মহানগর ছাত্রদলের কমিটির বিরুদ্ধে দফায় দফায় ঝাড়ু মিছিল

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিট কমিটি ঘোষণার প্রথম দিনেই নানা অনিয়ম আর অসঙ্গতি তুলে ধরে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে চকবাজার, খুলশী থানা ছাত্রদলের  তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। বের করা হয়েছে ঝাড়ু মিছিল।

সোমবার (১১ এপ্রিল)  দুপুরে ইউনিট কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করে ঝাড়ু মিছিল বের করে চকবাজার থানা ছাত্রদল৷ চকবাজার থানা ছাত্রদল নেতা মো:আজিজুল হকের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে  সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়৷

চকবাজার থানা ছাত্রদল নেতা মো:আজিজুল হক বলেন, চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত কমিটিতে ত্যাগী নেতা আব্দুল কাদেরকে অবমূল্যায়ন , নির্যাতিত এবং রাজপথের পরীক্ষিত কর্মীদের অবমূল্যায়ীত করে সুবিধাবাদী, অনুপ্রবেশকারী, অছাত্রদের দিয়ে অর্থের বিনিময়ে পকেট কমিটি করার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ মিছিল। পরীক্ষিতদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে  পার্ক ভিউ হাসপাতালে ওয়ার্ড বয়কে কমিটির নেতা বানানো হয়েছে। ‘

ঝাড়ু মিছিল

নগর বিএনপির আহবায়ক ডাঃ শাহাদাত হোসেনের  নির্বাচনী এলাকার মধ্যেই চকবাজার থানাটি পড়েছে৷

এদিকে, নতুন গঠিত ইউনিট কমিটির বিরুদ্ধে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে খুলশী থানা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সোমবার সন্ধ্যায় ইউনিট কমিটির বিরুদ্ধে  খুলশীতে ঝাড়ু মিছিল বের করে তারা। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের নির্বাচনী এলাকা এটি।

একই ব্যক্তিকে দুটি সংগঠনের পদে না রাখা-কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের এমন নির্দেশনা মানা হয়নি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিট কমিটিতে। অভিযোগ উঠেছে সন্দ্বীপ উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক সোহেল সিদ্দিকী রনিকে সরকারী সিটি কলেজের আহবায়ক করা হয়েছে নতুন কমিটিতে। কোতোয়ালী থানার আহবায়ক ইয়াকুব আলী জুয়েল থানা বিএনপির কমিটির পদে ছিলেন। কক্সবাজার ছাত্রদলের মাতামুহুরী সাংগঠনিক থানা শাখার সহ-সভাপতি কামরুল হাসানকে চকবাজার থানা ছাত্রদলের  যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে।

ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকে ছাত্রদলের ইউনিট কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে -এমন অভিযোগও উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে চান্দগাঁও থানা কমিটির সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন বাপ্পী ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসরারুল হক এসরারের অনুসারী বলে নিশ্চিত করেছে বেশ কয়েকটি সুত্র। স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন, বাপ্পী দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত।

একইভাবে,  পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট  ছাত্রলীগের ক্যাম্পাস কমিটির কেন্টিন বিষয়ক সম্পাদক হাসিবুর রহমান ছোটন পেয়েছেন ইউনিট ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়কের পদ।  ছোটনের ছাত্রলীগ করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নগর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরিফ তুহিন।

এদিকে, ছাত্রলীগের একছত্র আধিপত্য থাকা নগরীর ওমরগণি এমইএস কলেজে পাঁচ সদস্যদের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে নগর ছাত্রদল। অভিযোগ উঠেছে তালিকায় নাম দেয়া নেতাদের কেউই কলেজটির ছাত্র নন। এই কলেজের কমিটির তালিকায় থাকা দ্বিতীয় ব্যক্তি ‘ জুয়েল’ পটুয়াখালীর গলাচিপার ভিন্ন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করে বক্তব্য দিয়েছে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে ব্যঙ্গ করে স্টাটাস দিয়েছেন তিনি। তার দাবি জুয়েল বলে যে ছেলেকে কমিটিতে পদ দেয়া হয়েছে সে প্রকৃতপক্ষে এমইএস কলেজের ছাত্রই নন।

নগর ছাত্রদলের বিভিন্ন সুত্র নিশ্চিত করেছে ইউনিট কমিটিতে স্থান পেতে ব্যয় করতে হয়েছে ৩০ হাজার থেকে লক্ষ টাকা। অভিযোগের তীর মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল, সদস্য সচিব তুহিন, যুগ্ম আহবায়ক আসিফ চৌধুরী লিমনের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সিনিয়র সহ সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক টিমের নেতৃত্বে থাকা রওনকুল হাসান শ্রাবণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন। তিনি বলেন, ‘নগরীর বিভিন্ন আসন থেকে ইতিপূর্বে দলের নমিনেশন পাওয়া বিএনপি নেতাদের সাথে আলোচনা করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয়। ‘

তবে নগর ছাত্রদলের বিভিন্ন গ্রুপ উপগ্রুপের বেশ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, ইউনিট কমিটি গঠনে মুল ভুমিকা পালন করেছেন আইনজীবী ফোরামের নেতা ব্যারিস্টার  মীর হেলাল। সুত্রমতে ইতিপূর্বে উত্তর জেলা বিএনপি,উত্তর জেলা ছাত্রদল,যুবদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়াও নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সুপার ফাইভে স্থান পাওযা দুই শীর্ষ নেতা জানান, চট্টগ্রাম বিভাগে দলের যে কোন কমিটি গঠনের সময় মুখ্য প্রেসার থাকে ব্যারিস্টার হেলালের। তিনি নিজের ইচ্ছা ও পছন্দকেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ হিসেবে উপস্থাপন করেন দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে। যার কারনে ওনার ইচ্ছার প্রতিকূলে গিয়ে ছাত্রদল,যুবদলের কমিটি করার সুযোগ থাকে না। এমন কি বিএনপিতেও নয়।  ফলে দলের বিভিন্ন ইউনিটে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে৷ ‘

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিনের সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করে মুঠোফোনে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, অনুসন্ধানে জানা যায়  সদ্য ঘোষিত চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের  ২৬ টি ইউনিট কমিটিতে বিবাহিতের সংখ্যা ১৮ জন। অছাত্রের সংখ্যা ২৩ জন। চাকুরীজীবি রয়েছেন ১২ জন৷ আটজনের ভিন্ন কমিটিতে পদ রয়েছে।