ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ৩৫ রান, বাংলাদেশের ৭ উইকেট

অ্যান্টিগা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও হতাশা উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটাররা! সাকিব সোহানের ১২৩ রানের লড়াকু জুটিও সেই হতাশা কাটাতে পারেনি সফরকারীদের। তবুও মন্দের ভালো এই দু’জনের কল্যানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একটা টার্গেট দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। ৮৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে খালেদ আহমেদের দ্রুত ৩ উইকেটের চাপ সামলে নিয়ে জয়ের সুবাস নিয়েই তৃতীয় দিন শেষ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৮৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করা স্বাগতিকদের ৭ উইকেট বাকি রেখে প্রয়োজন মাত্র ৩৫ রান।

মাত্র ৮৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৯ রানেই স্বাগতিকরা টপ অর্ডার তিন ব্যাটারকে হারায়। খালেদ আহমেদ পর পর দুই ওভারে তুলে নেন তিনটি উইকেট। কিন্তু স্কোরবোর্ডে যথেস্ট রান না থাকায় বোলারদের এই লড়াইটা বৃথাই গেছে বলা চলে! খালেদ তার প্রথম ওভারেই তুলে নেন প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করা অধিনায়ক ক্রেগ ব্র্যাথওয়েটকে (১)। চার বল পরই খালেদের দ্বিতীয় শিকার রেমন রেইফার (২)। পরের ওভারের পঞ্চম বলে খালেদ তুলে নেন প্রথম ইনিংসে ৩৩ রান করা এনক্রুমা বনারকে (০)। দিনের বাকি সময়টুকু অবশ্য অনায়াসেই পেরিয়ে গেছেন জন ক্যাম্পবেল (২৮) ও জার্মেইন ব্ল্যাকউড (১৭)। জয় থেকে মাত্র ৩৫ রান দূরে স্বাগতিকরা, হাতে আছে ৭ উইকেট।

অথচ স্কোরবোর্ডে আরও কিছু রান থাকলে অ্যান্টিগা টেস্ট হতে পারতো বাংলাদেশের!
১১২ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিন শুরু করা বাংলাদেশ সকালের সেশনে হারায় ৪ উইকেট—নাজমুল হোসেন, মুমিনুল হক, লিটন দাসের পর ফেরেন মাহমুদুল হাসান জয়ও। কাইল মেয়ার্স ও কেমার রোচ ভাগ করে নেন ওই ৪টি উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসের চেয়ে ৪৭ রানে পিছিয়ে থেকে মধ্যাহ্নবিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

তবে দ্বিতীয় সেশন কাটে উইকেটশূন্য। ওই সেশনে ওভারে ৩.৫০-এর বেশি হারে ওঠে ৯৫ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রিভিউ না নেওয়ার সৌজন্যে জীবন পাওয়া সাকিব শেষ পর্যন্ত পান ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় ও টানা তৃতীয় অর্ধশতক। ভাগ্যের ছোঁয়া পাওয়া নুরুলও পরের সেশনে পান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক।

সাকিব-নুরুল হাসান সোহান জুটি প্রথমে পেরোয় ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটিকে। এরপর ম্যাচে দুই দলের মধ্যেই সর্বোচ্চ জুটি হয় তাদের। অবশ্য চা-বিরতির পর দ্বিতীয় নতুন বল পেয়েই জ্বলে ওঠেন কেমার রোচ। দ্বিতীয় নতুন বলে রোচের দ্বিতীয় ওভারে তুলে মারতে গিয়ে কাভারে ক্রেগ ব্রাফেটের হাতে ধরা পড়েন ৯৯ বলে ৬৩ রান করা সাকিব।

সাকিবের উইকেটে ভাঙে সোহানের সঙ্গে তাঁর ২২১ বলে ১২৩ রানের জুটি। এরপর বাংলাদেশ খুব বেশি দূরে এগোতে পারেনি। রোচের অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ১৪৭ বলে ৬৪ রান করে ফেরেন সোহান, ক্যারিয়ারে এটি যৌথ সর্বোচ্চ ইনিংস তাঁর। আলজারি জোসেফকে বড় শটের চেষ্টায় বোল্ড হন একটি ছয় মারা মোস্তাফিজ।

ইবাদত হোসেনকে বোল্ড করে ইনিংসে পঞ্চম উইকেটটি নেন রোচ, ক্যারিয়ারে এ পেসার এ নিয়ে দশম বার ইনিংসে ৫ বা এর বেশি উইকেট নিলেন। এ উইকেট দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের মধ্যে টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় মাইকেল হোল্ডিংয়ের সঙ্গে যৌথভাবে ছয়েও উঠে এলেন রোচ।

চতুর্থ ইনিংসে এ মাঠে এখন পর্যন্ত রান তাড়া করতে নেমে হারের ঘটনা আছে একটিই। ২০১৯ সালে ভারতের দেওয়া ৪১৯ রান তাড়া করতে নেমে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে গিয়েছিল ১০০ রানেই। এ ছাড়া বাকি ৭ ম্যাচের দুইটিতে জিতেছে রান তাড়া করা দল, ড্র হয়েছে বাকি ৫টি। সেখানে এ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লক্ষ্য ৮৪ রান, দিনে বাকি ছিল কমপক্ষে ১৭ ওভার। ফল সম্ভব মনে হলে বাড়তি সময় খেলার সুযোগও আছে। তবে সমীকরণটা বদলে দিয়েছিলেন খালেদ। নিজের প্রথম ১১ বলের মধ্যে ৩ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বেশ চাপে ফেলেন বাংলাদেশ পেসার। তবে খালেদের সে চাপ অন্য প্রান্তে ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। মোস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে ৭ রান দিয়েছেন, তবে নতুন বলে তাঁর কাটার সে ভাবে হুমকি তৈরি করতে পারেনি। ইবাদত হোসেনের আগেই মেহেদী হাসান মিরাজকে আনেন সাকিব, তবে প্রথম ওভারেই প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সেরা বোলার দেন ১০ রান। পরের ওভার অবশ্য মেডেন করেন এ অফ স্পিনার। এরপর সাকিব নিজেই বোলিংয়ে আসেন, তবে আর সাফল্য পায়নি বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ক্যাম্পবেল ও ব্ল্যাকউড অবিচ্ছিন্ন ৪০ রান করে।