চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার বাঘার হাওরে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে। কৃষকদের চোখের সামনেই ভেসে যাচ্ছে হাজার একর ফসলি জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতার বাইরে হওয়ায় এই বাঁধটিতে দেওয়া হয়নি কোনো প্রকল্প। শুরু থেকেই বাঘার হাওরে প্রকল্প দেয়ার দাবি জানালেও পাউবো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
সোমবার বিকেল ৩টায় নদীর পানি উপচে গিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করেছে। নিমিষেই তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকদের ফসল। নিজেদের ফসল তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও কাঁচি হাতে নেমেছে ধান কাটতে।
স্থানীয়রা সূত্রে জানা যায়, বাঘার বাঁধ এলাকায় প্রায় ৫শ একর জমি রয়েছে। শুরু থেকেই এই এলাকায় হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবী জানানো হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রকল্প না দিয়ে অপ্রয়োজনীয় জায়গায় প্রকল্প দিয়ে সরকারের টাকা লোপাট করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দাবি করছে সার্ভে টিমের ম্যাজারমেন্ট অনুযায়ী প্রকল্প দেয়া হয়েছে। যার ফলেই এই হাওরের বাঁধটি আওতার বাইরে।
দামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল আওয়াল বলেন, ১০ কেয়ার (বিঘা) জমি করেছি। আর এই হাওরেই সকল জমি। আমার চোখের সামনেই সবকিছু ভেসে যাচ্ছে। এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে কিভাবে চলবো এই চিন্তাই করছি।
কৃষক আবু বক্কর বলেন, ৫০ কেয়ার জমির মাঝে ডুবে যাওয়া হাওরেই আমার ৩০ কেয়ার (বিঘা) জমি। সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। এই এলাকায় হাওর রক্ষা বাঁধের প্রকল্প দেয়ার জন্য একাধিকবার আবেদন করেছি। কোনো কাজ হয়নি। আমাদের এই ফসল ডুবির দায়ভার পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই নিতে হবে বলে তিনি জানান।

পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া ছাত্র জয়ন্ত সরকার বলেন, ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর বাবার কান্না দেখে নিজেই কাঁচি হাতে ধান কাটতে আসছি। কিন্তু ধান এখনো পাকেনি। এরপরও তলিয়ে যাওয়ার চেয়ে কিছু ধান ঘরে নিতে পারলে দুয়েক দিনের খাবার হবে।

শাল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারি প্রকৌশলী (এসও) আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমাদের হাওর রক্ষা বাঁধ এখনো ভাঙেনি। যেদিকে বাঘার হাওরে পানি প্রবেশ করেছে এটা আমাদের তালিকার বাইরে। আর আমাদের আওতায় যে বাঁধগুলো রয়েছে সর্বক্ষণ মনিটরিং করছি। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো বাঁধ শাল্লায় নেই।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় শাল্লার দাড়াইন নদীতে প্রায় ২২ ইঞ্চি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় হাওর পাড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে কখন কি যে হয়।