গ্রামীণ ব্যাংকের এমডিকে নিয়ে তদন্ত বন্ধ না করায় পদ্মা সেতুর জন্য প্রতিশ্রুত টাকা দেয়নি বিশ্বব্যাংক

গ্রামীণ ব্যাংক এবং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিষয়ে অনুসন্ধান বন্ধ করা না হলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর জন্য যে অর্থ দিতে চেয়েছিল, তা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে বার বার চাপ এসেছিল বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি।

বুধবার(৮ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ ও দেশের বৃহৎ এ অবকাঠামোর উদ্বোধনের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনা প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে দীপু মনি এ তথ্য জানান।

এ সময় অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।

ড. ইউনূসের নাম উল্লেখ না করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আইনের কাছে তিনি বেআইনি কাজ করায় হেরে গিয়ে এতটাই ক্ষুব্ধ হন যে শেখ হাসিনার সরকার, ব্যক্তি শেখ হাসিনা, তার পরিবার, তার বোন শেখ রেহানা এমন কী সরকার পক্ষের যিনি আইনজীবী ছিলেন, তার প্রতিও প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে ওঠেন। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, কিছু মহলের প্রতিহিংসা পরায়ণতা এখনো প্রশমিত হয়নি। সেই আইনজীবীর স্ত্রী হিসেবে তাদের প্রতিহিংসার আগুনে আমাকে এখনো পুড়তে হয়। জনমনে প্রশ্ন আছে, সীমিত আয়ের একজন পাবলিক সার্ভেন্ট হয়েও ড. ইউনূস বিশাল অংকের অর্থ ক্লিনটনকে অনুদান হিসেবে দিলেন কীভাবে? এ রকম আরও বহু প্রশ্ন রয়েছে। সেই সব প্রশ্নের জবাবও নিশ্চয়ই একদিন পাওয়া যাবে।

ডা. দীপু মনি বলেন, পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ শেখ হাসিনার সরকার খতিয়ে দেখার লক্ষ্যে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। এ উদ্যোগটি সরকার তার কর্তব্য পালনের অংশ হিসেবে করেছিল। কোনো বিশেষ প্রতিষ্ঠান বা কোনো ব্যক্তি বিশেষের প্রতি কোনো বিরাগ কিংবা বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে করেনি। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম হতে পারত। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম যে দেশগুলো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বেশ বড় গলায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, উচ্চকণ্ঠ থাকে, যারা আমাদের মতো উন্নয়নের জন্য সংগ্রামরত দেশগুলোকে প্রতিনিয়ত স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার ছবক দেয়, তাদের নেতৃস্থানীয় একটি রাষ্ট্রের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত এবং তাদের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রায় উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে আসেন। স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য নয়, আসেন স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে অনুসন্ধানের যে কাজ আমরা হাতে নিয়েছিলাম, তা বন্ধ করে দিতে। দুর্নীতির অনুসন্ধানকে উৎসাহিত করতে নয়। দুর্নীতির অনুসন্ধানকে বরং বন্ধ করে দিতে তারা চাপ প্রয়োগ করতে আসেন। স্বাভাবিকভাবেই এ রকম কোনো অযাচিত অন্যায় চাপের কাছে শেখ হাসিনা সরকার নতি স্বীকার করেনি, করতে পারে না।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের জানিয়ে দিই, আমাদের আইনুযায়ী আমরা যে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অধিকার রাখি এবং অনুসন্ধানে তথ্য-প্রমাণ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই রাষ্ট্রদূতসহ সেই দেশের অ্যাসেসটেন্ট সেক্রেটারি অব স্টেট আমার সঙ্গে দেখা করেন। আমি তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম এবং ফোন করেও তারা বার বার চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন এবং কখনো প্রচ্ছন্নভাবে, কখনো বা স্পষ্টভাবে যে গ্রামীণ ব্যাংক এবং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিষয়ে অনুসন্ধান বন্ধ করতে হবে। না হলে পদ্মা সেতুর জন্য প্রতিশ্রুত অর্থ দেবে না বিশ্বব্যাংক।

