নাঈম একাই নিয়েছেন ৬ উইকেট

শ্রীলঙ্কার ৪০০ হতে বাকি ৩ রান। অন্যদিকে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের প্রথম টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি হতে প্রয়োজন মাত্র ১ রান। কিন্তু কোনোটি হতে দিলেন না বাংলাদেশের অফ স্পিনার নাঈম। ১৫৩তম ওভারের শেষ বলটি করবেন তিনি। কিন্তু অধিনায়ক মুমিনুল যেন আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারছিলেন না। প্রথম থেকে দ্বিতীয় দিন ৫৭৮ মিনিট ক্রিজে লড়াই করছেন অ্যাঞ্জেলো। তাকে থামানো না গেলে রানের বোঝা বাড়তেই থাকবে। তাই আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজালেন। তবে এবার ধৈর্য হারিয়ে লঙ্কান ব্যাটার তেড়েফুঁড়ে এগিয়ে এসে শট খেললেন। কিন্তু ব্যাটে বলে হলো না, ধরা পড়লেন স্কয়ার লেগ সেই সঙ্গে পুড়লেন আক্ষেপে, আর নাঈম মাতলেন উল্লাসে। কথা রাখলেন এই তরুণ অফস্পিনার, ১৫ মাস পর দলে জায়গা পেয়ে বলেছিলেন সুযোগ পেলে শতভাগ উজাড় করে দেবেন। দিয়েছেনও, একাই নিয়েছেন ৬ উইকেট। ৮ টেস্টের ছোট্ট ক্যারিয়ারে এটি তার সেরা বোলিং। ৩০ ওভার বল করে ১০৫ রান খরচ করে তার এই অর্জন। তার কল্যাণেই শ্রীলঙ্কাকে ৩৯৭ রানে রুখে দিয়েছে বাংলাদেশ। তাকে যোগ্য সহায়তা দিয়েছেন সাকিব। দেশসেরা এই ক্রিকেটার ৩৯ ওভারে ৬০ রান খরচ করে নিয়েছেন ৩ উইকেট। আরেক স্পিনার তাইজুল ইসলাম নিয়েছেন একটি। সবমিলিয়ে তিন স্পিনারের শিকার ১০ উইকেট।
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ও নিজের ১২তম সেঞ্চুরি তুলে অপরাজিত ছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। দ্বিতীয়দিনও তিনি ছিলেন সাবলীল। আগের দিন সেঞ্চুরি করা ম্যাথিউস এগিয়ে যান ডাবলের দিকে, চান্দিমাল তুলে নেন ফিফটি। বাংলাদেশের কোনো বোলারই খুব একটা প্রভাব রাখতে পারছিলেন না। কোনো উইকেট না হারিয়ে সেশন পার করার পথে ছিল শ্রীলঙ্কা। মধ্যাহ্ন বিরতির মিনিট পনের আগে হুট করেই আত্মঘাতী হয়ে ওঠেন চান্দিমাল। নাঈমের এলবিডব্লিউ হয়ে যান ৬৬ রানে। প্রথম সেশনে অবশ্য ম্যাথিউসকেও ফেরাতে পারতো বাংলাদেশ। তবে খালেদ আহমেদের বল তার ব্যাটে হালকা ছুঁয়ে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের গ্লাভসে গেলেও বুঝতে পারেননি কেউ। আবেদনও তাই হয়নি। একটু পর টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, ব্যাটে স্পর্শ করেছিল বল। আগের দিন ৬৯ রানে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া ব্যাটসম্যান এবার রক্ষা পান ১২৯ রানে। তবে চান্দিমালের ওই সুইচ হিট ঘুরিয়ে দেয় ইনিংসের মোড়। ওই ওভারেই নাঈমকে কাট করতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন বিপজ্জনক নিরোশান ডিকভেলা। মধ্যাহ্ন বিরতির পর অসাধারণ বোলিং করা সাকিব টানা দুই বলে ফেরান রমেশ মেন্ডিস ও লাসিথ এম্বুলদেনিয়াকে। লঙ্কানদের তখন সাড়ে তিনশ’ নিয়েই টানাটানি। ৯ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে তাদের স্কোর ৮ উইকেটে ৩২৮। ম্যাথিউস এখানেও দলের ভরসা। দশে নামা বিশ্ব ফার্নান্দোকে নিয়ে গড়ে তোলেন জুটি। গোটা সেশনে আর কোনো উইকেট হারাতে দিলেন না তারা। চা বিরতির একটু আগে শরীফুল ইসলামের বলে বিশ্ব আঘাত পান হেলমেটে। বিরতির পর আর ব্যাটিংয়ে নামেননি তিনি। আসিথা ফার্নান্দো কিছুক্ষণ টিকে থাকার পর বোল্ড হন নাঈমের বলে। ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার ইনিংসে ৫ উইকেটের স্বাদ পান এই অফ স্পিনার। পরে বিশ্ব আবার নামেন ম্যাথিউসকে সঙ্গ দিতে। কিন্তু প্রথম ডাবল থেকে মাত্র ১ রান দূরেই থামেন তিনি। ৩৯৭ বলে ১৯ চার ও এক ছয়ে লড়াকু এই ইনিংস সাজান তিনি।
অন্যদিকে নাঈমের উত্থানের শুরু নিজের শহর চট্টগ্রাম থেকে। ২০১৮ সালের ২২শে নভেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টেস্ট অভিষেক। সেই ম্যাচে পেয়ে যান ১৭ বছর বয়সী এই অফ স্পিনার। তার বয়স এখন ২২ বছর টেস্ট ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ৫ উইকেট শিকারের রেকর্ডটি এখনো তার দখলে। তার ক্যারিয়ারে ৫ বার পাঁচ উইকেট শিকার এর দু’টি চট্টগ্রামে নিজের ঘরের মাঠে। আট টেস্টে এখন পর্যন্ত এই স্পিনারের সংগ্রহ ৩১ উইকেট।