বিধিনিষেধের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আবার জাঁকজমকপূর্ণ ঈদ উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন

হামারি করোনায় স্থবির হয়ে পড়েছিল পুরো বিশ্ব। একের পর এক বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছিল মানুষ। করোনার প্রভাবে এখনো নানা সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। স্বাস্থ্যঝুঁকির সঙ্গে আষ্টেপিষ্ঠে ধরেছিল অর্থনৈতিক চরম সংকট। কাজ হারিয়ে দরিদ্রতা বরণ করতে হয়েছে অনেককে। চোখেমুখে ছিল শুধু হতাশা। বন্ধ ছিল সব ধরনের উৎসব-আমেজ। ঈদের মতো বড় উৎসবও নানা বিধিনিষেধের মধ্যদিয়ে পালন করতে হয়েছে। এমনকি মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হজেও ছিল মানা

টা না দুই বছরের এমন কঠিন সব বিধিনিষেধের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এবার জাঁকজমকপূর্ণভাবে ঈদুল ফিতর পালন করতে যাচ্ছে মানুষ। চাঁদ উঠার ওপর নির্ভর করছে ঈদ সোমবার নাকি মঙ্গলবার। তবে ঈদ উদ্‌যাপনের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন। শেষ প্রস্তুতি হিসেবে এখন পুরোদমে চলছে কেনাকাটা। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকায় উঠে গেছে সব বিধিনিষেধ। তাই মার্কেট, শপিংমল কিংবা বাজারে সবখানে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। খুশির আমেজ দেখা যাচ্ছে ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের মধ্যে। সপরিবারে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে ইতিমধ্যেই শহর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমিয়েছে অনেক মানুষ। বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন কিংবা লঞ্চঘাটে বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল নেমেছে। বিগত কয়েকটি ঈদে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল তালা। হোটেল-রেস্তরাঁগুলোতেও ছিল বিধিনিষেধের কড়াকড়ি। তবে এবার সবকিছু প্রস্তুত করা হয়েছে ঈদ উপলক্ষে। সবমিলিয়ে করোনা নামক যুদ্ধকে জয় করে যেন একটি শান্তিময় পৃথিবীরই আভাস দেখছে মানুষ।
ঈদের আমেজ ফিরেছে কেনাকাটায়: করোনার বিধিনিষেধে টানা দুই বছর বন্ধ ছিল মার্কেট ও শপিংমল। এই সময়ে মানুষের আয়ে ভাটা পড়েছিল। ফলে ঈদের কেনাকাটায় মানুষের আগ্রহ যেমন ছিল না, তেমনি ব্যবসায়ীরাও পড়েছিলেন নিদারুণ সংকটে। ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছিল ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের। তবে এবার বাজার, মার্কেট-শপিংমলে কেনাকাটার ধুম পড়েছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সাধ্য অনুযায়ী কেনাকাটা করছেন। গতকাল মিরপুর, এলিফ্যান্ট রোড, নিউ মার্কেট, ফার্মগেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ফুটপাথে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। পুরোদমে চলছে বিকিকিনি। তবে মার্কেটের চেয়ে ফুটপাথে মানুষের ভিড় অনেকগুণ বেশি দেখা যায়। বিক্রেতারা জানান, দীর্ঘদিন পর এবার মানুষের ভিড় বেশি দেখা যাচ্ছে। বিক্রিও হচ্ছে তুলনামূলক অনেক ভালো। যারাই আসছেন কিছু না কিছু নিয়েই যাচ্ছেন। দুই বছর পর ব্যবসা জমে উঠায় খুশি বিক্রেতারা।
করোনার কারণে মফস্বলেও দুই বছর সেভাবে ঈদ উদ্‌যাপন করতে পারেনি মানুষ। খোলা মাঠের পরিবর্তে মসজিদের ভেতর আদায় করতে হয়েছে ঈদের নামাজ। ঈদের কোলাকুলিতেও ছিল মানা। তবে এবার খোলা মাঠে ঈদ জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন। দীর্ঘদিন পর উন্মুক্তভাবে ঈদ উদ্‌যাপনের সুযোগ থাকায় গ্রামের মানুষের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই শহর ছেড়ে গ্রামে স্বজনদের কাছে ফিরেছেন তারা।
রাজনৈতিক নেতাদের জনসংযোগ: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার স্থানীয় সংসদ সদস্যরা ছাড়াও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যেও উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকেই এবার নিজ নিজ এলাকায় ঈদ করবেন বলে জানা গেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে জনসংযোগের পরিকল্পনা তাদের।
প্রস্তুত রাজধানীর বিনোদন পার্কগুলো: ঢাকায় যারা ঈদ কাটান তাদের অনেকেই বিনোদন কেন্দ্রে যান পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুদের নিয়ে। উদ্‌যাপনে বাড়তি মাত্রা দিতে ফাঁকা ঢাকায় ঘুরে বেড়ান অনেকে। ঈদসহ যেকোনো সরকারি ছুটির দিনে অনেকেই যান চিড়িয়াখানা সহ বিভিন্ন বিনোদন পার্কে। মহামারির সংকট কাটিয়ে এ বছর জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঈদের ছুটিতে মানুষের ভিড় হতে পারে বলে আগেই জানিয়েছেন চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ঈদে এবার অনেক দর্শনার্থী হবে। আমাদের রুটিন কিছু প্রস্তুতি আছে। সেগুলোর দিকে যথাযথ নজর দিচ্ছি। যেসব প্রাণী এখানকার বাসিন্দা, দর্শনার্থীদের কারণে তাদের ওপর যাতে চাপ না পড়ে সেজন্য খাদ্য ও সাপ্লিমেন্ট সরবরাহের দিকে আমরা নজর দিচ্ছি। দর্শনার্থীদের যদি উপচে পড়া ভিড়ও হয় তাহলেও যাতে প্রাণীদের ওপর কোনো চাপ না পড়ে সেদিকটায় আমরা বিশেষ নজর দিচ্ছি।
ঈদের ছুটিতে রমনা পার্কও প্রস্তুত। দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা গণপূর্ত সার্কেলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শামসুল ইসলাম বলেন, সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা আর বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা সে হিসেবেই পার্ক খোলা থাকবে। পার্ক নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে। ঈদের সময় একইভাবে থাকবে। যারা আসবেন ওই সময়ে আসবেন। পার্কে মুক্ত বাতাসে সময় কাটাবেন। আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডমের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মনজুর আহমেদ বলেন, আমাদের প্রস্তুতি এবার সর্বোচ্চ। দর্শনার্থীদের সব রকমের সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত। তবে করোনার বিষয়টিও আমাদের মাথায় আছে। সেজন্য যাতে মোটামুটি একটা স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা যায় সেদিকে আমরা নজর রাখার চেষ্টা করবো।