এরপরই সব বায়বীয় অভিযোগ উত্থাপন করা হতে থাকে সরকারের বিরুদ্ধে এবং দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। তারা তাদের কথা রেখেছিলেন, কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, কোনো দাতা সহযোগীকে না জানিয়ে আকস্মিক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করার যে সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাংক নিয়েছিল, সেটি তারা বন্ধ করে দেন। অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু শেখ হাসিনার সততা, দেশপ্রেম দৃঢ়তা, সাহস, প্রজ্ঞা আর দূরদর্শিতার কাছে পরাজিত হয়েছে সব ষড়যন্ত্র। আজ সমস্ত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে সব অসত্য আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আমাদের পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। স্বপ্ন আজ সত্যি। এ পদ্মা সেতু বাঙালির আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। বাঙালির সাহস আর দৃঢ়তার প্রতীক। এ বিরল সম্মান-মর্যাদায় বাঙালিকে অভিষিক্ত করায় গভীরতম কৃতজ্ঞতা, নিরন্তর ভালোবাসা আর অসীম আকাশসম শ্রদ্ধা জানাই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে।

বিএনপির সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার বক্তব্য প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সমালোচনা সব সময় ভালো। স্বাস্থ্যের পক্ষে অবশ্যই ভালো। তিনি মিষ্টির কথা বলেছেন, অতিরিক্ত মিষ্টি স্বাস্থ্যের পক্ষে কোথাও কোথাও ক্ষতিকর। তেতো কিন্তু স্বাস্থ্যের পক্ষে সব সময় ভালো। তবে তা যদি হয় সত্য তেতো। আমরা করলা খাই, আমরা নীম খাই, সেগুলো স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। কারণ তার মধ্যে অসত্য নেই। কিন্তু যে তেতো ষোল আনাই অসত্যে মোড়া, তা কোনো দিন কারো স্বাস্থ্যের পক্ষে লাভজনক হয়নি, হতে পারে না। তিনি (রুমিন) বলেছেন, প্রদীপের নিচে অন্ধকার। সত্যি কথাই, প্রদীপের নিচে অন্ধকার। কারণ তাদের আমলে আমরা প্রদীপের নিচে অন্ধকার কাকে বলে আমরা দেখেছি। একজন প্রধানমন্ত্রী, দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা যার হাতে থাকে, যিনি দেশের রক্ষক, তিনি রক্ষক হয়ে এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছিলেন। একে বলে প্রদীপের নিচে অন্ধকার। তিনি বলেছেন, টাকা নয়-ছয়ের কথা, এ শব্দগুলো আসলে তাদেরই মানায়, যারা নয়-ছয়ে বিশেষজ্ঞ।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাংক ফিরে এসেছিল, আমরা কেন তাদের ঋণ নিলাম না? আত্মসম্মান-আত্মমর্যাদা এ বিষয়গুলো বিএনপি-জামায়াত বুঝবে, এটা আমরা প্রত্যাশা করি না। যারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। যারা উন্নয়নে বিশ্বাস করে না। যারা যুদ্ধাপরাধীদের দোসর, তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে জাতিকে অপমান করে। যারা দুর্নীতিতে দেশকে বার বার চ্যাম্পিয়ন করে। যারা গ্রেনেড মেরে, বোমা মেরে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। যারা দেশকে পরমুখাপেক্ষি রাখাকেই শ্রেয় মনে করে। যারা বিদেশিদের কাছে ধর্না দেওয়াকেই শ্রেয় মনে করে। দেশের মানুষের ওপর যাদের কোনো আস্থা নেই, তাদের জীবনের কোথাও অন্ততপক্ষে আত্মমর্যাদা বা আত্মবিশ্বাস এ শব্দগুলোর অস্তিত্ব থাকতে পারে না এবং নেই।