চন্দ্রঘোনা ইউপি নির্বাচনঃ প্রার্থীদের প্রচারনায় সরগরম এলাকা

কাপ্তাই প্রতিনিধিঃ

শিল্প এলাকা হিসাবে পরিচিত কাপ্তাই উপজেলাধীন ১নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ জুন। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সরগরম হচ্ছে প্রাথীদের প্রচার-প্রচারনা। প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে এই ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানায় কাপ্তাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৭ মে’ প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই ২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ২১ জন সাধারণ সদস্য এবং ১৩ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী সকাল থেকে রাত অবধি বিরামহীন প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইতিমধ্যে ২ জন ইউপি সদস্য প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এই ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ১শ’ ৬০ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ হাজার ৪শ’ ৮৮ জন এবং মহিলা ভোটার ৪ হাজার ৬ শ’ ৭২ জন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের টিকেট পেয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেন মিলন। ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়েই শুরু করা এই সাবেক ছাত্রনেতা কাপ্তাই উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্বপালন শেষে কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং পরে সাংগঠনিক সম্পাদক হয়। এলাকার বিভিন্ন ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে এলাকায় তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। বিগত সময় রাজনৈতিক কোন দলাদলিতে তিনি নিজেকে জড়াননি। ইতিমধ্যে তার দলের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ সর্বশক্তি দিয়ে নৌকার পক্ষে মাঠে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে আসছে। গত মঙ্গলবার কেপিএমের কয়লার ডিপু এলাকায় গণসংযোগ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আক্তার হোসেন মিলন। এসময় তিনি জানান, আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। যেখানে নির্বাচনী প্রচারনায় যাচ্ছি, সেখানেই দলমত নির্বিশেষে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন দেখতে পাচ্ছি। এছাড়া বিগত সময় দেশের মাটি ও মানুষের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কাপ্তাই উপজেলাসহ সারাদেশে যে উন্নয়ন করে চলছে, তাতে দেশ এগিয়ে গেছে বহুদূর। উন্নয়নের এইধারা অব্যাহত রাখতে জনগণ নৌকা প্রতীককেই বেছে নিবে। এদিকে, তার একমাত্র প্রতিদ্বন্ধী আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান বিপ্লব মারমা। ইতিমধ্যে তিনি একবার এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। বুধবার ৯ নং ওয়ার্ডে গনসংযোগ শেষে মিশন এলাকায় আলাপকালে তিনি জানান, চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করাকালীন সময় আমি কখনো কারো সাথে খারাপ আচরণ করেনি। ইউনিয়ন পরিষদে যখন যে কেউ কোন কাজে গেছেন, আমি সে কাজ গুলো হাসিমুখে করে দিয়েছি। চেয়ারম্যান হিসাবে আমি দায়িত্ব পালন করার সময় এলাকার মসজিদ, মন্দির থেকে শুরু করে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করেছি। সবসময় জনগণের সাথে ছিলাম। ইউনিয়ন পরিষদের সেবা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছি। কেউ বলতে পারবেনা, আমি কারো সাথে খারাপ আচরন করেছি। যদি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, ভোটে কোন কারচুপি না হয়, তাহলে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো। এলাকার ভোটারগণ মনে করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী দু’জনই হেভিওয়েট প্রার্থী। এলাকায় ক্নিন ইমেজের প্রার্থী হিসাবেও দু’জনের বেশ সুনাম রয়েছে। একারণে নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ২ জনের মধ্যে দ্বিমুখী নির্বাচনী লড়াই হবে বলে তাদের ধারনা। এলাকার ভোটারগণ উৎসবমুখর ও জনগণের অংশ গ্রহণমূলক একটি নির্বাচন চায়। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার জানান, প্রথমবারের মতো কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। তাই আগামী ১৩ জুন এই ইউনিয়নে মগ (পরীক্ষামূলক) ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এতে কিভাবে ভোটাররা ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দিবেন, সে বিষয়ে ভোটারদের ধারনা দেওয়া হবে। তিনি জানান, একটি স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলে প্রমাণ সাপেক্ষে সাথে সাথে ভোট গ্রহন স্থগিতের নির্দেশনা আছে নির্বাচন কমিশনের হাতে। নির্বাচন কর্মকর্তা আরো জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ সদস্য ও আনসার সদস্য মোতায়নের পাশাপাশি জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোতায়েন থাকবে। এছাড়া ইতিমধ্যে আচরণবিধি প্রতিপালনকারী নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান মাঠে কাজ করছেন। কাপ্তাই সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওশন আরা রব ও কাপ্তাই থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর হতে চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পুলিশ বাহিনী সবসময় নির্বাচন কমিশন ও উপজেলা প্রশাসনকে সহায়তা করে আসছে। নির্বাচনে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে পুলিশ তা কঠোর হস্তে দমন করবে।