জন। গুরুতর আহত হয়েছেন অনেকেই। সরকারি তরফে এ পর্যন্ত যে সহায়তা এসেছে তা পর্যাপ্ত না হওয়ায় তা সবার ভাগ্যে জোটেনি। হাকালুকি হাওর তীরবর্তী ভূকশিমইল, কাদিপুর, ব্রাহ্মণবাজার, বরমচাল, ভাটেরা, জায়ফরনগর, পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন ও কুশিয়ারার তীরবর্তী রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে গেলে কথা হয় বন্যাকবলিত লোকজনের সঙ্গে। তারা কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাদের দুর্ভোগের কথা জানান। আশ্রয় কেন্দ্র ও বাড়িতে যারা আছেন তারা বন্যার কারণে অনেকটাই গৃহবন্ধী। ঘর থেকে বের হয়ে পায়ে হাঁটার পথ নেই। সবই গিলে খেয়েছে পানি। তারা বলেন সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি মৃত্যুপথ যাত্রী হাকালুকি হাওরকে বাঁচানোর। হাকালুকি হাওর ও কুশিয়ারা নদীসহ জেলার নদী ও হাওরগুলোর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও নাব্যহ্রাস হয়ে যাওয়ায় তা দ্রুত খননের প্রয়োজন। তারা বললেন, এই বন্যা ও জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে হাওর ও নদী বাঁচান। নদী ও হাওর বাঁচলে বাঁচবো আমরা। আমরা যৎসামান্য ত্রাণ চাই না। আমরা কর্ম করে খেতে চাই। হাওর ও নদী বাঁচাতে এখনই উদ্যোগী হন। তা না হলে বারবার এমন দুর্যোগ পোহাতে হবে।