প্রবাসীকে হত্যার দায় স্বীকার করে আসামির জবানবন্দি

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে প্রবাসী হোসেন এলাহী বাঁচাকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন মো. এনায়েতুল গণি প্রকাশ সুমন নামের এক আসামি। চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মু. জোনাইদ এর আদালতে তিনি এ জবানবন্দি দেন।
ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাটহাজারী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ মো. জাবেদ মিয়া বলেন, হত্যার দায় স্বীকার করে সুমন নামের এক আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একাধারে হত্যা, ধর্ষণ, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের সহ মোট নয়টি মামলা রয়েছে। মির্জাপুর ইউনিয়নের কালা বাদশা পাড়া এলাকার হাজী মো. শফিউল আলম মাস্টারের পুত্র সে। পেশায় একজন পাঠাও চালক। জবানবন্দিতে সুমন বলেন, হত্যাকাণ্ডে অংশ নিতে ঘটনার আগেরদিন গত ২০২১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর সকালে মনছুর ও দুপুরে কাইয়ুম আমাকে ফোন দিয়ে জানায় যে, হোসেন এলাহী বাঁচা ও কালুর বিষয়ে সবাই একত্রে বসবে। আমার পারিবারিক বিষয়ে উল্লেখ করে। আমাকে আসতে বললে আমি রাজি হই।

সে মোতাবেক পরেরদিন আমি চলে আসি। মানিকছড়িতে থেকে আমি চারিয়া চলে আসি। সেখানে কাইয়ুম ও মনছুর আমাকে রিসিভ করে। আমরা ইজতেমা উপলক্ষে বসা একটি অস্থায়ী চায়ের দোকানে যাই। সেখানে রাশেদ, ফজল করিম, ইমন, হাশেম, রাসেল এবং আলাউদ্দিনকে দেখতে পাই। চা খেয়ে আমি, হাশেম, কাইয়ুম, মনছুর, রাসেল, ইমন এবং আলাউদ্দিন সামান্য উত্তর দিকে যাই। তখন হাশেম বলে যে, হোসেন এলাহী বাঁচা ও মোমেন এলাহী কালুকে শিক্ষা দিতে হবে। তাদের হাত অথবা পা একেক ভাইয়ের একেকটা ফেলে দিতে হবে এ বলে পরিকল্পনা করা হয়। কিছুক্ষণ পর হামিদুল হক বাইল্যা সিএনজি নিয়ে এলে কাইয়ুম আমাদেরকে সিএনজিতে উঠতে বলে। আমি, মনছুর, রাসেল ও ইমন সিএনজিতে উঠি। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা মুহুরীহাট ফজল করিম সর্দারের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কাইয়ুম, হাশেম ও আলাউদ্দিন না আসায় আমরা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকি। তখন কাইয়ুম মনছুরকে ফোন দিলে আমরা উত্তর দিকে আলমগীরের দোকানের দিকে অগ্রসর হই। পূর্ব থেকে সিএনজি’র ভেতর কিরিচ ও লাঠি ছিল। আমি, মনছুর ও ইমন হাতে কিরিচ নিই। হামিদুল হক বাইল্যা প্রথমে তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে ঘাড়ের পেছনের দিকে। কালু তখন পড়ে যায়। তারপর মনছুর তাকে তিন-চারটি কোপ দেয়। পরে আমি তাকে হাতে এবং পায়ে দুইটা কোপ দিই। এরপর ইমন কোপায়। বাইল্যা আমার হাত থেকে কিরিচ নিয়ে আরও কয়েকটা কোপ দেয়। বাইল্যার লাঠি দিয়ে আমি কয়েকটা আঘাত করি। মারার পর আমরা উত্তর দিকে যাচ্ছিলাম। পথে দেখি বাঁচাকে মারতেছে। হাশেম, কাইয়ুম ও আলাউদ্দিন সেখানে ছিল। আমি, মনছুর, ইমন ও রাসেল সেখানে যাওয়ার পর মোবাইলের আলোতে বাঁচাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পাই। বাঁচার প্রতি আমার ক্ষোভ ছিল। আমি মূলত থাকতেই খুঁজতেছিলাম। তখন আমি কিরিচ দিয়ে বাঁচার বাম হাতের কব্জিতে কোপ মারি। হাত তখন প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার অবস্থা। পাছায় কয়েকটা লাথিও মারি। আমার পরে মনছুর এবং ইমনও তাকে কোপায়। বাঁচা পরে আমাকে মাফ চাইলে আমি সেখান থেকে চলে যায়। আমরা বাইল্যার সিএনজি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করি। সঙ্গে কাইয়ুম ও রাসেল ছিল।
উল্লেখ্য, গত ১৭ই ডিসেম্বর ২১ই, শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে আটটায় হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড কালা বাদশাহপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হোসেন এলাহী বাঁচা ও মোমেন এলাহী কালুর ওপর উল্লিখিত আসামিরা অতর্কিত হামলা করে। এ ঘটনায় হোসেন এলাহী বাঁচা খুন হয়। ঘটনার পর হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ ও র‌্যাব-৭ যৌথ অভিযানে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।