বঙ্গোপসাগরে নতুন প্রজাতির তিমির সন্ধান

নাদিম পারভেজ জানান, বিশ্বে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ৯০টিরও বেশি প্রজাতির সেটেশানদের মধ্যে বামন কোগিয়া তিমি একটি। সেটেশানরা আমাদের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণী। তারা সারাজীবন পানিতে কাটায় এবং বাতাস থেকে শ্বাস নেয়। তবে অন্যান্য সেটেশানদের মতো এরা শিকারকে চিবিয়ে না খেয়ে সম্পূর্ণ গিলে ফেলে।

বঙ্গোপসাগরে মিলেছে নতুন প্রজাতির তিমির সন্ধান। হাঙরের মতো দেখতে কিন্তু বেশিরভাগ ডলফিনের চেয়ে আকারে কিছুটা ছোট এ প্রজাতিটি পাওয়া গেছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে । এটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট আকারের তিমি বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

সম্প্রতি কুয়াকাটা ডলফিন সংরক্ষণ কমিটির এক সদস্য সমুদ্রসৈকতের কাছে আটকে পড়া একটি বামন কোগিয়া প্রজাতির তিমিটি দেখতে পান। পরে এ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পরে। ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশে প্রথম এ প্রজাতির তিমি শনাক্ত করা হয়। বিজ্ঞানীদের কাছে “কোগিয়া সিমা” নামে পরিচিত এই প্রাণীটি শিকারী তিমিদের একটি প্রজাতি। এটিকে জীবিত অবস্থায় পাওয়া গেলেও প্রায় দুই ঘণ্টা পর মারা যায়।

ওয়ার্ল্ড ফিশ বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “গত ২২ মে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লেম্বুরচর–সংলগ্ন আন্ধারমানিক নদের মোহনায় একটি প্রাণী ভেসে এসেছিল। মোহনায় ভেসে আসার দুই ঘণ্টা পর প্রাণীটি মারা যায়। শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল, প্রাণীটি ডলফিন। তবে পরে জানা যায়, এটি বিশেষ প্রজাতির সামুদ্রিক তিমি।”

“তিমিটি গর্ভবতী ছিল। পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় এটি ‌‌বামন কোগিয়া তিমি। এ প্রজাতির তিমির বসতি মূলত গভীর সমুদ্রে। বঙ্গোপসাগরে এর আগে কখনোই এ প্রজাতির তিমি দেখা যায়নি”- বলেন সাগরিকা স্মৃতি।

বাংলাদেশ ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (ডব্লিউসিএস) সদস্য নাদিম পারভেজ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “কুয়াকাটা ডলফিন সংরক্ষণ কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা তিমিটির বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে। তিমিটি দেখতে প্রায় হাঙরের মতো। এটির মাথা বর্গাকার, নাকের বর্ধিতাংশ সামনের দিকে অভিক্ষিপ্ত এবং মাথার পাশে নকল ফুলকাছিদ্রের মতো দেখতে একটি সাদা দাগ ছিল।”

“এই বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যবহার করে বামন কোগিয়ারা তাদের শিকারী প্রাণী যেমন- ঘাতক তিমি ও বড় হাঙরদের সামনে হাঙর সেজে তাদের বোকা বানায়। নকল ফুলকাছিদ্রের মতো দাগ ছাড়াও বামন কোগিয়া তিমির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এদের পেটের ভেতরে অন্ত্রের সঙ্গে লালচে-বাদামি তরল দিয়ে ভরা একটি ছোট থলি থাকে। শিকারীদের উপস্থিতিতে এরা থলি থেকে তরল পদার্থ পানিতে ছুঁড়ে দিয়ে নিজেদের আড়াল করে। বিষয়টা কিছুটা অক্টোপাসের মতো”- বলেন নাদিম পারভেজ।

নাদিম পারভেজ জানান, বিশ্বে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ৯০টিরও বেশি প্রজাতির সেটেশানদের মধ্যে বামন কোগিয়া তিমি একটি। সেটেশানরা আমাদের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণী। তারা সারাজীবন পানিতে কাটায় এবং বাতাস থেকে শ্বাস নেয়। তবে অন্যান্য সেটেশানদের মতো এরা শিকারকে চিবিয়ে না খেয়ে সম্পূর্ণ গিলে ফেলে।

“আশ্চর্যজনকভাবে সৈকতে পাওয়া গর্ভবতী এই বামন কোগিয়া তিমির পেটে দুটি বাচ্চা ছিল। সেটেশানদের মধ্যে এই ঘটনা অত্যন্ত বিরল, কারণ সেটেশানরা সাধারণত প্রতিবারে একটি বাচ্চা জন্ম দেয়”- বলেন নাদিম পারভেজ।

বাংলাদেশ ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (ডাব্লিউসিএস) সদস্য মো. রাসেল মিয়া বলেন, “বাংলাদেশে শনাক্ত করা এই তিমিটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গভীর সমুদ্রে থাকা এই প্রাণীটি সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি। যদিও, বাংলাদেশের সমুদ্রে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ডব্লিউসিএস পরিচালিত গবেষণার সময় এই প্রজাতিটি কখনও দেখা যায়নি, তবে বামন কোগিয়া তিমি আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি পরিমাণে থাকতে পারে।”